টাঙ্গাইলের সখীপুরের পিডিবির সাবেক উচ্চমান সহকারী মাহমুদুল হাসান খান ও মিটার পাঠকের দায়িত্বে থাকা লাইনম্যান আসাদুজ্জামানের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বিদ্যুৎপ্রতিমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি। সম্প্রতি তিনি এ অভিযোগ দেন।
এর আগে ওই দুই কর্মচারী সখীপুরে দায়িত্ব পালনকালে তাদের নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্য বিশিষ্টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে টাঙ্গাইল বিউবোর (পরিচালন ও সংরক্ষণ সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উবাইদুল ইসলামকে আহবায়ক করা হয়।
তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- বিউবো ঢাকা দপ্তরের (নির্বাহী প্রকৌশলী-৩ বাণিজ্যিক পরিচালন-এর দপ্তর) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা ও বিউবো ময়মনসিংহ দপ্তরের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। এই কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০২২ সালের ৬ আগস্ট তারিখে স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন জমা দেন উর্ধ্বতনও কর্তৃপক্ষের কাছে। এতে উচ্চমান সহকারী ও লাইনম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া যায় বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকার রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির এমন প্রতিবেদনের সংবাদ পেয়ে উচ্চমহলে তদবীর করে উচ্চমান সহকারী মাহমুদুল হাসান খান ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর টাঙ্গাইল (বিক্রয় ও বিতরন বিভাগ-১) দপ্তরে বদলী হয়ে যান। একইভাবে লাইনম্যান আসাদুজ্জামানও ভূঞাপুরে বদলী হয়ে যান।
এদিকে, অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমাণ হওয়া সত্ত্বেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না হওয়ায় উপরন্ত একই জেলায় বদলীর বিষয়ে ভুক্তভোগীদের পক্ষে পরেশ চন্দ্র সরকার নামের এক ব্যক্তি বিদ্যুৎপ্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উচ্চমান সহকারী মাহমুদুল হাসান খান ও লাইনম্যান আসাদুজ্জামান সখীপুরে দায়িত্ব পালনকালে দুইজন মিলে রিডিংসহ অসংখ্যক মিটার সংরক্ষণ ভান্ডারে জমা দেননি। জমা দিলে হিসাব দিতে হতো, কিন্তু মোটা অংকের অর্থআত্মসাত করার জন্য তা ভেঙে চুরে ফেলে দিয়েছেন। তদন্ত কমিটি উপজেলার বহুরিয়া চতলবাইদ, হতেয়া ও চতলবাইদসহ বেশ কিছু এলাকায় সরেজমিনে গ্রাহকদের কাছে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। এছাড়াও ওই কমিটি পিডিবির কার্যালয়ে মিটার রিডিং বই, মিটার পরিবর্তন রেজিস্টার, নতুন সংযোগের জন্য গ্রাহকের আবেদন রেজিস্টার, বিভাগীয় ভান্ডার, ভান্ডারে রক্ষিত মিটার ও রেজিস্টার ইত্যাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এতে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছেন। তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন সাহাগীর হোসেন।
পিডিবি সূত্রে জানা যায়, ওই দুই ব্যক্তি সংযোগ বিচ্ছিন্নকালে সংশ্লিষ্ট উপসহকারী প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুমোদন ব্যতিরেখে শুধুমাত্র গ্রাহকের আবেদনের প্রেক্ষিতে সব কিছু করেছেন। তদন্ত কমিটি পিডিবির বিধিলংঘন হওয়া, সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতির হওয়ায় তাদের নামে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন। ওই অভিযোগ থেকে জানা যায়, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের দুর্নীতি করা ব্যক্তি মাহমুদুল হাসান খান কাগজে কলমে বদলীকৃত দপ্তরে যোগদান করলেও বেশিরভাগ সময় সখীপুরেই তাকে দেখা যায়। গুঞ্জন রয়েছে তদবির করে তিনি সখীপুরে আসার চেষ্টা করছেন। মাহমুদুলের মত অসাধু কর্মচারী বদলী হয়ে আসলে গ্রাহক হয়রানিসহ নানা অনিয়ম করে পিডিবি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমনটাই ধারণা গ্রাহক ও সেবা প্রত্যাশিদের।
এ বিষয়ে উচ্চমান সহকারী মাহমুদুল ও লাইনম্যান আসাদুজ্জামান তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। পিডিবির একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, মাহমুদুল হাসান খানের বাবা আরফান আলী খান পিডিবির নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করতেন। পোষ্যকোটায় মাহমুদুল উচ্চমান সহকারীর চাকরি পেয়ে দীর্ঘদিন সখীপুরে ছিলেন। বর্তমানে তার টাঙ্গাইলে পোস্টিং হলেও (অফিস সময়ে) বেশিরভাগ সময়ে তাকে সখীপুরে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুবকর তালুকদার বলেন, বিষয়টি তিনি যোগদানের বহু আগের ঘটনা, তাছাড়া তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তবে সখীপুরের পিডিবি নিয়ে স্বার্থান্বেষী একটি মহল নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে জানান তিনি।