শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে না দিয়ে তিলে তিলে মারবেন : রিজভী আহমেদ
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:০৪ | অনলাইন সংস্করণ
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে না দিয়ে তিলে তিলে মারবেন এটাই তার অসৎ শয়তানী পরিকল্পনা। শেখ হাসিনা আপনি নিজেই প্রমান আপনি ছিলেন কারাগারে সেখান থেেেক স্কয়ার হাসপাতালে এসেছিলেন পরে বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় আপনার সাবেক মন্ত্রী মো. নাছিম উনার সাজা হয়েছিল সাজা অবস্থায় তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল এমন অনেক উদাহারণ রয়েছে।
তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার বেলায় কেন আপনার তৈরি করা আইন দেখাচ্ছেন। বর্তমান সরকারের লোট-পাটের কারনে দ্রব্যমূল্যের যে উর্ধ্বগতি তা সাধারন মানুষের নাভিশ্বাস হয়ে দাড়িয়েছে। এ সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক, বিএনপিকে ধ্বংশ করতে পারবে না। ইতিহাসের পাতা থেকে জিয়া ও খালেদা জিয়াকে মুছে দিতে পারবেনা। কাপাসিয়ার কৃতিসন্তান আ স ম হান্নান শাহ্ ছিলেন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা ফকির মজনু শাহ্’র বংশধর। তারই পুত্র শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজের ধমনিতে পূর্ব পুরুষের বীরের রক্ত প্রবাহিত। এ রক্ত মাথানত করতে জানে না। তিনি আজ শনিবার বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার কৃতিসন্তান ও বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আ স ম হান্নান শাহ্’র ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঘাগটিয়া চালা ওয়েলফেয়ার ক্লাব মাঠে আয়োজিত দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও কাপাসিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আজিজুর রহমান পেরার পরিচালনায়, পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন গাজীপর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক হান্নানশাহর ছোট ছেলে শাহ্ রিয়াজুল হান্নান, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যান সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য কাজী ছায়েদুল আলম বাবুল, মজিবুর রহমান, ওমর ফারুক শাফিম, গাজীপুর মহানগর সভাপতি শওকত হোসেন সরকার, সদস্য সচিব মঞ্জুরুল কবির রনি গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইমরান হেেেসন শিশির কাপাসিয়া উপজেলা যুবদলের সভাপতি ফরিদুল আলম ভুলু প্রমুখ।
এছাড়া প্রধান অতিথি নেতা-কর্মীদের নিয়ে হান্নান শাহ্’র কবরে ফাতেহা পাঠ এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। এ উপলক্ষে তাঁর পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে হান্নান শাহ্’র রুহের মাগফিরাত কামনায় তাঁর গ্রামের বাড়ি ঘাগটিয়াতে কোরআনখানি, মিলাদ, দোয়া ও স্মরণ সভা এবং দলীয় নেতা-কর্মীদের পুস্পস্তবক অপর্ণসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালিত হয়। হান্নান শাহ্ ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হার্ট সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) আ স ম হান্নান শাহ্ ১৯৪১ সালের ১১ অক্টোবর গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের আদর্শের রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
তাঁর বাবার নাম ফকির আবদুল মান্নান শাহ্। তাঁর বাবা ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। হান্নান শাহ্’র স্ত্রীর নাম নাহিদ হান্নান। তাদের এক মেয়ে শারমিন হান্নান সুমি এবং দুই ছেলে শাহ্ রেজাউল হান্নান রেজা ও শাহ্ রিয়াজুল হান্নান রিয়াজ। তাঁর ছোটভাই শাহ্ আবু নঈম মোমিনুর রহমান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জেষ্ঠ্য বিচারপতি ছিলেন।
১৯৬২ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পাওয়া হান্নান শাহ্ বিভিন্ন সেনানিবাসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অন্য বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। এইচ এম এরশাদ সরকারের সময় তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। তিনি পার্বত্য চট্রগ্রামের ব্রিগেড কমান্ডার, চট্রগ্রামের মিলিটারি একাডেমির কমান্ডেন্ট, যশোর স্কুল অব ইনফ্রেন্টি এন্ড টেকটিক্স এর চিফ ইন্সট্রাক্টর, পাকিস্তানের কোয়েটার আর্মি কলেজ অব ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইন্সট্রাক্টরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালে ৩০ মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউজে একদল সেনাবাহিনীর হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হবার পর উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রেসিডেন্টের মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হান্নান শাহ্। এইচ এম এরশাদ সরকার হান্নান শাহকে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়। তিনি সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম-সচিব (এপিডি) ছিলেন।
সেনাবাহিনী থেকে অবসরের পর এরশাদ সরকারের সময়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন হান্নান শাহ। ১৯৮৩ সালে ওই পদ ছেড়ে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপিতে যোগদানের শুরুতে তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দলের ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
হান্নান শাহ্ ১৯৯১ সাল ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসন (কাপাসিয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকারের পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে তাকে বিএনপি’র সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়। হান্নান শাহ্কে পরবর্তী বছর অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কাউন্সিলেও তা বহাল থাকে। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তার এই পদ বহাল ছিলো। তিনি কাপাসিয়ার শীতলক্ষ্যা নদীর উপর ‘ফকির মজনু শাহ্ সেতু’র সফল বাস্তবায়নসহ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন।
হান্নান শাহ’র পুরো নাম আবু সাঈদ মতিউল হান্নান শাহ্। তিনি বিএনপিতে যোগদানের পর থেকে আমৃত্যু কাপাসিয়া বিএনপির নিরবিচ্ছিন্ন নেতৃত্ব দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গত ৩ দশক হান্নান শাহ্ নামেই অধিক পরিচিত ছিলেন। একজন সেনা কর্মকর্তা থেকে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতা হিসাবে বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
বিশেষত, মৃত্যুর আগে গত কয়েক বছর এক ধরনের অচলাবস্থায় নিপতিত হওয়া বিএনপিকে চাঙ্গা করতে ও বিএনপি কথিত ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হান্নান শাহ্। এ সময়গুলোতে দলের অন্যতম মুখপত্র হিসাবেও গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বিশেষত বিএনপিপন্থী মহলের অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে নেতা কর্মীরা জানান।
১/১১ এর কঠিন সময়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে হান্নান শাহ্ বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ের সেনাসমর্থীত তত্ত¡বধায়ক সরকার ও দলের সংস্কারপন্থী অংশের ‘কর্মকান্ড ও ষড়যন্ত্র’ এর বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের সামনে এসে সাহসী কন্ঠে কথা বলে দেশ-বিদেশে দলের নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি কাড়েন তিনি। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে হান্নান শাহ্ বেশ কয়েকবার কারাগারে যান। একইভাবে তত্ত¡বধায়ক সরকারের আমলেও তাঁকে কয়েকবার কারাবাস করতে হয়েছে। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে ৩০টির বেশী মামলা ছিলো।