সৌন্দর্য হারাতে বসেছে তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৮:১৭ | অনলাইন সংস্করণ
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
আঠারোশ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদটি স্থানীয়ভাবে মিয়ার মসজিদ হিসেবে পরিচিত। মূল নাম খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদ হলেও বর্তমানে এটি তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ নামেই পরিচিত।
‘মোগল মুমেন্টস অব বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থ দ্বারা প্রকাশিত হয় মৌলভী কাজী সালামতউল্লাহ খান বাহাদুর তেঁতুলিয়ার একজন জমিদার ছিলেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় ব্রিটিশ শাসনামলের ডেপুটি কালেকটর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।
জমিদার কাজী সালামতউল্লাহ আঠারো শতকের দিকে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সাল নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ১৮১৮, ১৮২৫ কিংবা ১৮৫৮-৫৯ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। মসজিদের খুব কাছে ‘সালাম মঞ্জিল’টিও সমসাময়িক কালে কাজী সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন।
মোগল স্থাপত্য রীতি অনুযায়ী নির্মিত মসজিদটি 'মিয়ার মসজিদ' নামে অতি পরিচিত। যথাযথ সংস্কারের অভাবে এর অবকাঠামো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। সরেজমিনে দেখা গেছে, মসজিদটি কবি সেকেন্দার আবু জাফর সড়কের কোল ঘেঁষে তালা উপজেলা সদরের দুই-তিন কিলোমিটার উত্তরে খুলনা অভিমুখে আঞ্চলিক সড়কের পাশে প্রায় ১ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত।
এছাড়া মসজিদের সঙ্গেই প্রায় দুই একর আয়তনের একটি বিশাল পুকুর রয়েছে। মসজিদটিতে রয়েছে সাতটি দরজা। প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড়বিশিষ্ট ১২টি পিলারের ওপর মসজিদের মুল কাঠামো। তারি উপরে নির্মিত হয়েছে ছাদ। চুনসুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে ১৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ছয়টি বড় গম্বুজ এবং ৮ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ১৪টি মিনার রয়েছে। এছাড়া ২৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরশাদ সরকারের সময় মসজিদটির সংস্কার করা হয়। তার পর থেকে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে।
প্রাচীন এই মসজিদটি সুপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হলেও যথাযথ তদারকির অভাবে সৌন্দর্য হারিয়েছে বর্তমানে ভবনটির রং চটে গেলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। বিভিন্ন মিনারের কোণ থেকে বালু ঝরে। পড়ছে। ভবনটির মূল অবকাঠামোতেও বড় বড় ফাটল ।
সূত্র মতে, মসজিদটিতে একজন খতিব, একজন ইমান, একজন মুয়াজ্জিন একজন খাদেম রয়েছেন। সীমিত সম্মানি দেওয়া হয় তাদের মুসল্লিরা জানান, মসজিদের পরিচালনা কমিটি থাকলেও মসজিদের সংস্কার ও অন্য কাজ করার এখতিয়ার নেই কমিটির । জুমার দিনে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা মসজিদে জায়গা না পেয়ে সড়কে বসেই নামাজ আদায় করেন। একটু বৃষ্টি এলেই মসজিদের ভেতরে পানি পড়ে। নেই টয়লেট। ভেঙে পড়ছে মসজিদটির ছাদ ও দেয়াল।
স্থানীয় মুসল্লি মোঃ নুর ইসলাম বলেন, মসজিদটি কত সালে নির্মিত হয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। তবে বর্তমানে অযত্ন আর অবহেলায় ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হতে বসেছে। সাতটি মিনার ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। মসজিদের বাউন্ডারি এলাকায় বহু অজানা লোকের কবরের চিহ্ন থাকলেও সেগুলো অরক্ষিত। তিনি আরো জানান, মসজিদটির সামনে একটি দীঘি রয়েছে। এই দীঘির পানি কখনো শুকাতো না। কিন্তু এখন পানি শুকিয়ে যায়।
৩০ বছরের অধিক সময় ধরে দায়িত্বে থাকা মসজিদটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি মারুফ হোসেন তুরান জানান, ১৯৮৭ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মসজিদ কমিটি কোনো সংস্কারকাজ করতে পারে না।
খুলনা বিভাগীয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা জানান, আমরা সম্প্রতি মসজিদটি পরিদর্শন করেছি। ইতিপূর্বে মসজিদের সংস্কার- সংরক্ষণ কাজ করা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এর প্রয়োজনীয় সংস্কার সংরক্ষণ কাজের পরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে ধরেছে।