ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সহকারী শিক্ষকদের হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল

প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সহকারী শিক্ষকদের হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল

পটুয়াখালীর বাউফল সদর ইউনিয়নের বিলবিলাস-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অশোভন আচরণ, অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন সহকারী শিক্ষকরা। ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিক বার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাননি। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তিনি।

বিদ্যালয় চলাকালে এক সহাকরী শিক্ষককে গালিগালাজ ও মারধর করার চেষ্টার একটি ভিডিও বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

২মিনিট ৩সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষক রেহেনা বেগম বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে বসে এক সহকারী শিক্ষককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছেন। এক পর্যায় ওই প্রধান শিক্ষক চেয়ার নিয়ে সহকারী শিক্ষককে মারধর করতে তেড়ে আসেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার পরেও স্বপদে বহাল থাকা ও বেতন ভাতা ভোগ করার অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার একই বিদ্যালয়ে লাইব্রেরির চেয়ারে ও নবজাতক কেয়ার সেন্টারে দুই শিক্ষকের ঘুমানোর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষক দাবি করেন ওই দুই শিক্ষক পাঠদান রেখে প্রায় ঘুমিয়ে কাটান। যদিও শিক্ষকরা বলছেন, অসুস্থতা জনিত কারনে কিছু সময় শুয়ে ছিলেন তারা।

বিদ্যালয় ও ম্যানেজিং কমিটি সূত্র জানায়, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে সহকারী শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে খারাপ আচরণ করে আসছেন। বিদ্যালয়ে নিজের রাজত্ব কায়েম করেছেন। তার কথা বাহিরে গেলেই সহকারী শিক্ষকদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন শুরু করেন তিনি। একাধিক শিক্ষার্থীকে অকারণে বেধম মারধরও করেছেন। এছাড়াও বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যান। তার আবেদন অনুযায়ী গত ২৫ জুলাই ছিল তার শেষ কর্মদিবস। তবে অদৃশ্য কারণে তিনি স্বপদে বহাল রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের এসব অনিয়ম স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্তকতা ও ইউএনও’র কাছে একাধিক বার লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুফল পাননি ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারী শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার প্রভাব ঘাটিয়ে সহকারী শিক্ষকদের সাথে একের পর এক অশোভন অসদাচরণ করে আসছেন। তার এমন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কিছু বললেই তিনি (প্রধান শিক্ষক) বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করার চেষ্টা করেন। এতে বিদ্যালয়ে সুনাম ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

ওই বিদ্যালয়ের নুরজাহান বেগম নামের এক সহকারী শিক্ষক বলেন,‘ গত ২৪ আগস্ট দ্বিতীয় প্রান্তিক মূল্যায়ন পরীক্ষা ছিল। ২৩ আগস্ট পরীক্ষার আসন বিন্যাস করার সময় আমি অসুস্থ্য বোধ করলেও চেয়ারের ওপর পরে যায়। ওই চেয়ারের ওপর কিছু সময় চুপ করে ছিলাম। সেই মুহূর্তে আমার একটি ছবি তুলেন প্রধান শিক্ষক । সেই ছবি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে পাঠদান বন্ধ রেখে ঘুমানোর মিথ্যা অভিযোগ তুলে হয়রানি করছেন। শুধু আমি নয়, সকল সহকারী শিক্ষকরা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রেহেনা বেগম বলেন,‘কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে পাঠদান রেখে ঘুমাতে যান। যার প্রতিবাদ করায় তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।’

স্বইচ্ছায় অবসরে যাওয়ার বিষয়ে বলেন,‘ওই সব শিক্ষকদের জ্বালায় আমি অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে আত্মীয় স্বজনদের পরামর্শে অবসর থেকে পুনরায় স্বপদে বহাল থাকার জন্য আবেদন করি।

শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ডে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে দাবি করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আনিচুর রহমান বলেন,‘ প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের মিল নেই। প্রায় তাদের মধ্যে জগড়া হয়ে থাকে। অপরদিকে প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পরেও বহাল তাবিয়তে রয়েছেন। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে একাধিক বার শিক্ষা অফিসকে জানিয়েছি। তবে কোনো কাজ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়ালীউল ইসলাম বলেন,‘ বিদ্যালয়ে সরেজমিন তদন্ত করে জেলা ও উপজেলা কর্তকর্তার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এবিষয়ে তারা ব্যবস্থা নিবেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্তকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন,‘ স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিবেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পটুয়াখালী,বাউফল
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত