শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হল। আজকে স্বাক্ষ্য-প্রমাণসহ সবকিছু বলছে জিয়াউর রহমান সাহেব এই হত্যার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। আবার এটাও বলা যায়, তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে সবকিছু জেনেও কাউকে জানাননি। এই হল তার অবস্থান। কারণ, হত্যার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ দেখলে বুঝা যায় তিনি এর সাথে সরাসরি জড়িত এবং পরবর্তীতে তিনিই সবচাইতে সুবিধাভোগী ছিলেন।’
শনিবার (৭ অক্টোবর) রাতে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে ‘সেন্টার ফর হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচারাল রিসার্চ’ নামে সংগঠনের আয়োজনে ‘দেড়শ বছরের সাংবাদিকতা ও চাঁদপুর’ নামে গবেষণামূলক বই এর ওপর আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ৪২ বছর পূর্বে তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন। এই ৪২ বছরে কমপক্ষে ২১ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি দুই বছর পর পর তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এই প্রচেষ্টা আমরা বার বার অনেককে হারিয়েছি। বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকীর দিনে বেগম জিয়া তার জন্মউৎসব পালন করেন। তার এই আচরণ হলো নির্মমতা।
দীপু মনি বলেন, কোকো মারা গেলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মা হিসেবে দেখতে গেলেন। সেদিন আমিও তার সঙ্গী ছিলাম। একে একে সেদিন সবগুলো গেট বন্ধ করা দেয়া হল। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ডুকতে দেয়া হলো না। অপমানিত করা হলো। তিনি গিয়েছিলেন একজন মা হিসেবে আরেকজন মাকে সমবেদনা জানানোর জন্য। মানবিকতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন সেদিন হতে পারতো। কিন্তু সেদিন অমানবিকতার একটি নিকৃষ্টতম নিদর্শন বেগম জিয়া সেদিন তৈরী করেছিলেন। আমাদের ভেবে দেখা দরকার কোনটা মানবিকতা আর কোনটা অমানবিকতা।
তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল সংখ্যালুঘু সম্প্রদায়ের ওপর কি পরিমান নিপীড়ন ও নির্যাতন হয়েছিল নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার কারণে। বিপরীতে আজকে বিএনপির নেতারা বাড়ীতে থাকেন। রাজনীতি করেন। তারা বলেন তাদের রাজনীতি করার সুযোগ নাই। টেলিভিশনে আমাদের চাইতে তারা সময় বেশী পান। টকশো আর যেই শো বলেন তারা কথা বলছেন বেশী। এত কথার সুযোগ পৃথিবীর আর কোথায় আছে। তারপরেও বলে তাদেরকে নাকি কথা বলতে দেয়া হয় না। তাদের সময়ে আমরা কথা বলতে গেলে বোমা মরা হত। আমাদের অফিসের মধ্যে আটকে রাখা হত। হত্যা করা হয়েছে আমাদের নেতাদেরকে। নিবার্চন পরবর্তী সময়ে নারীদেরকে গণষর্ধণ করা হয়েছে।
দীপু মনি ‘দেড়শ বছরের সাংবাদিকতা ও চাঁদপুর’ গবেষণামূলক বইটির প্রকাশক ও সম্পাদককে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, তারা সাহসী উদ্যোগ নিয়ে এই বইয়ে বের করায় অনেক অজানা বিষয় জানার সুযোগ হয়েছে। বইটি আমাদের জন্য একটি গর্বের জায়গা তৈরী করেছে। চাঁদপুর হচ্ছে সাহিত্য, সাংস্কৃতি, সাংবাদিক ও রাজনীতী চর্চার অন্যতম জনপদ। আমিত এই বইয়ের নাম শুনেই পটে গেলাম। যে সংগঠনটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, এই ধরণের সংগঠন প্রয়োজন। কারণ যারা গবেষণা করেন তাদের জন্য সুযোগ তৈরী হবে। গবেষণার কাজ অনেক কষ্ট। বইটি স্বল্প সময়ে দেখে আমার কাছে খুবই ভাল মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা সাংবাদিক। আপনারা সত্যটা তুলে ধরেন। আপনারা মানুষের কাছে আমাদের কথা গুলো তুলে ধরেন। গণমানুষের সাথে আমাদের যে সংযোগ সেখানে আপনাদের একটি বড় ভূমিকা আছে। দেশটাকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা আছে। আপনারা সত্যকে সত্য এবং মিথ্যাতে মিথ্যা বলবেন। নির্যাতনকারী আর নির্যাতিত, হত্যাকারী এবং ত্যার শিকার সবাইকে এক পাল্লায় মাপবেন না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমরা বিশ্বাস করি আগামী নির্বাচনে আবার জনগণ আস্থা রাখবে শেখ হাসিনার প্রতি।
চাঁদপর প্রেসক্লাবের সভাপতি এ এইচ এম আহসান উল্লাহর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
কবি ও সাহিত্যিক ফরিদ হাসান এর সঞ্চালনায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্য দেন-পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান। আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন, সাংবাদিক কাজী শাহাদাত ও রহিম বাদশা। বইটির ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক শপথ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক লেখক কাদের পলাশ।
অনুষ্ঠানে চাঁদপুরের জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক ও বিভিন্ন পেশার আমন্ত্রিত সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।