নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জের আলোচিত মা ও অন্ত:স্বত্বা মেয়ে হত্যা মামলার বাদির সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বাদি রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর বাকী সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে বাদিকে জেরা করেছেন আসামী পক্ষের আইনজীবী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে নিতাইগঞ্জের মা ও অন্ত:স্বত্বা মেয়ে হত্যা মামলায় বাদির সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী তারিখে অপর সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১ মার্চ বিকেলে শহরের পাইকারী ব্যবসাকেন্দ্র নিতাইগঞ্জ ডালপট্টি এলাকায় স্বপন দাসের মালিকানাধীন মাতৃসদন নামে একটি ৬ তলা ভবনের ৬ষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটবাসায় মা ও অন্ত:স্বত্বা মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ সময় রক্তমাখা ধারালো ছুরিসহ হাতে গ্ল্যাভস পরিহিত ঘাতক আল জুবায়েরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘাতক আল জুবায়ের স্বপ্নীল শহরের পাইকপাড়া এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিনের ছেলে।
তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেছেন, ‘জুবায়েরকে আমরা ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। সে স্বীকার করেছে তাঁর নিজের চলার জন্য টাকার দরকার। এ কারণে বড় বাড়িটি তিনি টার্গেট করেন। ছয়তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই ফ্ল্যাটের কেউ দরজা খোলেননি। তখন পাশের রামপ্রসাদ চক্রবর্তীর ফ্ল্যাটে কলিং বেল চাপেন তিনি। ওই ফ্ল্যাটের দরজা খুললে ভেতরে ঢুকে রুমা চক্রবর্তীর গলা চেপে ধরে জুবায়ের। এ সময় রুমার গলার মালা তিনি ছিনিয়ে নেন। এরপর ছুরি মেরে রুমাকে হত্যা করেন। রুমার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী এগিয়ে এলে তাঁকেও ছুরি মেরে হত্যা করেন।
চলতি বছরের জানুয়ারীতে আলোচিত সেই মা ও অন্ত:স্বত্ত্বা মেয়ে হত্যার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ পরিদর্শক (এসআই) এএইচএম কামরুজ্জামান ফারুক। অভিযোগপত্রে একমাত্র আসামী হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছেন ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতারকৃত আল জুবায়েদ স্বপ্নীলকে। অভিযোগপত্রে সাক্ষী দেখানো হয়েছে ৩০ জনকে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি মামলাটি চীফ জুডিসিয়াল আদালত থেকে জেলা ও দায়রা আদালতে বদলি করা হয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ১৬ এপ্রিল চার্জ গঠনের নির্ধারিত তারিখ হলেও আসামীপক্ষের আইনজীবী আসামী আল জুবায়ের স্বপ্লীলকে মানসিক ভারসাম্যহীন (পাগল) দাবি করে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট দাখিল করেন।
পরে আদালত আসামী আল জুবায়ের স্বপ্লীলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলা সিভিল সার্জনকে নির্দেশনা দেন। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিসে ৩ সদস্যের একটি মেডিক্যাল টীম সপ্নীলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেন স্বপ্নীল পুরোপুরি সুস্থ সে মানসিক ভারসাম্যহীন নয়। সিভিল সার্জন অফিসের মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়ার পরে আদালতের নির্দেশে না হওয়ায় চার্জ গঠনের শুনানী হয়।