চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে বিলকিস বেগম নামে নারীর অনৈতিক কাজে বাধা দেয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোবারক হোসেন (৬০) নামে ব্যাক্তিকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর ও রক্তাক্ত জখম করে হত্যার ঘটনায় ৫ আসামীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে আদালত তাদেরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৩ মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে।
সোমবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে চাঁদপুর সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. মহসিনুল হক এই রায় দেন।
যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামীরা হলেন-ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুুর গ্রামের মন্তি খার ছেলে মোস্তফা (২৫) ও মিলন হোসেন (২৩), আব্দুর রহিমের স্ত্রী বিলকিস বেগম (৪০), তার ছেলে রিপন হোসেন (২৪) ও সাদ্দাম হোসেন (২৭)।
ঘটনার বিবরণে জানাগেছে, আসামী বিলকিস বেগম তার বসত ঘরে বাহিরের লোকজন এনে অনৈতিক কাজে লীপ্ত হতেন। এসব বিষয়ে বাড়ীর লোকজন ও স্বজনরা তাকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করতেন। কিন্তু তিনি কারো নিষেধ মানতেন না। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে আব্দুর রহিমের স্ত্রী বিলকিস বেগমকে অনৈতিক কাজের জন্য নিষেধ করেন হত্যার শিকার একই বাড়ীর মোবারক হোসেন। কেন তাকে নিষেধ করা হলো এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘবদ্ধ অভিযুক্ত আসামীরা মোবারকে হোসেন ও তার স্ত্রী নিলুফা বেগমকে বেধম মারধর ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে বাড়ীর লোকজন ও আত্মীয় স্বজন তাদেরকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। এর মধ্যে মোবারক হোসেনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রথমে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় একমাস পরে ৩ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর পরদিনে ৪ এপ্রিল মোবারক হোসেনের ছেলে মো. জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে উল্লেখিত আসামীদের বিবাদী করে ফরিদগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় তাৎকালীন সময় ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. আখতার হোসেনকে। তিনি মামলার দায়িত্ব পেয়ে ৫ এপ্রিল আসামী বিলকিস বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ওই বছর ৩০ নভেম্বর আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটির (পিপি) রনজিত রায় চৌধুরী বলেন, মামলাটি ১০ বছরের অধিক সময় চলাকালীন আদালত ১৩ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন। স্বাক্ষ্য গ্রহন ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা এবং আসামীরা তাদের অপরাধ শিকার করায় বিচারক এই রায় দেন। রায়ের সময় আসামী বিলকিস, সাদ্দাম ও মোস্তফা উপিস্থত ছিলেন এবং আসামী মিলন ও রিপন হোসেন পলাতক।
আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. সানাউল্লাহ।