ইনার হুইল ক্লাবের আয়োজনে চাঁদপুরে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয় এবং এ দিবসে ৩জন গুনি শিক্ষককে সন্মাননা প্রদান করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন,স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত নারী বীর মুক্তিযোদ্বা সৈয়দা বদরুন্নাহার চৌধুরী।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই এ স্বাধীনতার স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মারন করছি আজ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না’হলে এদেশ স্বাধীন হতো না। আজকে আমি সৈয়দা বদরুন্নাহার ডাক্তার হতাম না।
এদেশের শিক্ষকদের কারনে আমি আজ ডাক্তার হতে পেরেছি। এ ইনার হুইল ক্লাব ৩জন গুনি শিক্ষককে তাদের কাজের স্বীকৃতি দিয়ে সন্মাননা দেওয় একটি মহতি উদ্যোগ। আমাদের এ সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীও অর্ধেক অবদান রয়েছে। তিনি বলেন,আমি মনে করি কাজী শাহাদাতের অবদানে আজ এই ইনার হুইল ক্লাব। কাজী শাহাদাত তিনি নিজের আলোতেই নিজে আলোকিত। তার পদচারনা চাঁদপুরে সব জায়গায় রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি একদিন শিক্ষক ছিলাম, শিক্ষকতা করেছি। তিনি শিক্ষক মাহমুদা খানম সর্ম্পকে বলেন,সে সবার মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। সে তার নিজের গুনে গুনান্নিত। তার নেতৃত্বে এ ইনার হুইল ক্লাব এগিয়ে গেছে,এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন,এ ক্লাব একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এরা কার কাছ থেকে চাঁদা না’নিয়ে নিজেদের অর্থে এ কার্যক্রম করেন বলে তিনি সকলের উদের্শে বলেন।
তিনি বলেন,আপনারা শিক্ষকরা হলেন এ সমাজের সমাজ গড়ার ও মানুষ গড়ার কারিগর। আপনারা জন সেবার প্রতীক। শিক্ষার চেয়ে বড় আর্শিবাদ আর নেই। এ ক্লাবের কার্যক্রম এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস,এ ক্লাবের ভবিষ্যত উজ্জল কামনা করে এগিয়ে যাওয়ার আহবান জানান। তিনি এ ক্লাবের সবাইকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিবেন বলে অনুষ্ঠানে ঘোষনা দেন। এ ছাড়া এদের আত্বীয়-স্বজনকে ও চিকিৎসা সেবা দিবেন বলে বলেন।
গতকাল রোববার (১৫ অক্টোবর) রাতে চাঁদপুর শহরের জেএন সেন গুপ্ত রোডস্থ জোর পুকুর পাড়ে সাহিত্য একাডেমি মিলনায়তে এ শিক্ষক দিবসটি পালিত হয়। ক্লাব সেক্রেটারী মোসা: আফরোজা পারভিনের প্রানবন্ত সঞ্চালনায় ও ক্লাব সভাপতি মিতু আক্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দৈনিক চাঁদপুর কন্ঠের প্রধান সম্পাদক ও সাহিত্য একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক রোটা: কাজী শাহাদাত। সন্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন,চাঁদপুর প্রেস কøাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ,রোটা: ডাক্তার পিযুস কান্তি বড়–য়া,চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সেক্রেটারী রোটা: উজ্জল হোসাইন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,রোটা:কাজী শাহাদাত। তিনি বলেন, এ ইনার হুইল ক্লাব নিজেদের ক্লাবের শিক্ষক ছাড়াও অন্য একজন শিক্ষককে বিশ্ব নারী দিবসে সন্মাননা দিয়ে বিরল দৃস্টান্ত স্থাপন করলেন। সন্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষক কল্পনা নারী সরকার অনেক ভাল একজন শিক্ষক। এ ধরনের একজন গুনী শিক্ষককে সম্বার্ধনা দিয়ে এ ক্লাব গর্বিত হয়েছে। তারা নিজেদের বাহিরেও অন্য একজনকে সন্মাননা দিয়ে ভিন্নধর্মীয় কাজ করেছেন।
তিনি সন্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষক মাহমুদা খানম সম্পর্কে বলেন,সত্যিকার অর্থে মাহমুদা খানম আসলে একজন গুনী শিক্ষিক বলতেই হয়। তিনি শিক্ষকতা পেশাকে অনেক ভাল বাসেন। তাই তিনি অসুস্থ হওয়ার পর কস্ট শিকার করে বিদ্যালয়ে গিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তিনি বলেন,শিক্ষক কল্পনা সরকার চাঁদপুরে বসবাস করলেও তিনি পশ্চিম বঙ্গের মানুষ। সেখানে তিনি জন্ম গ্রহন করেন। তিনি সব সময় শুদ্ব ভাষায় কথা বলেন।
তিনি তাছলিমা সুলতানা মুন্নী সম্পর্কে বলেন, তিনি একজন বেস্ট শিক্ষক। সে জন্য তিনি শিক্ষকদের নেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইনার হুইল ক্লাব বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করলেও শিক্ষক সংগঠন এ দিবস পালন করেনা। আমার মা’ছিলেন আমার শিক্ষক। মায়ের কারনে তার সহায়তায় আজ আমি ভাল ছাত্র হতে পেরেছি।
তাই আজ আমার মায়ের কারনে আমি আজ এ অবস্থানে। শিক্ষকতার মত একটি মহৎ পেশা আর হতে পারেনা। তিনি বলেন,একজন শিক্ষক তার ৪ ছাত্রকে নিয়ে শংখ নদী পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে গেলে নিজে নদীর পানিতে তলীয়ে যাওয়ার, পূর্বক্ষন পর্যন্ত ৪জন ছাত্র রক্ষায় নীজের পিঠে করে তাদের রক্ষায় চেস্টা চালিয়ে যাওয়ায় মাঝি মাল্লারা ছাত্রদের উদ্বার করলেও শিক্ষক নদীতে তলীয়ে গিয়ে মারা যান। শিক্ষক মরে গিয়েও অভিভাবকদের দেওয়া প্রতিশ্রæতি দেওয়ার কথা রেখেছেন। ইনার হুইল ক্লাবের এটি একটি ভাল আয়োজন। এ দিবস পালনে ক্ষুদ্র উদ্যোগে বড় ধরনের কাজ দেখিয়েছেন।
চাঁদপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ বলেন, শিক্ষকরা সমাজের একজন পিতৃতুল্য। শিক্ষকরা সত্যিকার অর্থে সমাজের অন্যন্ন। শিক্ষকরা সব সময় সন্মান পাওয়ার যোগ্য। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কবিতা পাঠ করেন,মারিয়া শারমিন মিথিলা। ইনার হুইল ক্লাব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে ৪জন শিক্ষককে সন্মাননা দিয়েছেন তারা হলেন, তাছলিমা সুলতানা মুন্নী সহকারী অধ্যাপক- ধানুয়া ছালেহিয়া ফাজিল মাদাসা, ফরিদগঞ্জ, কল্পনা রানী সরকার সহকারী শিক্ষক(অব:) পুরানবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মাহমুদা খানম অধ্যক্ষ রেলওয়ে কিন্ডার গার্ডেন, চাঁদপুর।
অনুষ্ঠানে ২ জন আমন্ত্রিত অতিথিকে ফুল দিয়ে বরন ও ক্লাবের বেইচ পরিয়ে দেওয়া হয়। এরা হলেন,দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের মালিক ও প্রকাশক মোসামৎ নিলুফা আক্তার , চরসেনচান এর সাবেক চেয়ারম্যান জিতু বেপারীর স্ত্রী মিসেস জিতু। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মোসামৎ নিলুফা আক্তার এর পুত্র বধূ মোসামৎ রুবি আক্তারকে ফুলের মালা পড়িয়ে বরন করে নেওয়া হয়। অপরদিকে ৩জন গুনী শিক্ষকের জীবনি পাঠ করেন, তাছলিমা ত্বনী, তাহমিদা খানম ও মারিয়া শারমিন মিথিলা। পরে ৩জন সন্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষককে ফুলের মালা পরিয়ে দেওয়া হয় এবং উপহার ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
বিশ্ব নারী দিবসে সন্মাননা প্রাপ্ত শিক্ষক কল্পনা রানী সরকার বলেন,আমরা নারী আমরা পারি। এই ক্লাব নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করে। আমি দেখেছি তাদের কার্যক্রম বিভিন্ন সময় পত্রিকায় প্রকাশ পায়। এ ক্লাব শীতবস্ত্র ,খাদ্য সামগ্রী ,বস্ত্র বিতরনসহ বিভিন্ন সময় গরীব ও অসহাদের সাহায্য করে থাকে,তা’দেখে আমি অনুপ্রানিত হই। তিনি বলেন,এ পৃথিবীর অর্ধেক নারীর ও অর্ধেক নরের। এ ক্লাবের সবাই যেন ভাল কাজ করতে পারে এ জন্য সৃস্টিকর্তার কাছে আর্শিবাদ করবো।
শিক্ষক মাহমুদা খাণম মনু বলেন, এ ক্লাবের কারনে অনেক সাহায্য করে যাচ্ছি। এ ক্লাব করে বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বর্তমানে দেখা যায় কোন মানুষ উপরে উঠতে থাকলে পা’ধরে নামাতে চায়। এক জন মানুষের ভাল কাজ করলে অনেক শক্রু তার পিছনে লেগে থাকে। তিনি বলেন,কার স্বামী কত ভাল তা’শুধু তার স্ত্রীরাই বলতে পারবে। আজকে শিক্ষক হিসেবে সন্মাননা পেয়ে অনেক অনেক ভাল লেগেছে। তবে কখন যে মরে যাই জানিনা। এই সন্মাননা দেওয়ায় নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এটিকে স্মৃতিতে বেধে রাখবো।
শিক্ষক তাছলিমা সুলতানা মুন্নী বলেন, বিশ্ব শিক্ষক দিবস পৃথিবীর প্রায় ১০০টি দেশে পালন করে থাকে। এ ক্লাব আমি মনে করি রোটারী থেকে শক্তিশালী। আমাদের প্রচার অনেক বেশী। তবে আমরা রোটারী ক্লাবের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের সব সময় সহায়তা করে। এ ক্লাব এগিয়ে যাবে। শিক্ষকরা গুনী হলে সে সন্মান পাবেই। তিনি বলেন, এ ক্লাব আমাকে সন্মান করায় আমি এ ক্লাবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি বলেন ছোটকালে পল্লিতে ছিলাম। তাই তখন মায়ের কাছে শিক্ষা অর্জন করি। আমি আমার মায়ের কারনে শিক্ষা অর্জন করে আজকে এই জায়গায় এসেছি। পরিশেষে সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।