পটুয়াখালীতে মুক্তি ক্লিনিকে গর্ভবর্তী নারীর মৃত্যু
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৩, ২০:১৬ | অনলাইন সংস্করণ
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
পটুয়াখালীতে চিকিৎসকের ভুলে আয়শা আক্তার রিমি(২০) নামের এক গর্ভবতী নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার(১৬অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে শহরের মুক্তি ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি মৃতের স্বজনদের। রিমি পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের রাজা খালি গ্রামের সুমন সিকদারের স্ত্রী।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিশু জন্মের আগেই মা ও সন্তানের মৃত্যুর খবরে আহাজারি করছে মৃতের পরিবারের সদস্যরা। স্বজনদের কান্নাকাটি আর বুক ফাটা চিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছে ক্লিনিক প্রাঙ্গন ।
মৃত রিমির ননদ নাজমা আক্তার বলেন, "সিজার করার জন্য রিমিকে ওটিতে ঢুকানোর পাঁচ মিনিট পরেই আমি ক্লিনিকে আসছি। শুনছি রোগী সুস্থ আছে। স্যালাইন চলতেছে। কিছুক্ষণ পর থেকে দেখি নার্স আয়া সবাই দৌড়াদৌড়ি করতেছে। সবার মুখ কালো। তারা আমাকে বলে রোগীর এ্যাজমা আছে সেটার জন্য একটু সমস্যা। একটা ইনজেকশন দিলেই ঠিক হয়ে যাবে। তারা ইনজেকশন এনে পুস করেছে। তারপর তারা অনেকে ওটি থেকে বের হয় আবার ওটির মধ্যে ঢোকে। আমরা সবার কাছে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। তারা আমাদের কাছে কিছুই বলে না। অনেকক্ষন পরে এসে এক নার্স বলে বাচ্চা বের হয়েছে কিন্তু বাচ্চা ও মা দুজনেই অসুস্থ। দুজনকেই অক্সিজেন দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওরা তখনও বাচ্চা বের করে নাই। সেই সময়ে পেটের ভিতরেই বাচ্চা । আর ওই সময় ওরা মারা গেছে। কিন্তু আমাদের কাছে কিছু বলে নাই। এর প্রায় এক ঘন্টা পর আমাদের এসে মনির ডাক্তার বলে যে, রিমিকে ইনজেকশন দেয়ার পর সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। এখন আর জ্ঞান ফিরতেছে না। এই অবস্থায় অপারেশন করা যাবে না। এই কথা বলারও আধা ঘন্টা পর আমাদের জানায় রোগী মারা গেছে। মেরুদণ্ডে ইনজেকশন দেয়ার পর ওর জ্ঞান ফিরতেছে না সেটা তারা আমাদের আগে বলে নাই। তারা প্রায় দেড় দুই ঘন্টা পর আমাদের জানিয়েছে। তারা অপারেশন করতে পারবে না আমাদের সময় মতো জানলে আমরা অন্য কোথাও নিয়ে চেষ্টা করতাম।"
রিমির খালা মোসা মালেকা বলেন, "আমি আর রিমির মা ওটির মধ্যে, তখন রিমির স্যালাইন চলে। তখন ক্লিনিকের একজন লোক এসে বলে এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার আসছে আপনারা বের হন। আমরা বের হয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেকক্ষন পরে হঠাৎ ক্লিনিকের লোকজনের দৌড়াদৌড়ি দেখে আমরা জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। আমাদের কেউ কোন উত্তর দেয় না। এর প্রায় ঘন্টাখানেক পরে এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার এসে আমাদের বলে ইনজেকশন দেয়ার পর রোগী অজ্ঞান হয়ে গেছে। আবার অনেকক্ষন পরে মনির ডাক্তার এসে বলে রোগী মারা গেছে। ওনারা আগেই মেরে ফেলেছে কিন্তু আমাদের বলে নাই।"
এ বিষয়ে জানতে মুক্তি ক্লিনিকের মালিক ও সিজারিয়ানের দায়িত্বে থাকা ডাঃ মনির হোসেন ও এ্যানেসথেসিয়ার দায়িত্বরত চিকিৎসক পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তন সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ হোসাইন আহমেদের সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি সম্ভব হয়নি।
পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ জসিম জানান, "বিষয়টি নিয়ে থানায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এমন কোন ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না।
পটুয়াখালী সিভিল সার্জন জানান, তিনি বিষয়টি অবগত নন। তবে ব্যাপারটি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন।