নুড়ি পাথর তুলে জীবিকা চলে ৩০ হাজার পরিবারের

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪১ | অনলাইন সংস্করণ

  সিদ্দিক হোসেন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। হিমালয়ের কোলঘেঁষা এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত প্রায় সবকটি নদী এসেছে ভারত থেকে। এসব নদীর উৎসমুখ উজানের পাহাড়-পর্বত থেকে হওয়ায় পানির সঙ্গে গড়িয়ে আসে বিপুল পরিমাণ নুড়ি পাথর। করতোয়া ও মহানন্দা নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক।

যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এ দুই নদী থেকে পাথর তুলে চলে তাদের সংসার। যেন জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে করতোয়া-মহানন্দার নুড়ি পাথর।

ভারতের ফুলবাড়ী থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মহানন্দা। প্রায় ২৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে নদীটি তেঁতুলিয়ার পুরাতন বাজার এলাকায় এসে আবার ঢুকে পড়েছে ভারতের অভ্যন্তরে। হিমালয়ের কোল থেকে বয়ে আসা এ নদীতে স্রোতে ভেসে আসে নুড়ি পাথর। বর্ষার পর নদীর পানি কমে গেলেই শ্রমিকেরা দলবেঁধে নেমে পড়েন পাথর তুলতে। নদীপারের বাংলাবান্ধা থেকে তেঁতুলিয়া বাজার পর্যন্ত আশপাশের প্রায় অর্ধশত গ্রামের বাসিন্দারা যুগের পর যুগ ধরে নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে জীবিকানির্বাহ করে আসছেন। প্রায় সারা বছরই পাথর তুলে তারা সংসার চালান। শীতের মৌসুমেও কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে পানিতে নেমে দিনভর চলে নদী থেকে পাথর সংগ্রহের কাজ।জানা যায়, পঞ্চগড়ের ভূগর্ভে রয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ পাথর।

বিশেষ করে তেঁতুলিয়ায় মাটি খুঁড়লেই পাওয়া যায় নানা আকারের পাথর। ভূগর্ভে লুকিয়ে থাকা জীবন্ত এসব পাথর যুগ যুগ ধরে তোলার পরও এর যেন শেষ নেই। ৮ থেকে ১০ ফুট, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২০ ফুট মাটির নিচে ৪-৫ ফুট স্তরের পাথর পাওয়া যায়। এ পাথর তোলার পর গর্ত ভরাট করে দিলে কয়েক বছর পর আবারও সেখানে পাথরের স্তর তৈরি হয়।

ভূগর্ভ থেকে পাথর উত্তোলনের নানা প্রক্রিয়া দেখার জন্যও প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে পঞ্চগড়ে। তবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ভূগর্ভস্থ পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রাখা হয়েছে। এর ফলে নদী থেকে পাথর উত্তোলন অনেক অংশে বেড়ে গেছে। শ্রমিকরা জাল-টুকরি নিয়ে নদীর পানিতে ডুব দিয়ে দিয়ে বালু-পাথর তোলেন। এর পর জাল দিয়ে ছেঁকে নুড়ি পাথর আলাদা করেন। এভাবে সারাদিন যে পাথর তোলেন সেগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে ঘরে ফেরেন শ্রমিকরা।

তেঁতুলিয়া উপজেলার সিপাইপাড়া গ্রামের পাথরশ্রমিক মজিবর রহমান বলেন, যুগ যুগ ধরে মহানন্দা নদী থেকে পাথর সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে সেই অর্থে আমরা সংসার চালাই। করতোয়া আর মহানন্দার পাথরই আমাদের জীবন-সংসার।

স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ী হারুন জানান, উত্তরাঞ্চলে নির্মাণকাজে পাথরের চাহিদার ৬০ ভাগ মেটানো হয় পঞ্চগড়ের পাথরে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফজলে রাব্বি  জানান, প্রকৃতির অফুরন্ত দান মহানন্দা ও করতোয়াসহ নদীর পাথর এ জেলার হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রেখার মহানন্দা নদী থেকে পাথর আহরণ করেন শ্রমিকরা। ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীপথের পাথর উত্তোলনে যাতে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন না করা হয় সেজন্য পাথর আহরণকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।