মির্জাপুরে রাস্তায় কাঁদা-পানিতে জনমানুষের দুর্ভোগ
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:২৩ | অনলাইন সংস্করণ
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার অবহেলিত পাহাড়ি অঞ্চলের চার ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা ও কর্দমাক্ত হওয়ায় যোগাযোগের ক্ষেত্রে দুই লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। লতিফপুর, তরফপুর, আজগানা ও বাঁশতৈল ইউনিয়নের অন্তত ৬৪টি গ্রামীণ রাস্তা মহান স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও পাকাকরণ করা হয়নি। ফলে স্থানীয়রা যোগাযোগের ক্ষেত্রে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ও কৃষিপণ্য বিপণনে অধিক ব্যয় বহন করতে বাধ্য হচ্ছে।
জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর, তরফপুর, আজগানা এবং বাঁশতৈল ইউনিয়ন চারটি মূলত পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। ইউনিয়ন চারটি জেলা শহর টাঙ্গাইল ও উপজেলা সদর মির্জাপুর থেকে দুর্গম এলাকা হওয়ায় মহান স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও রাস্তা-ঘাটে উন্নয়নের তেমন ছোঁয়া লাগেনি। ইউনিয়নগুলোর মধ্যে লতিফপুর ইউনিয়নের ১২টি, তরফপুর ইউনিয়নে ১৫টি, আজগানা ইউনিয়নে ১৭টি এবং বাঁশতৈল ইউনিয়নে ২০টি রাস্তার অবস্থা খুবই করুণ।
আজগানা ইউনিয়নের তেলিনা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আনোয়ার হোসেন (৪৫), আজগানা গ্রামের ব্যবসায়ী ছানোয়ার হোসেন (৪৪), বাঁশতৈল ইউনিয়নের অভিরামপুর গ্রামের মাসুদ পারভেজ(৩৫) পেকুয়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোতালেব হোসেন সহ এলঅকার অনেকেই জানান, ইউনিয়ন চারটি দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল বেষ্ঠিত। এ এলাকার প্রতিটি গ্রামের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। রাস্তাঘাট পাকা না হওয়ায় যোগাযোগের অভাবে তারা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তারা জানায়, টাঙ্গাইল জেলা শহর ও মির্জাপুর উপজেলা সদরে যেতে তাদেরকে ২০-২৫ কিলোমিটার ঘুরে যোগাযোগ করতে হয়। এরমধ্যে সর্ববৃহৎ আজগানা ইউনিয়নের জনসাধারণকে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ওপর দিয়ে ৩০-৫০ মাইল ঘুরে জেলা-উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। এতে একদিকে যেমন সময় অপচয় হচ্ছে- অন্যদিকে দ্বিগুণ অর্থ খরচ হচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় নির্বাচন এলে চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থী, উপজেলা পরিষদের নির্বাচন এলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে এমপি প্রার্থীরা এলাকার উন্নয়ন ও রাস্তাঘাট পাকাকরণের প্রতিশ্রæতি দিয়ে দিয়ে তাদের ভোটে নির্বাচিত হন। ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর তারা এলাকায় তেমন আসেন না এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়নেরও খোঁজখবর নেন না। এভাবেই প্রতিশ্রতি আর আশ্বাসের পর আশ্বাসে কেটে গেছে ৫৩ বছর। তাদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাগুলোর উন্নয়ন হয়নি- ভাগ্যেরও কোনো পরিবর্তন হয়নি।
মির্জাপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলের অবহেলিত চারটি ইউনিয়নের মধ্যে মধ্যে বাঁশতৈল ইউনিয়নের ৬-৭টি গ্রামে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এ ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তার অবস্থা খুবই বেহাল ও করুণ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই প্রতিটি রাস্তার উপর পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। তখন যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা- পায়ে হেঁটে চলাচলও কষ্টসাধ্য। এ ইউনিয়নের অন্তত ২০টি রাস্তা পাকাকরণ না হওয়ায় তারা রাস্তার ওপর বাঁশের চালি(বাঁশের অংশ) ফেলে পায়ে হাঁটার চেষ্টা করেন।
বাঁশতৈল ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল দেওয়ান ও লতিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলী হোসেন রনি জানান, তাদের এলাকার গ্রামীণ রাস্তাগুলোও অধিকাংশ কাঁচা হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে অত্যধিক কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়ায় চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং এমপির সঙ্গে সমন্বয় করে কাঁচা রাস্তাগুলো পাকাকরণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলী(এলজিইডি) মো. আরিফুর রহমান জানান, প্রতিটি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত ও গ্রামীণ কাঁচা রাস্তার তালিকা করে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্ধ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে কোন কোন রাস্তার কাজ শুরু করা হয়েছে। যে রাস্তাগুলোর কাজ এখনও শুরু হয়নি অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সেগুলোর কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে।
টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ জানান, প্রায় দেড় বছর হলো তিনি উপ-নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জনগণের আশা-আকাঙ্খা পুরণে দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রতিটি এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছেন। ইতোমধ্যে অনেক গ্রামীণ রাস্তা পাকাকরণ করা হয়েছে। যেগুলো কাঁচা রয়েছে সেগুলোর তালিকা তৈরি করে সংশ্লষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়- অল্প দিনের মধ্যে সেগুলোর অনুমোদন আসবে।
তিনি আরও জানান, আগামি দ্বাদশ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হলে মির্জাপুরের কোনো গ্রামীণ রাস্তা আর কাঁচা থাকবে না।