অশুভ শক্তি গ্রাস করে রেখেছে পৃথিবীকে। এতে বাড়ছে হানাহানি ও রক্তপাত। তাই শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীতে দেবীর কাছে বিশ্বজুড়ে শান্তির প্রার্থনা করেছে ভক্তরা। শনিবার (২১ অক্টোবর) পূজায় দেবীর কাছে এমন প্রার্থনা করেন সনাতন ধর্মালম্বীরা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মহাসপ্তমীর পূজা। এরপর ঢাকের তালে তালে শুরু হয় আরাধনা। ধীরে ধীরে মণ্ডপগুলোতে পূজার্থীদের ভিড় বাড়ে। পর্যটন শহরের লালদিঘী পাড়স্থ কালী বাড়ি, সরস্বতী বাড়ি, বঙ্গ পাহাড়, গোলদিঘির পাড়ের ইন্দ্রসেন দুর্গা বাড়ি, ঘোনার পাড়ার কৃষ্ণনান্দধাম ও বিজিবি ক্যাম্পের মল্লিক পাড়াসহ বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, পূজার আনন্দে উচ্ছ্বসিত সবাই। অনেকেই পরিবার—পরিজন নিয়ে ঘুরছেন মণ্ডপে মণ্ডপে। সাথে নতুন কাপড়ে বর্ণিল হয়ে মুখরিত ছোট্ট সোনামণিরা। কেউ কেউ বন্ধুদের হাত ধরে মনের আনন্দে মায়ের দর্শন করছেন।
ঘোনার পাড়া কৃষ্ণনান্দধাম পূজা মণ্ডপে চৈতি বিশ্বাস বলেন, “বছর ঘুরে মা এসেছেন পরিবার নিয়ে। তাই আগে থেকেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মাকে বরণে সবাই উদগ্রীব ছিল। এখন মায়ের কাছে এটাই প্রার্থনা পৃথিবীতে শান্তির বারতা ছড়িয়ে পড়ুক।”
মায়ের সাথে পূজায় আসা ছোট্ট শিশু টুম্পা মণি বলেন, “পূজোর জন্য নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়েছেন বাবা—মা। সেই কাপড় পরিধান করেই মণ্ডপে আসা। এখানে এসে বন্ধুদের সাথে সানন্দে ঘুরছেন ও দেখছেন। এমন সময় যেন সবসময় থাকে।”
গোলদিঘির পাড়ের ইন্দ্রসেন দুর্গা বাড়ির পূজারী বিপুল সেন বলেন “মহাসপ্তমীর রীতি অনুযায়ী সকালে প্রথমে নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে দিয়েই মূলত শুরু হয় দেবীর পূজা। এদিনের আয়োজনে রয়েছে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা। আগের দিন ষষ্ঠী সন্ধ্যায় দেবীর বোধন হয়, জাগিয়ে তোলা হয় দেবীকে। পরে অধিবাস এবং দেবী পূজার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়। লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতীকে নিয়ে মণ্ডপে অধিষ্ঠিত হন দশভূজা দেবী। এবার ঘোটকে দেবীর আগমন এবং গমন অশুভের বার্তা দিচ্ছে, তবে ভক্তের আরাধনায় দেবীর মন তুষ্ট হলেই মিলবে শান্তি।”
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল কর ও সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ বলেন, “কক্সবাজারে ১৫১টি প্রতিমা ও ১৬৪টি ঘট পূজা মিলিয়ে জেলায় ৩১৫টি মণ্ডপে পূজা হবে। পূজা শান্তিপূর্ণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে প্রতিটি পূজামণ্ডপে ২০ জন করে মোট ৩ হাজার ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২৪ অক্টোবর সৈকতে বিজয়াদশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বৃহৎ এই উৎসব শেষ হবে। বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বিপ্লব বড়ুয়া।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “শারদীয়া দুর্গাপূজা ঘিরে কক্সবাজারজুড়ে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। মণ্ডপ ও মন্দিরের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কাজ করছে পুলিশের একাধিক টিম। এছাড়া সাদা পোশাকে নিয়োজিত রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। পূজায় কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।