ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কাউখালীতে পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

কাউখালীতে পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ

পিরোজপুরের কাউখালীতে পল্লী চিকিৎসকের দেয়া ইনজেকশন ও ওষুধ সেবনের কারণে এক ফল ব্যবসায়ী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। জীবন এখন সংকটাপন্ন। হুমায়ুন ওষুধ বিপনীর মালিক মো. আলী হায়দারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন এলার্জির ওষুধ কিনতে যাওয়া ফল ব্যবসায়ী খোকন সমাদ্দার।

এবিষয়ে ভুক্তভোগীর মা তার সন্তানকে ভুল চিকিৎসা দেয়ায় এর বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা গেছে, আলী হায়দার একজন সরকারি চাকরিজীবী হলেও ফার্মাসিস্ট হিসেবে হুমায়ুন ওষুধ বিপনী নামে একটি ফার্মেসির লাইসেন্স নিয়ে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাঙ্গুলী গ্রামে ব্যবসা করছেন। একই নামের লাইসেন্সে তিনি কাউখালী সদরের দক্ষিণ বাজারে আরও একটি ওষুধের দোকান পরিচালনা করছেন। এছাড়াও তিনি নিজেকে এলাকায় একজন ডা. পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত চিকিৎসা প্রদান করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগীর মা অলোকা রানী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কাউখালী উপজেলার দক্ষিণ বাজারের ফল ব্যবসায়ী খোকন সমাদ্দার আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি হঠাৎ এলার্জিতে আক্রান্ত হলে তার মা অলোকা রানী সমাদ্দার বাসার পাশের উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের পরিদর্শক মো. আলী হায়দারর মালিকানাধীন হুমায়ুন ওষুধ বিপনী থেকে এলার্জির ওষুধ আনতে যান। এসময় দোকানের মালিক আলী হায়দার রোগী খোকন সমাদ্দারকে cynocort নামের ইনজেকশন এক মাসের মধ্যে ৬ ডোজ পুশ করেন। একই সময়ে আরও ৫ ধরনের ওষুধ খেতে দেন। এর পরেও খোকনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হয়ে দিন দিন তার শরীর ফুলে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। পরে এলাকাবাসীর পরামর্শে খোকনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তার মা। সেখানে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. দিপ্ত কুন্ডু তাকে দেখে পল্লী চিকিৎসকের দেয়া ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বরিশাল থেকে ৪ টি টেষ্ট করানোর জন্য বলেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টেষ্ট করানোর জন্য বরিশাল যাওয়ার পথে খোকনকে আলী হায়দার বাধা দান করেন। বাধা দেয়ার সময় তিনি বলেন, ‘আমার রুগী আমি দেখবো কোন টেষ্টের দরকার নেই’। খোকনের মা তার কথা না শুনে খোকনকে বরিশাল থেকে টেষ্ট করিয়ে ওই রিপোর্ট নিয়ে ডা. দিপ্ত কুন্ডুকে দেখালে তিনি রুগীকে যে cynocort ইনজেকশন দেয়া হয়েছে তা এই রুগীর জন্য প্রযোজ্য নয় বলে জানান। পরে চিকিৎসক ওই রোগীকে দ্রুত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন। রুগী খোকন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এ বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ বাজার ব্যবসায়ী সমিতিতে শালিস বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।

কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. দিপ্ত কুন্ডু বলেন, রুগীর ভাষ্যমতে পল্লী চিকিৎসক আলী হায়দার তাকে cynocort যে নামক ইনজেকশন পুশ করেছেন তা এই রুগীর জন্য মোটেই প্রযোজ্য না। তার পরেও ওই রুগীকে নাকি এক মাসের মধ্যে ৬ ডোজ ইনজেকশন পুশ করা হয়েছে। cynocort ইনজেকশনটি অতিরিক্ত ডোজ দেয়ায় কারনে তার শরীরে বিভিন্ন সমস্য দেখা দেয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান cynocort ইনজেকশন রেজিস্টার ডাক্তার ছাড়া ব্যবহার করার কোন সুযোগ না।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগ খোকন বলেন হায়দার আলী ডাক্তার না হলেও কাগজের ডাক্তার হায়দার লেখেন এবং চিকিৎসা দেন। আর ভুল চিকিৎসায় আমার লিভারে সমস্যা হয়েছে।বরিশালের ডাক্তার আমাকে বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দিয়েছ। আরো বলেন ওই দোকানে কোন সমস্যা নিয়ে ঔষধ কিনতে গেলে তিনি নিজেই ডাক্তার সেজে সব সময় চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

এছাড়া হায়দার আলী পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হওয়ায় তিনি নিয়মিত পরিদর্শনের নামে বাইরে থাকেন। এবং বেশিরভাগ সময়ই পরিদর্শন না করে নাঙ্গুলী ও কাউখালী দোকানে বেশি সময় দেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে ।

অভিযুক্ত মো. আলী হায়দার তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, জুন মাসের দিকে একটি প্রেজক্রিপশন দেখিয়ে cynocort নামের একটি ইনজেকশন আমার কাছ থেকে নেন। পরে ওই ইনজেকশনটি আমি পুশ করে দিয়েছি। আমি তার কোন চিকিৎসা করিনি। তবে আমি কম দামে ঔষধ বিক্রি করায় অন্য কোন ব্যবসায়ীর পরামর্শে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেছ বলে আমার ধারণা ।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা জানান, অভিযোগ পেয়েছি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার ডাক্তার সুজন সাহার সাথে কথা হয়েছে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কাউখালী,ব্যবসায়ী,ঝুঁকি
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত