কক্সবাজারে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হয়েছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। এ উপলক্ষে রবিবার (২২ অক্টোবর) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বর থেকে বর্ণিল র্যালী বের করা হয়। র্যালীতে রং-বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও টি-শার্ট নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। র্যালীটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পদক্ষিণ করে। পরে জেলা প্রশাসনের এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ কক্সবাজারের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান।
তিনি বলেন, কক্সবাজারে ঐতিহ্যগতভাবে রাস্তার উপর হাট-বাজার বসানো হয়। বিশেষ করে গরুর বাজারগুলো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই আগামী অর্থ বছর থেকে রাস্তার উপর থেকে সব বাজার সরানো হবে। এতে কমে আসবে দুর্ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, চালকদের অদক্ষতা ও অসচেতনতার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে। মানতে হবে ট্রাফিক আইন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণ ও প্রচারণা প্রয়োজন। এছাড়া সন্তানদের বাইক কিনে দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সামনে রেলপথ চালু হলে কক্সবাজারে মানুষের ঢল নামবে। এক্ষেত্রে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে আস্তে আস্তে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, অন্য জেলায় গাড়ির জন্য মানুষ অপেক্ষা করে, আর কক্সবাজারে গাড়ি মানুষের জন্য অপেক্ষা করে। তাই সরকার কক্সবাজার আর রাজশাহীর ট্রাফিক ব্যবস্থাকে অন্য দৃষ্টিতে দেখেন।
তিনি বলেন, কক্সবাজার শহরে ৩ হাজার টমটম রয়েছে। টমটমের সংখ্যা কমে গেলে দুর্ঘটনাও কমে যাবে। এতে কক্সবাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
তিনি আরো বলেন, নিরাপদ পর্যটন শহর এবং টুরিস্টদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রায় ৩০০০ চালকদের এক জায়গায় এনে সকলের ডাটাবেজ প্রস্তুত করে কক্স ক্যাব নামের ওয়েবসাইট তৈরি করেন।
কোন পর্যটক চালাক দ্বারা হয়রানি কিংবা সমস্যায় পড়লে গাড়িতে থাকা বারকোড স্ক্যান করে অভিযোগ জানিয়ে হয়রানি থেকে রক্ষা করতে পারবেন। তার এই কর্মক্ষেত্রের জন্য "স্মার্ট বাংলাদেশ ২০২৩ পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাঁকে। গত১৮ অক্টোবর সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট রনজিত দাশ, জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল, চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফজলুল করিম সাঈদী, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাদিয়া আফরোজ, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কক্সবাজারের সভাপতি জসিম উদ্দিন কিশোর প্রমুখ।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) উথোয়াইনু চৌধুরী।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কক্সবাজারের সভাপতি জসিম উদ্দিন কিশোর তার বক্তব্যে কক্সবাজারের মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোস্তফা মুন্সী, বিআরটিএ কক্সবাজার সার্কেলের (মোটরযান পরিদর্শক) মো. মামুনুর রশীদ, সহকারী মোটরযান পরিদর্শক মোহাম্মদ ইউছুফসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এইদিকে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার বিআরটিএ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) উথোয়াইনু চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ পেলেন তিন পরিবার। এক পরিবার ৫ লাখ টাকা করে ১৫ লাখ টাকা পেয়েছে।
তিনি বলেন, স্থায়ী তদন্ত কমিটি কর্তৃক প্রাপ্ত ট্রাস্টি বোর্ডের অনুকূলে দাখিলকৃত সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির জন্য বিআরটিএ’র উপ-পরিচালক (আইন) শেখ মতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত সুপারিশকৃতরা হচ্ছেন- মহেশখালীর পানিরছড়া গুলগুলিয়া পাড়ার নুরুল ইসলামের পুত্র মৃত নুরুল হাসেম (যার রেজি. নং: ১৫৬); দুর্ঘটনাস্থল কক্সবাজারের মহেশখালী। মহেশখালীর বড় মহেশখালী ফকিরা ঘোনার মৃত আবদুল গণির পুত্র মৃত মুহাম্মদ আলম রায়হান (যার রেজি. নং: ২৪৯); দুর্ঘটনাস্থল, কক্সবাজারের সদর। যশোরের বাঘারপাড়ার মামুদালিপুরের মৃত ছাত্তার মোল্লার পুত্র ইমারত মোল্লা (যার রেজি. নং: ১০৪); দুর্ঘটনাস্থল কক্সবাজারের উখিয়া।