ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শ্লীলতাহানি ও বসতভিটা দখলের মামলা

ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ফের 'ভাইরাল'

ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ফের 'ভাইরাল'

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, ধর্নাঢ্য পরিবারের সন্তান আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরী। তাঁর স্ত্রী আশরাফ জাহান কাজলও একজন জনপ্রিয় নারী জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেত্রী। দুইজনেই সমাজে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি অত্যন্ত ভালো। এমনকি আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরীর ব্যাপক জনপ্রিয়তায় এখনো রাস্তায় হাঁটলে মিছিলের আকার ধারণ করে।

এই ঘরে জন্ম নেয় 'আদুরের দুলাল' এসএম ইমরুল কায়েস চৌধুরী। বাবা- মা'র দেখানো পথে ইমরুল কায়েস চৌধুরীর শখ জাগে বাবা-মার মতো সমাজে নেতৃত্ব দিবে। ঠিকই বাবা-মা'র আর্শীবাদে ২০২১ সালে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদে জনতার ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর নানা ঘটনার জন্ম দেন। তাঁর বাবা-মা ছাড়াও অনেকেই ভালো স্বপ্ন নিয়ে তাঁকে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখেন। প্রথম সারিতে থাকা নেতারাও চরম হতাশ বর্তমানে। তাঁরাও তাঁর আচরণে চরম ক্ষুব্দ। ইতিমধ্যে নানা বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'ভাইরাল' তিনি। অনেকটা 'ভাইরাল' চেয়ারম্যান হিসাবে দেশজুড়ে আলোচিত- সমালোচিত। এমনকি তাঁর নানা বিষয় নিয়ে শিরোনাম হয় দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে। অনেকেটাই হলদিয়ার অধিকাংশই সাধারণ মানুষ চেয়ারম্যানের কাছে জিম্মি। এমনকি উখিয়ার অনেক সরকারি কর্মকর্তাও তার আচরণে তটস্থ।

গেল আগস্ট মাসে দেশের সর্বদক্ষিণের সীমান্ত শহর উখিয়া-টেকনাফের আলোচিত সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদিও একটি অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসকে 'ডরাই' (ভয় পায়) বক্তব্য রাখার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে 'ভাইরাল' হয়। এক সময় সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদি তাদের পরিবারের কাছের লোক ছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসের বেপরোয়া আচরণে তিনিও তাঁর পরিবার থেকে দূরে সরে যান। শুধু বদি নয়, উখিয়া-টেকনাফের অনেক কাছের মানুষ সরে গেছেন জননেতা আলহাজ্ব মাহমুদুল হক চৌধুরীর পরিবারের কাছ থেকে। বলতে গেলে নির্বাচিত হওয়ার ২৩ মাসে নানা অভিযোগ, মামলায় দেশজুড়ে আলোচিত হন চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী। তাঁর সব অভিযোগ, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

এদিকে সোমবার ( ২৩ অক্টোবর) শ্লীলতাহানি ও বসতবাড়ি দখলের অভিযোগে হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর বিরুদ্ধে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি করেন একই ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহবুবুল আলম (৪৫) নামের এক ব্যক্তি।

আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আদেশ দিয়েছেন। উখিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা সাত্তারের আদালতে মামলাটি করা হয়েছে।

গৃহবধূর শ্লীলতাহানি ও বসতবাড়ি দখলের অভিযোগে মামলাটি করা হয় বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী আবুল কালাম ছিদ্দিকী। মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হলদিয়াপালং ইউনিয়নের পূর্ব মরিচ্যার মিয়াজান ফকিরের ছেলে।

বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, বাড়ির পাশে মরিচ্যা বাজারে তিনি দীর্ঘদিন ধরে লাকড়ি ও কলার আড়তের ব্যবসা করে আসছেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ইমরুল কায়েস বাদীকে তাঁর বসতভিটার জমি বিক্রির প্রস্তাব দেন। কিন্তু চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হতো। তারপরও জমি বিক্রিতে রাজি না হওয়ায় ১৮ এপ্রিল একটি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাকে থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন চেয়ারম্যান। একইদিন সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ২০/২৫ জন লোক নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় বাদীর বসতবাড়িতে হামলা চালান। এসময় তার অনুসারীরা প্রায় এক লাখ টাকার মালামাল ও গরু লুট করে নিয়ে যান। এসময় বাড়িটি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলায় তার প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, হামলার সময় বাদীর স্ত্রী বাধা দিতে গেলে তাকে মারধর করে শ্লীলতাহানি করা হয়। বাদী কারাবন্দি থাকায় স্ত্রী-সন্তান মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। ১৮ অক্টোবর হাইকোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর স্থানীয় লোকজনের কাছে বিচার দেন তিনি। কিন্তু ন্যায় বিচার না পেয়ে অবশেষে আদালতে অভিযোগ করেন।

অভিযোগ ও মামলার বিষয়ে জানতে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল করা হয়। রিং হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে বক্তব্য চেয়ে ভয়েস মেসেজ পাঠানো হয়, তারও কোনো উত্তর দেননি তিনি। তবে মামলার বিষয়টি জেনে চেয়ারম্যান ইমরুল তাঁর ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে লেখেন, ‘শব-ই কদরের দিন ঘোড়া জবাই করা মরিচ্যার কসাই মাহাবুর সঙ্গে আজকে আদালত চত্বরে কে কে ছিল একটু খবর নিন’।

এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে এক পথসভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আটটি কেন্দ্রে ‘ভোট ডাকাতি’ করেছিলেন বলে বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হন চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। এ ঘটনায় ইসি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনালে ইমরুলের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

অন্যদিকে ১৬ অক্টোবর তাঁর বাড়ির পাশ থেকে তিন হাজার ৩৩০ কেজি ভিডাব্লিউবির (ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট) চাল জব্দের ঘটনায় পুরো কক্সবাজারে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

এর আগে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের সাবেক রুমখাঁ আলী পাড়ার মৃত আলী আহমদের ছেলে সোলতান আহমদকে নির্মম মারধর করেন চেয়ারম্যান ইমরুল। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গেল ১৬ মে মুছলেকা দিয়ে জামিনে পান চেয়ারম্যান। এরপর আবদুর রহিম নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে অনাধিকার প্রবেশ করে বাড়ি ঘর ভাংচুর করে এবং প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার ফলজ ও বনজ গাছপালা কেটে ফেলা এবং পুকুরের মাছ লুটপাট করার অভিযোগ এনে ১ জুন কক্সবাজার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরীকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। মামলা নং- ৬০৫/২৩। তবে পরে বাদির সাথে আপোষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া তাঁর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম এবং ব্যবসায়িরা। তার মনপুত না হলে নাগরিক সুবিধাও না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

প্রসঙ্গতঃ ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর সারাদেশে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে উখিয়ার পাঁচটি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্টিত হয়। হলদিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় একটি ভোট কেন্দ্রে স্থগিত করা হয়। পরে ৩০ নভেম্বর পূনঃনির্বাচনে উক্ত কেন্দ্রে ৩৩০৫ ভোটের মধ্যে ২৬৪৬ ভোট গৃহীত হয়। ঘোষিত ফলাফলে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে এসএম ইমরুল কায়েস চৌধুরী পেয়েছেন ১৬৯০ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম পেয়েছেন ৯৩১ ভোট।

চেয়ারম্যান,ভাইরাল
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত