চাঁদপুরে লক্ষীপূজার প্রতিমা চড়া দামে বিক্রি শুরু

প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৫২ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরের বিভিন্ন মন্দিরে উৎসবমুখর পরিবেশ নানা আকারের কোজাগরী লক্ষীপূজা উপলক্ষে লক্ষীর প্রতিমা কেনাবেচা শুরু হয়েছে। তবে এ লক্ষীর প্রতিমা বিগত বছরের চাইতে এবার বেশী দামে বিক্রি হচ্ছে,বলে জানালেন সনাতন ধর্মীয় মানুষেরা। তবু লক্ষীর আশীর্বাদ পেতে প্রতিমা ক্রয় করতে হচ্ছে,তাদের।
আগামী শনিবার হিন্দু ধর্মাবল্বমী সনাতন ধর্মের মানুষেরা এ ল²ীপূজা পালন করবে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সকাল থেকেই শহরের কালীবাড়ি মন্দিরের সামনে ও ভিতরে নানা স্থান থেকে প্রতিমা নিয়ে আসতে শুরু করে এ প্রতিমা নির্মানকারী কারিগর ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা।

চাঁদপুর জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা অজয় কুমার ভৌমিক বলেন, শরৎ পূর্ণিমার দিনে বাংলার ঘরে ঘরে ল²ীপূজা পালন করা হয়। আশ্বিন মাসের শেষের পূর্ণিমার দিনে যে লক্ষীপূজা পালিত হয় তাকে বলা হয় কোজাগরী লক্ষীপূজা। কোজাগরী শব্দটির উৎপত্তি ‘কো জাগতী’ থেকে। এর আক্ষরিক অর্থ ‘কে জেগে আছো ?’ মূলত কোজাগরী লক্ষীপূজার দিনে ধন সম্পদের দেবী লক্ষী স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অবতরণ করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে আশীর্বাদ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যার বাড়ির দরজা বন্ধ থাকে, তার বাড়িতে লক্ষী প্রবেশ করেন না এবং সেখান থেকে ফিরে চলে যান। তাই ল²ীপূজার রাতে প্রতিটি হিন্দু ধর্মাবল্বমী ¯œাতন ধর্মের মানুষেরা জেগে থাকার রীতি প্রচলিত আছে এবং সারারাত জেগে লক্ষী আরাধনাই এ পূজার বিশেষত্ব।

এদিকে চাঁদপুর শহরের কুমিল্লা রোডস্থ কালীবাড়ি মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, পূজা উপলক্ষে প্রতিমা, কাগজের ফুল, গামছার দোকান, খেলনা কদমা সন্দেশের দোকানে বিভিন্ন মিস্টি জাতীয় খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

ফরিদগঞ্জের পাইকপারার কানু পাল বলেন, ‘আমি এ মন্দিরে বিক্রির জন্য ২০০ প্রতিমা নিয়ে এসেছি। প্রতিটি প্রতিমা আকারভেদে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করছি।’

কুমিল্লার বিজয়পুরের বাসিন্দা অনন্ত পাল বলেন,অন্যান্য বছরের মতো এবারো আমি এখানে ২৪০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। প্রতিটি প্রতিমা ৪০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করবো। তবে এখনো বিক্রিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি।’

কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে রানা পাল টানা ১৫ বছর ধরে কালীবাড়ি মন্দিরে প্রতিমা বিক্রি করতে আসেন। তিনি বলেন, ‘এবারও আমি ২৬০টি প্রতিমা নিয়ে এসেছি। জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় এবার ২০০ থেকে ১২০০ টাকা দামে বিক্রি করছি। মূলত এঁটেল মাটি দিয়ে একটি প্রতিমা বানাতে রংতুলি দিয়ে রূপ দিতে আমাদের একদিন সময় লাগে।’

হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুরের লক্ষণ চন্দ্র সাহা মন্দিরে এসেছেন সন্দেশসহ পূজার নানা উপকরণ নিয়ে। তিনি ক্ষিরের প্যারা ৬০০ টাকায়, খেলনা কদমা ২৪০ টাকা ও লাড়ুর কেজি ৫০০ টাকা করে বিক্রি করছেন।

শহরের নতুনবাজারের পালপাড়া এলাকার অজিত কুমার পোদ্দার এসেছেন পূজাতে ব্যবহার্য ফুলের মালা বিক্রি করতে। তিনি কাগজের মালা ৩০ টাকা, সোলার ফুল ৩০ টাকা, গামছা ৩০ থেকে ১৫০ টাকা, মঙ্গল ঘট ৪০ টাকা, চড়কা ৩০ টাকা থেকে আকারভেদে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

পূজার কেনাকাটা করতে আসা বলাই চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতিমাসহ সবকিছুর দামই আগের চেয়ে বেশি। তবে কেনার দরকার তাই ক্রয় করছি। তবুও বলবো এখনো দাম সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে।’

এ বিষয়ে শহরের শ্রী শ্রী কালীবাড়ি মন্দির কমিটির সদস্য গোবিন্দ সাহা বলেন, ‘আমরা নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী দিয়ে মন্দিরের এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছি। বর্তমানে এখানে ৪টা ফুলের দোকান, ৩টা গামছার দোকান, ৫টা প্রতিমার দোকান, ৫টা খেলনা কদমার দোকান বসানো হয়েছে। এগুলোতে প্রতিদিন ভোর ৬টা হতে রাত ১২টা এবং পূজার আগের দিন রাত আড়াইটা পর্যন্ত কেনাবেচা হবে। শনিবার যাতে সুন্দরভাবে লক্ষীর পূজা হয় সেটাই প্রত্যাশা রয়েছে আমাদের।’