বাকঁখালী নদীতে ভাসলো হরেক রকমের কল্প জাহাজ 

প্রকাশ : ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ | অনলাইন সংস্করণ

  রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাঁকখালী নদীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী কল্প জাহাজ ভাসা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুর থেকে এ জাহাজ ভাসাকে ঘিরে উৎসবমুখর হয়ে উঠে বাঁকখালী নদীর দুই তীর। বাঁশ-বেত ও রঙিন কাগজ দিয়ে তৈরি ৮ টি কল্প জাহাজে চলে নাচ-গানের পাশাপাশি বৌদ্ধ কীর্তনও।

বৌদ্ধদের শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রতি বছরের মতো এ বছরও উৎসবের আয়োজন করেছে রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব কমিটি। উৎসবে রামু উপজেলার ছয়টি বৌদ্ধ পল্লীতে নির্মিত ৮ টি কল্প জাহাজ অংশ নেয়। বাঁশ, বেত, কাঠ, রঙিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরি জাহাজে ঈগল, ময়ূর, ঘোড়াসহ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তিন চারটি নৌকায় এক করে সেই নৌকার ভেলায় বসানো হয় এক একটি জাহাজ। এসব জাহাজেই চলে শিশু-কিশোর ও যুবকদের বাঁধভাঙা আনন্দ। তারা নানা বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানে মেতে উঠে অন্যরকম উচ্ছ্বাসে। 

উৎসবে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। এসময় তিনি বলেন, আমরা যে ধর্মের অনুসারী হয়না কেনো আমরা যুগ যুগ ধরে একসাথে বসবাস করছি তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ আজকের এই জাহাজ ভাসা উৎসব। সকল ধর্ম,বর্ণ ও গোত্রের মানুষ এই উৎসবে সমবেত হয়েছেন এবং আনন্দ উৎসবে মেতে উঠছেন। তিনি আরও বলেন,স্বাধীনতা যুদ্ধে সকল ধর্মাবলম্বী একসাথে ঝাপিয়ে পড়েছিলো। আমাদের একে অপরের মধ্যে যেই মেলবন্ধন রয়েছে,সম্প্রতি রয়েছে তা নস্ট করার জন একটি কুচক্রী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। কোন ধর্ম অমঙ্গল,অন্যায়,অত্যাচার,অবিচার,মসজিদ মন্দির ভাঙ্গচুরের কথা বলেনা। সকল ধর্মই ভ্রাতৃত্বের কথা বলে। তাহলে আমরা কেনো অপর ধর্মের ধর্মীয় আবেগে আঘাত করবো? আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।

সংবর্ধিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কক্সবাজার পৌরসভার সভাপতি ডালিম বড়ুয়া,রামু উপজেলা যুবলীগ সভাপতি পলক বড়ুয়া আপ্পু। রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি সাংবাদিক অর্পন বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে রামু উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) তাপ্তি চাকমা, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা, রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ান,কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ সরওয়ার সোহেল, রামু প্রেসক্লাব সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোছাইন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মুসরাত জাহান মুন্নী, রামু উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারন সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক, উপজেলা যুবলীগ সাধারন সম্পাদক রাশেদ আলী, রামু বনিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সজল বড়ুয়া, উন্নয়ন সংস্থা স্কাসের চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা, ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যন টিপু সুলতান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগ নেতা জিৎময় বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন, উৎসব সমন্বয়ক অর্ক বড়ূয়া।

দুপুর দুইটায় রামুর বাঁকখালী নদীর চেরাংঘাটা পয়েন্টে জাতীয় ও উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে জাহাজ ভাসানো উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে চলে আনন্দায়োজন। প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসানো উৎসবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ তিনমাস ব্যাপী রামুর বৌদ্ধ পল্লীতে আনন্দায়োজনের পর মহা উৎসাহ উদ্দীপনার মাঝে এ উৎসব সম্পন্ন করা হয়। পরে সন্ধ্যায় দীর্ঘ তিনঘন্টাব্যাপী বৌদ্ধকীর্তন অনুষ্ঠান।

রামু কেন্দ্রীয় প্রবারণা পূর্ণিমা ও জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি অর্পন বড়ুয়া জানান, এ বছর রামু উপজেলার মধ্যম মেরংলোয়া, পূর্ব রাজারকুল, শ্রীকুল-হাইটুপী, দ্বীপ শ্রীকুল, মেরংলোয়া (সীমা বিহার), পূর্ব মেরংলোয়া, উত্তর মিঠাছড়ি, রাংকুট, চেরাংঘাটা রাখাইন পল্লী থেকে ৮টি কল্পজাহাজ নদীতে ভাসানো হয়েছে।