নিষেধাজ্ঞা অমান্য জেলেদের

পদ্মা-মেঘনায় প্রকাশ্যে ‘মা’ ইলিশ নিধন

প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা প্রশাসনের ব্যাপক দৃস্টি থাকা ও অভিযান থাকার পর ও তাদের দৃস্টিগোচর করে নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে শিশু-কিশোরদের মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে মা’ইলিশ নিধন করা হচেছ। বর্তমানে চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা ও মেঘনায় মা ইলিশ প্রচুর আছে বলে জেলেরা ধারনা করছেন। 

নদীতে কারেন্ট জাল ফেলা মাত্র প্রচুর মা’ইলিশ জেলেদের জালে  আটকা পরে নদী থেকে উঠে আসছে। এতে করে জেলেরা সে লোভ সামাল দিতে না পেরে প্রকাশ্যে ও গোপনে তারা মা’ইলিশ ধরা অপরাধ জেনেও মা”ইলিশ নিধন কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। জেলেদের ভাষায় বর্তমানে নদীতে জাল ফেলা মাত্র মা’ ইলিশ প্রচুর জালে আটকা পড়ছে। তারা জানান মা’ইলিশ লোনা পানি থেকে ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মা-মেঘনা নদীর মিঠা পানিতে এসেছে। কারেন্ট জাল ফেলে কেহ খালি হাতে ফিরছেনা। 

ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ‘ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩’ থাকলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে মা ইলিশ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নের জেলেরা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও জেলেরা কিছুতেই মানছে না ।

এই ২২ দিনের জন্য বরাদ্দকৃত চাল সকল জেলেদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এছাড়া  সারা বছরের জেলে ও মৌসুমি জেলেদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়। এর পরও এসব জেলেরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে।

সরোজমিনে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় গিয়ে দেখা যায়, হাইমচর ও নীলকমল ইউনিয়নে শিশু-কিশোর ও বয়স্ক ব্যক্তিরা দিনভর নদী থেকে মাছ শিকার করছে এবং স্থানীয় বাংলাবাজার মাঝেরচর ও সাহেবগঞ্জ বাজারে প্রকাশ্যে ইলিশ মাছ বিক্রি করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে মাছ ক্রয়-বিক্রিতে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। 

মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের শুরু থেকেই নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ড অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযানের প্রতিদিনই জেলেদের আটক ও জরিমানা করা হচ্ছে। তার পরও অসাধু জেলেরা আইন কানুন কিছুতেই মানছে না। আইন অমান্য করে প্রতিদিনই নদী থেকে মা ইলিশ শিকার করে থাকে।

হাইমচর কালীখোলা ঘাটের একজন আড়তদার আহসান বেপারী (৬৭) বলেন, আমি একজন আড়তদার হয়েও ইলিশ মাছ সংরক্ষণ ও বিক্রি করা বন্ধ করে রেখেছি। কিন্তু অনেক প্রভাবশালী আছে যারা এ সময় প্রকাশ্যে মাছ কিনছে এবং সংরক্ষণ করে রাখছে অভিযানের পরে যাতে বেশি লাভে বিক্রি করতে পারে।

আহসান বেপারী আরো বলেন, প্রতিবছর যখন ইলিশের অভিযান শুরু হয় তখন হাইমচর, নীলকমল ও ইউনিয়নের অনেক যুবক যারা ঢাকায় থাকে, এই সময় তারা গ্রামে চলে আসেন এবং দিনরাত নদী থেকে ইলিশ মাছ শিকার করেন। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করে থাকে তারা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণ জানালেন হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নের এক জেলে।

তিনি বলেন, ২২ দিনের অভিযানে জেলেদের জন্য ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জেলেরা পাচ্ছেন ১৮ থেকে ২০ কেজি চাল। এ সামান্য চাল দিয়ে জেরেদের সংসার চালানো সম্ভব না। তাইতো জেলেরা জীবন রক্ষার্থে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকার নামে।

উপজেলা টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে সর্বত্র সতর্ককরণ ফেস্টুন লাগিয়ে জেলেদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। এ সর্তক হচ্ছে, ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। ইলিশ সম্পদ রক্ষার স্বার্থে এবং সকলকে সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। এই আইন অমান্যকারীদের কমপক্ষে এক বছর এবং সর্বোচ্চ দুই বছরে সশ্রম কারাদন্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দন্ডে দন্ডিত করা হবে। এরপরও আইন অমান্য করে প্রকাশ্যেই  জেলেরা অবাধে মা’ ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে।

জেলেরা জানান, এক বার জাল ফেললে ৩/৪ মন ডিম ওয়ালা ইলিশ জালে আটকা পড়ে। এখন এ মাছ না ধরলে ডিম ছাড়ার পর এ মাছ এ নদীতে আর থাকবেনা সাগরে চলে যাবে।

এদিকে চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে লোনা পানির ও সমুদ্র এলাকা থেকে প্রচুর পরিমানে মা’ ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য এসেছে। এ সব ইলিশ ধরার জন্য অবৈধ জেলেরা নিষিদ্ব কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মা’ ইলিশ নিধন করে যাচেছ। এ সব জেলেদের প্রতিরোধ করার জন্য নদীতে পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তার পর জেলেরা নিজেদের ইচছা মত ও ছোট,ছোট শিশুদের মাধ্যমে মা’ ইলিশ নিধন চালাচেছ। নিধন করা মা’ ইলিশ নদীর কুলবর্তী এলাকায় হাট বসিয়ে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। মেঘনা নদীর হরিনা,আখনের হাট,দোকানঘর,বহরিয়া,আলুর বাজার,আনন্দ বাজারহ বিভিন্ন স্থানে এ মা’ ইলিশ প্রকাশ্যে বিক্রি হতে দেখা যাচেছ।

চাঁদপুর-নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে দিনে ও রাতে অবাদে ছোট-ছোট শিশু ও কিশোরদের মাধ্যমে মা’ইলিশ নিধন করে যাচেছ জেলেরা। এ মা’ ইলিশ প্রতিকেজি ১১/১২ শ’ টাকায় বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ মা’ ইলিশ রক্ষায় জেলা টাস্কফোর্স,নৌ-পুলিশ,কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসন যৌর্থ ও ভিন্নভিন্ন অভিযান করে কারেন্ট জাল,নৌকা,মা’ইলিশ জব্দ ও জেল জরিমানা ও দন্ড দিলেও কোন সমাধান হচ্ছে না।

জেলেরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে খবর রেখে প্রশাসনের অবস্থান জেনে নদীতে জাল ফেলে মা ইলিশ নিধন করছে এতে করে ইলিশের বংশ বৃদ্বিতে ও উৎপাদনের বাধা সৃস্টি করেই যাচেছ। জেলেরা মেঘনা নদীতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে কারেন্ট জাল পানির উপরে ভাসিয়ে না রেখে অনেক দূরে-দূরে পাতলা  ককসিট জাতীয় বয়া ব্যবহার করে মা’ ইলিশ নিধন অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচেছ। এতে করে অভিযান কালে প্রশাসন নদীতে নেমে ব্যাপক অভিযান করলেও জেলেদের কারেন্ট জাল নদীতে দেখতে পায়না। জেলেরা নদীতে কারেন্ট জাল  ফেলে চলে যায়,সময় সুযোগ বুঝে জেলেরা শিশু-কিশোরদের মাধ্যমে জাল টেনে নদীর তীরবর্তী স্থানে এনে বয়স্কো জেলেরা মা’ ইলিশ জাল থেকে খুলে বরফজাত করে রাখে। পরে রাতে সময় উপযোগী অবস্থা বুঝে মা’ ইলিশ পাচার করে যাচেছ।
      
এ বিষয়ে চাঁদপুর নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ  চাঁদপুর সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় ১২ অক্টোবর থেকে ইলিশসহ সব ধরণের মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ, পরিবহন ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এ বিষয়ে নৌ-পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। জেলেদেরকে নদীতে পাওয়া মাত্র আটক করা হ্েচ্ছ। এ অভিযান অব্যাহত ভাবে চলবে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মো. মেহেদী হাসান জানান, জেলা টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে পদ্মা ও মেঘনায় অভিযান অব্যাহত ভাবে চলছে। জেলেরা লুকিয়ে লুকিয়ে মা ইলিশ নিধন করছে। অভিযান কালে তাদের নদীতে পাওয়া গেলে আটক করে কারাদন্ড ও জরিমানা করা হচ্ছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত ভাবে চলছে।