দেনা মেটাতে নিজ সন্তান বিক্রী, পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

অভাবের তাড়নায় দেনা মেটাতে নিজের সন্তানকে বিক্রি করেছেন শিল্পী বেগম নামে এক নারী। সম্প্রতি এ ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই নারীর পাশে দাঁড়ান ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: বেলায়েত হোসেন। তার আর্থিক দৈন্যতা থেকে বের করে আনতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহ প্রদানসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতার কথা বলেছেন এই কর্মকর্তা।

তবে স্থানীয়রা অনেকে প্রশ্ন করেছেন কে নিল এই সন্তান ? কোথায় তাদের বাড়ি, আদৌ কি তারা কারোর কাছে সুরক্ষিত থাকবে। এমন প্রশ্ন সকলের মনে। শিল্পী এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা যায় এইসন্তানের অভিভাক কে ? কোথায় তাদের বাসা। কেউ বলতে পারছে না। শুধুমাত্র দিয়েছেন একটি মোবাইল নম্বর, সেটিও আবার বন্ধ। এখন কি জানা যাবে না, শিল্পীর এই নবজাতক সন্তান কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে সেই প্রতিক্ষায় আশ্রয়ণবাসিসহ অনেকে। যারা হস্তান্তরের সাথে জড়িত তারাও বলতে না কোথায় তাদের বাড়ি। শিল্পী বেগম সদর উপজেলার মহেষআলী গ্রামের আব্বাস আলীর মেয়ে।

শিল্পী বেগমের বয়স ২৮ বছর। ২০১১ সালে বিয়ে হয় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাহাদুর পাড়া গ্রামের রায়হান আলীর সাথে। বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ১২ বছর। সুখের আশায় স্বামী-সন্তানদের নিয়ে ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লার রহমান ক্লিনিকের পাশেই ভাড়া থাকতেন তিনি। বিয়ের পরে একে একে জন্ম নেয় চার সন্তান, তিন ছেলে এক মেয়ে। স্বামী ছিল অলস প্রকৃতির, হিজরা কমিউনিটিতে নাম লিখিয়ে স্ত্রী-সন্তানদের রেখে পালিয়ে যায়। কিন্তু অসহায় মা শিল্পী বেগম সন্তানদের ভরনপোষণ এবং বাড়ি ভাড়া
পরিশোধ করতে না পারায় বেশ কিছু দেনা হয়ে যায় তার। পাওনাদারদের দেনা পরিশোধ এবং সন্তানদের ভরনপোষন চালাতে না পেরে অবশেষে রহমান ক্লিনিকের মাহমুদা খালার মাধ্যমে নিজের নবজাতক সন্তান সবুজকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রী করে দেন এক দম্পত্তির কাছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাতেনের মোড় আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা
শাহনাজ বেগমসহ একাধিক নারী প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলেন যার সন্তান সেই জানে তার মনের কষ্টটা। এধরনের ঘটনা কারো ভাগ্যে যেন না ঘটে সেই কামনাই করেন সকলে। তারা আরও বলেন শিল্পী বেগমের সন্তান শিল্পীর কাছে ফিরে আসবে এমনটাই আশা করি আমরা।

৩০ হাজার টাকায় বিক্রী করা নবজাতক ওই সন্তানের মা শিল্পী বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে গৃহ পেয়ে কিছুটা ভালো কিন্তু নিজের সন্তানকে অন্যের কাছে হস্তান্তর করে আমার কান্না করা ছাড়া কিছুই করার নেই। শিল্পী বেগমের ৬ বছরের সন্তান এ কথা শোনার পর শুধু কেঁদেই চলেছেন, চোখে ঝরছে অশ্রু, মুখে যেন ভাই হারানোর বেদন। সেও ভাইকে ফিরিয়ে পেতে চায়।

ঠাকুরগাঁও শহরের গোয়ালপাড়া মহল্লায় রহমান ক্লিনিকে আয়ার কাজ করেন মাহমুদা বেগম। সকলেই তাকে মায়ের বোন খালা সমন্ধে ডাকে। তিনি বলেন, শিল্পী যখন সন্তানকে নষ্ট করার চেষ্টা করে তখন আমি তাকে বাঁধা দেই এবং বলি অন্যের কাছে সন্তানটি দিলে কিছু অর্থ দিবে যা দিয়ে তোমার দেনা পরিশোধ করতে পারবে। অপরদিকে পাওনাদার হোটেল ব্যবসায়ী এক নারী বলেন আমি কথা শুনে হাসপাতালে গিয়ে বসেছিলাম। তার তো অন্য কোন উপায় নেই দেনা পরিশোধের, তাই টাকা পেতে বসে থাকি। পরে আমাকে টাকা দিলে আমি চলে আসি। তার কাছে হাওলাদি ৫ হাজার এবং খাওয়ানো ৭’শ টাকা পাই। সেই টাকা আমাকে পরিশোধ করে শিল্পী। ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: বেলায়েত হোসেন ঘটনা শোনার পর উদবিঘœ হয়ে পড়েন এবং ছুটে যান ওই নারীর কাছে, তার সাথে কথা বলে পূর্নবাসন করেন বাতেনের মোড় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পে। তার আর্থিক দূরঅবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য প্রশিক্ষণসহ ঋণ সহযোগিতার কথা বলেন তিনি।