ইলিশ পাওয়ার আশায় মেঘনা পাড়ের জেলেদের প্রস্তুতি
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১৫ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
মা ইলিশ নিরাপদে মিঠাপানিতে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে ১২ অক্টোবর থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় চলছে ইলিশ সব ধরণের মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা। চলবে ২ নভেম্বর দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত। এই সময়ে মাছ আহরণ থেকে বিরত থাকা চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের জেলেরা ব্যস্ত তাদের ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিয়ে। জেলেরা আশা করছেন অভিযান শেষ হলে ইলিশ পাবেন। কারণ অভিযানের পূর্বেও তারা ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পেয়েছেন।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকালে শহরের যমুনা রোড টিলবাড়ী, মোলহেড, সদর উপজেলায় পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর ও ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের মেঘনা পাড় এলাকায় গিয়ে দেখাগেছে জেলেদের মাছ ধরার প্রস্তুতি। জেলেরা তাদের জালগুলো প্রস্তুত করছেন।
ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের জেলে আবদুল মালেক জানান, যখন নদীতে মাছ আহরণ নিষেধ থাকে তখন তিনি জেলেদের জাল মেরামত করার কাজ করেন। ২ নভেম্বর থেকে আবার নদীতে নামবে জেলেরা তাই ভোর থেকেই জাল মেরামত করার কাজে ব্যস্ত। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি এখন আর নদীতে নামেন না। দৈনিক হাজিরায় জাল মেরামতের করেন।
পাশবর্তী রামদাসদী গ্রামের জেলে মো. আকবর খান জানান, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে অভিযান দিয়েছে, তা আমরা মানছি। আমরা নদীতে নামি নাই। এখন আল্লাহ যদি কিসমতে রাখে তাহলে ইলিশ পাব। আর না পেলে ঋণের মধ্যে থাকতে হবে।
আরেক জেলে মো. শাহজাহান জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছুদিন অবসরে ছিলাম। সরকার যে ২৫ কেজি করে চাল দিয়েছে তা পেয়েছি। তবে এই দিয়েত আমাদের সংসার চলে না। এখন আবার ইলিশ ধরার জন্য জালগুলো প্রস্তুত করছি। আশা করছি নদীতে ইলিশ থাকলে পাব। কারণ অভিযানের পূর্বেও বেশ কিছুদিন আমাদের এলাকার জেলেরা ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ পেয়েছে।
এদিকে মা ইলিশ সংরক্ষণের শেষ পর্যায়ে এক শ্রেনীর জেলেরা থেমে নেই। তারা প্রতিদিনই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ ধরছে। নৌ-পুলিশ, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে আটক হচ্ছে জেলেরা। জেলা-জরিমানা করা হলেও মানছে না জেলেরা। বেপরোয়া জেলেরা ক্ষুব্দ হয়ে অনেক সময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করছে। সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর সদরের বহরিয়া এলাকায় ইলিশ কেনাবেচার সময় হামলার শিকার হয় চাঁদপুর সদর মডেল থানার দুই পুলিশ সদস্য। এই ঘটনায় তিনজন আটক ও থানায় মামলা হয়েছে।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। অভিযানে গিয়ে এ পর্যন্ত আমাদের বেশকিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ইলিশ মাছ নিরাপদে ডিম ছাড়লে জেলেরাই আহরণ করবে। তাদেরকে প্রতি অভিযানের পূর্বেই সচেতন করা হয়, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা না মেনে অহরহ ইলিশ ধরতে নদীতে নেমে পড়েন জেলেরা।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, মা ইলিশ রক্ষায় জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৪১৫টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। মৎস্য আইনে নিয়মিত মামলা ও ৬২টি ভ্রাম্যমান আদালতে ২৮৪জন জেলেকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আমরা দিন ও রাতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। মা ইলিশ রক্ষা হলে জেলেদেরই লাভ হবে। তারাই পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ আহরণ করবে।