২১ পরিবারের ভিটা দখলের অপচেষ্টা
উখিয়ায় তিন হাজার ফলজ-বনজ গাছ কেটে সাবাড়
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৩২ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
কক্সবাজারের উখিয়ায় গত ৩২ বছর ধরে বসবাসকারি ২১ পরিবারকে উচ্ছেদ করে বসত ভিটা দখলের অপচেষ্টা চালিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ প্রভাবশালী চক্র। যার জের ধরে প্রায় ৫ একর জমি রোপিত ৩ হাজারের অধিক ফলজ ও বনজ গাছ কেটে সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। এসময় গাছ কাটতে বাঁধা দিলে মারধরে কলেজ শিক্ষার্থী সহ ৮ জন আহত হয়েছে। যদিও খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) ঘটনাস্থলে গেলে গাছ কাটা রেখেই পালিয়েছে চক্রটি।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপর থেকে বিকাল পর্যন্ত উখিয়া ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন ধইল্যাঘোনা এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে। বুধবার দুপুরে বনবিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাছগুলো জব্দ করে নিয়ে গেছে।
এতে আহত উখিয়া ডিগ্রী কলেজ শিক্ষার্থী কুলসুমা আকতার, ইয়াছিন আকতার রেখা, উন্মে সালমা, কামাল হোসেনকে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল উখিয়া ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন ধইল্যাঘোনা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এলোমেলোভাবে যত্রতত্রভাবে পড়ে আছে কাটা গাছ। আম, কাঁঠাল, লেবু, বরই, সুপারী, তেতুঁল সহ ফলজ ও বনজ গাছ গুলো বিভিন্ন আকারের।
এই ৫ একর জমিতে বসবাসরত পরিবারগুলোর প্রধান আবদুল মজিদ, শাহেদুল হক, মাহামুদুল হক, কামাল উদ্দিন, আবদুল সালাম, সাদ্দাম হোসেন, আবুল কাসেম, জুনাইদ, আমির হামজা, কামাল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মো. শাহেদ, মো. বেলাল, মাহবুব আলম, রফিক উদ্দিন, সৈয়দ হামজা, রোজিনা আকতার, বেলাল উদ্দিন, জাফর আলম, আবদুল জব্বার, মাহামুদুল হাসান। যারা পেশায় ইজিবাইক (টমটম) চালক, শ্রমিক-মজুর। গত ৩২ বছর ধরে সরকারি এই খাস জমিতে বসবাস করেন এই ২১টি পরিবার।
এসব পরিবারের দেয়া তথ্য মতে, ১৯৯১ সালে উখিয়া ডিগ্রী কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। ওই সময় কলেজ এলাকাটিতে বসবাস করতেন তাদের পূর্ব পুরুষরা। কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে ওই জায়গা থেকে পরিবারগুলো উচ্ছেদ করে পাশ্বর্বর্তী ধইল্যাঘোনা এলাকায় খাস জমিতে তাদের বসবাসে স্থান দেয়া হয়। এর পর থেকে ৩২ বছর ধরে তারা ঘরবাড়ী বেধেঁ গাছপালা রোপন করে বসবাস করে আসছে। সম্প্রতি এসব বসত ভিটা দখলের অপচেষ্টা শুরু করে একটি প্রভাবশালী চক্র। চক্রটি নানাভাবে তাদের বসত ভিটা সরকারি প্রয়োজনে ছেড়ে দেয়া কথা প্রচার করতে শুরু করে। সরকারি লোকজন আসলে এ জমি ছেড়ে দিতে রাজীও ছিলেন তারা। কিন্তু এর মধ্যে মঙ্গলবার দুপুরের পর স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) ইকবাল বাহারের নেতৃত্বে ৪০/৪৫ জন ব্যক্তি স্বশস্ত্র গিয়ে বেপরোয়াভাবে গাছ কাটতে থাকে।
এসময় এসব পরিবারের নারী সদস্যরা বাঁধা দিলে কয়েক দফা হামলায় উখিয়া ডিগ্রি কলেজ শিক্ষার্থী কুলসুমা আকতার সহ ৮ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীব বিকাল ৪ টার দিকে ঘটনাস্থলে গেলে গাছ কাটারত প্রভাবশালীরা পালিয়ে যায়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বুধবার সকালে বনবিভাগ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাছগুলো জব্দ করেন।
বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে ভ‚ক্তভোগী পরিবারের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারি কমিশনার ভ‚মি বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এতে ইউপি সদস্য ইকবাল বাহারের নেতৃত্বে মোহাম্মদ সাইফুল, দিলদার মিয়া, নুর মোহাম্মদ, আব্দুস ছালাম, মোহাম্মদ মুফিজ, বেলাল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম, নুর মুহাম্মদ, আব্দু শুক্কুর, ফকির আহমদ, মোহাম্মদ হাশেম, এহসান উদ্দিন সহ ৪০/৪৫ জন এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (মেম্বার) ইকবাল বাহার জানান, তার নেতৃত্বে গাছ কাটার খবরটি শতভাগই মিথ্যা। তবে ওই বসতভিটায় গাছ কাটা হয়েছে। গাছ কাটার খবর পেয়ে অন্যান্যদের মতো তিনিও ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিলেন। কারা এবং কেন এই গাছ কেটেছেন তিনি জানেন না।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। গাছগুলো জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩ পিকআপ গাছ বনবিভাগের অফিসে নিয়ে আসা হয়েছে। ঘটনাস্থলে আরও গাছ রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপের জন্য উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীবকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
তবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন উখিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সালাহ আহমেদ।
তিনি জানান, ওই জমি বা ভিটা সংলগ্ন ৬০ একরের বেশি সরকারি খাস জমি রয়েছে। যেখানে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম নিমার্ণের একটি প্রকল্প সরকারিভাবে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তবে এখনও সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহণের কোন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। প্রক্রিয়া শুরু হলে নোটিশ প্রদান করে বসবাসকারি আগে অবহিত করে প্রয়োজনীয় পূর্ণবাসনের উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার গাছ কেটে সাবাড় করা এবং বসবাসরতদের মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে। কারা এ ঘটনা সংঘটিত করেছে এখনও নিশ্চিত না। এ ব্যাপারে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।