বীজ আলুর দাম বৃদ্ধি

দিনাজপুরে আলু চাষে খরচ বেড়েছে হেক্টর প্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:০৩ | অনলাইন সংস্করণ

  বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

সরকারি, বেসরকারি ও কৃষক পর্যায় তিন স্তরেই বেড়েছে আলু বীজের দাম। এবার প্রতি কেজি আলু বীজ সরকারিভাবে ৪৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সার, কীটনাশক, হালচাষ ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায় প্রতি হেক্টরে আলু উৎপাদনে খরচ বাড়বে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

এর আগে সরকারি যেসব কোম্পানিগুলো বীজ আলু বিক্রি করেছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, এবার তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।অপরদিকে দিনাজপুর জেলায় এবার চাহিদার মাত্রা ৪ শতাংশ সরকারি আলুর বীজ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তাও আবার আনতে হবে অন্য জেলা থেকে। এতে বাড়বে পরিবহন খরচ। এ নিয়ে ডিলারদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা এক জেলার ডিলারকে আরেক জেলায় বরাদ্দ দেওয়ার নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

দিনাজপুর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুরে ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়ে থাকে। এই ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ৭৫ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন বীজ আলু প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৮৬ মেট্রিক টন। যা চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশ। এছাড়া কেজি প্রতি জাত ভেদে এর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত।

জানা যায়, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় এই তিন জেলায় তিনটি হিমাগার রয়েছে বীজ বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দিনাজপুর বিএডিসির আঞ্চলিক অফিসের অধীনে। এরমধ্যে দিনাজপুরের নশিপুর হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১১০০ মেট্রিক টন, ঠাকুরগাঁও হিমাগারের ধারণক্ষমতা ১০০০ মেট্রিক টন ও পঞ্চগড় হিমাগারের ধারণক্ষমতা ২০০০ মেট্রিক টন। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের আলু বীজ বিভাগ সারাদেশের বীজ আলু সমন্বয় করে জেলা ওয়ারী বরাদ্দ দিয়ে থাকে। সেই হিসাবে বিএডিসি বীজ আলু ডিলারদের মাধ্যমে বিপণন করে থাকে।কৃষি অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দিনাজপুর জেলায় সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে চাহিদার মাত্রা ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বীজ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ হয়ে থাকে। বাকি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বীজ আলু কৃষকরা নিজেরাই সংরক্ষণ করে রাখেন।গত বছর সরকারিভাবে আলুর বীজ বিক্রি করা হয়েছিল ডিলার পর্যায়ে ২৭-৩০ টাকা কেজি, আর কৃষক পর্যায়ে ২৮-৩৩ টাকা ৫০ পয়সা কেজি। তবে চলতি মৌসুমে সেই আলুর সরকারিভাবে বিক্রয় মূল্য দেওয়া হয়েছে ডিলার পর্যায়ে ৪৭-৫২ টাকা কেজি, আর কৃষক পর্যায়ে ৪৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজি।দিনাজপুর বিএডিসির বীজ বিপণন বিভাগের উপ-পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, এবার আলুর দাম বেশি। এর থেকে কম দামে থাকলে এটি খাদ্য হিসেবে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এতে করে বীজ আলু সংকট পড়ার সম্ভাবনা থাকে।

আলু চাষীরা জানান, সরকারি বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাও আবার গতবারের চেয়ে দাম অনেক বেশি। বাধ্য হয়ে চড়া দামে বাইরে থেকে বীজ আলু কিনেছেন। সার ও কীটনাশকের দাম বেশি। জমি চাষ ও শ্রমিকদের মজুরিও বেশি হওয়ায় একরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেশি খরচ হবে। বৃষ্টির কারনে  আলু আবাদ এইবার পিছাই গেইছে।  আল্লায় জানে এইবার কী হবে।

এদিকে ডিলাররা জানান,  এবার জেলায় যে ৩ হাজার ৮৬ মেট্রিক টন আলুবীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা দিনাজপুরের নশিপুর হিমাগার থেকে উত্তোলন করা যাবে না। দিনাজপুরের ডিলারদেরকে অন্য জেলার বিএডিসির হিমাগার থেকে বীজ আলু উত্তোলন করে আনতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। এতে করে ডিলাররা লোকসানের মধ্যে পড়তে পারেন। কারণ ডিলারদের বিক্রয় মূল্য সরকার নির্ধারিত। আবার লোকসান থেকে বাঁচতে কোনো কোনো ডিলার বেশি দামে বীজ আলু বিক্রি করতে গিয়ে বিপদে পড়তে পারেন। ডিলারদের দাবি তাদেরকে দিনাজপুরের নশিপুর হিমাগার থেকে বীজ আলু উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হোক।

দিনাজপুরের বীজ আলুর ডিলার আহসান হাবিব, সোহরাফ আলী ও ইউসুফ আলী বলেন, দিনাজপুরের ডিলারদেরকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের বাইরে ১৮টি জেলা থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে দিনাজপুর জেলার নশিপুর ও ঠাকুরগাঁও হিমাগারের আলু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রংপুর, বগুড়া ও খুলনা অঞ্চলের ডিরারদেরকে। এতে করে ডিলারদের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। সে কারণে নির্ধারিত দামে বীজ আলু বিক্রি করলে তাদের লোকসানে পড়তে হবে। তাই তারা এই পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান।দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান বলেন, আমরা পরিকল্পিতভাবে আলুচাষের পর সেই জমিতে কৃষক যাতে সরিষা চাষ করতে পারে সেজন্য আগাম জাতের ধানচাষে কৃষককে উৎসাহিত করেছিলাম। সফলও হয়েছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে এবার দিনাজপুরে আগাম আলু চাষ কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। তবে দুই  সপ্তাহের মধ্যে আলু বীজ বপন শেষ হবে।