ইলিশ নয়, এবার পাঙ্গাসের আশায় পদ্মা-মেঘনায় জেলেরা
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৫১ | অনলাইন সংস্করণ
শওকত আলী, চাঁদপুর
ইলিশের প্রজনন রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ছুটছেন জেলেরা। তবে ইলিশ নয়, এবার পাঙ্গাসের আশায় নদীতে চষে বেড়াচ্ছেন জেলেরা।
বর্তমানে ইলিশের চাইতে পাঙাশের দাম বেশী পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন জেলারা। ছোট সাইজের ইলিশের দাম কম হওয়ায় বড় পাঙাশ মাছে লাভ বেশি জেলেদের। কারণ, বড় সাইজের প্রতিটি পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে জেলেরা নদীতে নেমেছেন। দুপুরে চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেল অধিকাংশ আড়তেই বড় সাইজে পাঙাশ মাছ। ইলিশ থাকলেও সাইজে খুবই ছোট ও কম। বড় সাইজের ইলিশ পাওয়া গেলেও ডিম ছেড়ে দেওয়ায় মাছের ওজন এখন কম এবং সে মাছের আসল স্বাদও পাওয়া যাবেনা বলে জেলেরা জানান।
হরিণাঘাটে কিছু সময় অবস্থান করে দেখা গেছে, আড়তগুলোতে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষণা কাজে নিয়োজিত লোকজন জেলেদের ধরে আনা ইলিশের আকার-আকৃতি পরীক্ষা করছেন। জেলেদের ধরে আনা সেসব বড় সাইজের অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম নেই। আবার অনেক ছোট সাইজের ইলিশের পেটেও ডিম আছে। তবে ওই সাইজের ইলিশের সংখ্যা কম। এসবই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন গবেষকরা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে হরিণা ফেরিঘাটের মৎস্য আড়ত ১২ অক্টোবর থেকে গতকাল ২ নভেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত বন্ধ ছিল। রাত ১২টার পর থেকে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কেনাবেচা শুরু হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এই ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল শেখ বলেন, ভোর থেকেই জেলেরা আড়তে বেশিরভাগ পাঙাস মাছ নিয়ে আসছেন। কোনো কোনো জেলে নিয়ে এসেছেন বাঘাইড়সহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ। আইড় ও পাঙাশ মাছের দাম কাছাকাছি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রতিটি পাঙাসের ওজন কমপক্ষে ১০-১৫ কেজি। তবে ছোট সাইজের পাঙাশের দাম খুবই কম।
ছোট নৌকা নিয়ে ভোর ৪টায় নদীতে নেমেছেন উত্তর হরিণা গ্রামের জেলে শরীফসহ আরও ৩ জেলে। সকাল ১০টায় ঘাটে এসেছেন ইলিশ বিক্রি করতে। ৩ হালি ইলিশ বিক্রি করেছেন ১৪০০ টাকায়। তবে তাদের জ্বালানি খরচ হয়েছে প্রায় ৭০০ টাকা। দুপুরের পর আবার নামবেন।
গোল্টিজাল দিয়ে মাছ ধরেন সদরের হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের আল-আমিন ও জহির রাঢ়ী। আল-আমিন জানান, মধ্যরাতে তারা নেমেছেন মেঘনায়। প্রতি নৌকায় কমপক্ষে ১০ জন জেলে থাকেন। একবার নদীতে নামলে খরচ হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা। ইলিশ খুবই কম পাওয়া যায়। পাঙাসের আশায় নদীতে নেমেছেন। কারণ, গোল্টিজালে ইলিশ, পাঙাশসহ সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়।
জহির রাঢ়ী বলেন, অভিযানের সময় এক শ্রেণীর জেলে নিষেধাজ্ঞা মানেননি। তারা অবাধে ইলিশ ধরেছেন। এখন অভিযান শেষ হওয়ায় হাজার হাজার জেলে নদীতে। ভাগ্য ভালো হলে ইলিশ কিংবা পাঙাশ পাওয়া যায়। মধ্যরাতে নেমেছি। আবার দুপুরের পরে নামব।
একই ধরনের কথা জানালেন ওই গ্রামের জেলে খলিল গাজী ও হান্নান ছৈয়াল। সব জেলেরাই এখন পাড়ে এসে জাল পরিষ্কার ও পরবর্তীতে নদীতে নামার জন্য প্রস্তুত করছেন।
হরিণাঘাটের প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম সৈয়াল বলেন, ভোর থেকেই আড়তে বসে আছি। আমার যেসব জেলে আছে তারা এখনো আসেননি। তবে ইলিশের দাম বাড়েনি। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। ছোট সাইজের ইলিশের হালি ৫০০-৫৫০ টাকা। ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ খুবই কম। ছোট এবং বড় সাইজের ইলিশই বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, নদীতে পানি কমেছে। ২২ দিনের অভিযানও শেষ। কী পরিমাণ ইলিশ ডিম ছেড়েছে তা মৎস্য বৈজ্ঞানিকদের গবেষণার তথ্য বের হলে জানা যাবে। তবে ইলিশ মাছ ১২ মাসই ডিম ছাড়ে। জেলা টাস্কফোর্স ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য গত ২২ দিন সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে।