ঢাকা ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঈশ্বরদীতে শত শত চালকল বন্ধ

ঈশ্বরদীতে শত শত চালকল বন্ধ

উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চালের মোকাম ঈশ্বরদীতে অটোরাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে শত শত হাসকিং মিল বন্ধ হয়ে গেছে। এরইমধ্যে খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ না করায় ঈশ্বরদীর প্রায় পাঁচ শত চালকল মালিক সরকারের কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে।

একসময়ে হাসকিং মিলের মালিক, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের পদচারণায় মুখরিত থাকত জয়নগরের আইকে রোড এলাকা। অটোরাইস মিলের দাপটে টিকতে না পেরে হাসকিং মিলের বেশির ভাগই এখন বন্ধ। কোনো কোনো মিল মালিক চাতালে গাড়ির গ্যারেজ ও অন্য কাজের জন্য ভাড়া বসিয়েছেন। এসব চাতালে কর্মরত প্রায় ২০ সহস্রাধিক শ্রমিক জীবিকার তাগিদে পেশা বদলেছেন।

ঈশ্বরদী চাল কল মালিক গ্রুপ জানায়, ১০ বছর আগে ঈশ্বরদীতে প্রায় ছয় শতাধিক তালিকাভুক্ত হাসকিং মিল চালু ছিল। এর বাইরেও আরও প্রায় চার শতাধিক মিল-চাতাল গড়ে ওঠেছিল। এখন সর্বসাকুল্যে শতাধিক মিল চালু আছে। বাকি মিল-চাতাল বন্ধ। যেগুলো চালু রয়েছে এগুলোর অবস্থা নাজুক। ব্যাংক ঋণ ও দায়দেনায় এসব মিল মালিকরা জর্জরিত। হাসকিং মিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। তারা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অনেকেই পেশা বদল করেছেন।

এদিকে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঈশ্বরদীতে ১৭টি অটোরাইস মিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অটোরাইস মিলে উৎপাদিত চালের উৎপাদন খরচ কম আর হাসকিং মিলে বেশি। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি মজুরি বৃদ্ধি এবং ধান ও চালের দামে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় একে একে বন্ধ হচ্ছে হাসকিং মিল। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষকদের যেমন ধান উৎপাদনের প্রণোদনা—সুবিধা প্রদান করা হয়, তেমনি চালকল মালিকদের প্রণোদনার দাবি জানিয়েছেন হাসকিং মিলের মালিকরা।

মিল মালিকরা জানান, নব্বইয়ের দশক থেকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চালের মোকাম হিসেবে পরিচিত ছিল ঈশ্বরদীর জয়নগর মোকাম। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান এনে হাসকিং মিলে চাল উৎপাদন করতেন। পৌর এলাকার ভেলুপাড়া হতে পাকশী ইউনিয়নের রূপপুর পর্যন্ত আইকে রোড, বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে বেশির ভাগ মিল ও চাতাল ছিল। এছাড়াও আওতাপাড়া, ছিলিমপুর, দাশুড়িয়া, মুলাডুলিসহ পুরো উপজেলা জুড়ে সহস্রাধিক মিল-চাতাল গড়ে ওঠে। চাল বেচাকেনার জন্য গড়ে উঠেছিল শতাধিক রাইস এজেন্সি। এসব রাইস এজেন্সির মালিকরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন শহরে চাল সরবরাহ করা করত। ২০১০ সালের পর অটোরাইস মিল স্থাপন শুরু হলে ধীরে ধীরে বন্ধ হতে থাকে হাসকিং মিল। লোকসানে পড়ে মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা হয়েছেন নিঃস্ব।

বিমানবন্দর সড়কের চাতাল মালিক শরিফ উদ্দিন বলেন, অটো রাইস মিলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হাসকিং মিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায় লোকসানের ফলে তারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করতে পেরে কেউ কেউ ঋণখেলাপি হয়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন।

চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি জুলমত হায়দার বলেন, ঈশ্বরদীতে একসময়ে বিপুল হাসকিং মিল থাকলেও এখন কমে ১০০-তে দাঁড়িয়েছে। মিলমালিকরা পুঁজি হারিয়েছেন। মিলের যন্ত্রাংশ ও জমি বিক্রি করে ব্যাংক কেউ কেউ ঋণ শোধ করেছেন। ধান কিনে চাল উৎপাদন করতে হাসকিং মিলে ৮ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। অটোরাইস মিলে দুই-এক দিনের মধ্যে চাল উৎপাদন করে বাজারজাত হয়। তাদের উৎপাদন খরচও অনেক কম। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাচ্ছে না।

পাবনা জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি ফজলুর রহমান মালিথা বলেন, ধান ও চালের দামে অসামঞ্জস্যতার কারণে খাদ্যগুদামে সরকারনির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ না করায় পাঁচ শতাধিক চালকল কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে পুঁজি হারিয়ে মিল মালিকরা মিল বন্ধ করে দিয়েছে।

ঈশ্বরদী,চালকল,বন্ধ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত