ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তৃতীয় দফা অবরোধে নিরাপত্তা জোরদার

পেট্রোল বোমা ঠেকাতে রাস্তায় পুলিশি তল্লাসী

পেট্রোল বোমা ঠেকাতে রাস্তায় পুলিশি তল্লাসী

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকে তৃতীয় দফার সর্বাত্মক অবরোধ শুরু হয়েছে আজ বুধবার ভোর থেকে। ৪৮ ঘণ্টার এই কর্মসূচিতে সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে দলগুলোর পক্ষ থেকে। এদিকে কক্সবাজারের উখিয়ায় গুলিবিদ্ধ বিএনপি নেতা জাগির হোসেনের মৃত্যুর ঘটনার জেরে বুধবার (৮ নভেম্বর) কক্সবাজার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা পূর্ণদিবস হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জেলা বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান ছিদ্দিকী হরতালের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তবে বুধবার সকাল থেকে কয়েকদফা বিএনপির কয়েকজন দায়িত্বশীল নেতা মুঠোফোনে কল করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি। যার কারনে কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা জানিয়েছেন, বুধবার রাতে টেকনাফে একজন বিএনপির নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই নেতার দাবি মতে, কৌশলে জেলাজুড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে রয়েছে।

অপরদিকে কেন্দ্রীয় ঘোষিত ৪৮ ঘন্টার তৃতীয় দফা অবরোধের পাশাপাশি কক্সবাজার জেলা বিএনপির সকাল-সন্ধ্যা পূর্ণদিবস হরতালের নামে নাশকতা ঠেকাতে তৎপর রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনী। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও মহাসড়ক, উপসড়কে ছোট যানবাহন চলাচল রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে কক্সবাজার শহর থেকে উপজেলা সমুহে সকল প্রকার যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলছে।

কয়েকজন পরিবহন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন, কক্সবাজার থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি। তবে নানা সূত্র মতে, সকালে মহাসড়কে কিছু বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।

বুধবার ভোরে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট ও মহাসড়কে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিটি সড়কে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবির টহল ও অবস্থান দেখা মিলেছে। টহল দিতে দেখা গেছে নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এছাড়া কক্সবাজার চট্রগ্রাম মহাসড়কে 'পেট্রোল বোমা' নামে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ রোধে চলাচলরত মোটরসাইকেল সহ অন্য যানবাহনে সন্দেহজনক লোকজনকে তল্লাসী করছে পুলিশ।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী জানিয়েছেন, কক্সবাজারের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে। কিছু লোকালবাস সহ বিছিন্ন ভাবে মানুষ চলাচল করছে। তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে রাতে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাস গুলো যাতে নিরাপদে পৌঁছতে পারে সে জন্য জেলা পুলিশের বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশ সকল প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গুরুত্ব পয়েন্টে পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে টহল। র‌্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও মাঠে রয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার আশংকা বা নাশকতার চেষ্টার খবর পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কুমিল্লা রিজিয়ন চট্টগ্রাম জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নাসিম খান বলেন, হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের এসপি মহোদয়ের নির্দেশে কক্সবাজার চট্রগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত ছোট বড় যানবাহন গুলো চলাচলের ক্ষেত্রে বিশেষ নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশের পেট্রোল টিম সতর্ক অবস্থান রয়েছে। তিনি আরো বলেন, নিরাপদে যাতে যানবাহন চলাচল করতে পারে সেই ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের দায়িত্বশীলদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মো. রাসেল জানান, উখিয়া-টেকনাফের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রয়েছ। মাঠে টহলে রয়েছে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রটের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম। সরকারি-বেসরকারি অফিস গুলো খোলা, স্বাভাবিক রয়েছে যান চলাচল।

টেকনাফ মডেল থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ বলেন, টেকনাফে পুলিশ সতর্ক অবস্থান রয়েছে।নিবার্হী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্ব পুলিশের পৃথক কয়েকটি টিম সবধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করছে।

পেকুয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ওমর হায়দার বলেন, বিএনপি- জামায়াতের অবরোধ ও হরতালে পেকুয়ায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্তক অবস্থায় রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট সহ পুলিশের পৃথক টিম মাঠে রয়েছে।

রামু থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু তাহের দেওয়ান বলেন, হরতাল অবরোধের নামে নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। এই পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। পুলিশের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছে।

মহাসড়কের চকরিয়া অংশে দায়িত্বরত চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার ইনচার্জ খোকন কান্তি রুদ্র জানান, কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশ সতর্ক অবস্থান রয়েছে। পুলিশের পৃথক টিম মাঠে দায়িত্বপালন করছে। তার দাবি মতে, বিশেষ করে হয়তাল বা অবরোধের সময় ছদ্মবেশ এ মোটরসাইকেল যোগে চলাচল কালে কিছু দূস্কৃতকারী হঠাৎ যানবাহনে 'পেট্রোল বোমা' নিক্ষেপ করে দ্রুত ছিটকে পড়ে। যার কারনে সন্দেহ জনক লোকজনকে তল্লাসী করা হচ্ছে।

এদিকে, বুধবার ভোর থেকে কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড়স্থ জেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে জড়ো হচ্ছেন কক্সবাজার পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলামের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা। সেখানে শান্তি সমাবেশ ও অবরোধ বিরোধি বিক্ষোভ মিছিল বের করার কথা রয়েছে। শহীদ সরণীস্থ কক্সবাজার জেলা বিএনপির কার্যালয় সকাল থেকে তালাবদ্ধ থাকলেও অবস্থান করতে দেখা গেছে পুলিশের একটি দল।

প্রসঙ্গত, বুধবার (৮ নভেম্বর) ভোর ৬টায় শুরু হওয়া অবরোধ চলবে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত। গত সোমবার বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

অগ্নিসংযোগ,তল্লাসী
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত