কল্যাণ বিহারী দাস ছাত্রলীগের জনপ্রিয় নেতা। টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক। ১৯৮১ সালের ৯ নভেম্বর প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হন। ওই বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তায় আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভাপতি শেখ হাসিনা কল্যাণ বিহারী দাসের বাড়িতে আসেন। তার বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সমবেদনা জানান। প্রতিশ্রæতি দেন ‘আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে খুনীদের বিচার করবেন’। পরিবারকে সহযোগিতা করবেন। তারপর এক এক করে কেটে গেছে ৪২ বছর। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থেকেছে ২০ বছর। দীর্ঘ ৪২ বছরেও কল্যাণ বিহারী দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।
বৃহস্পতিবার(৯ নভেম্বর) কল্যাণ বিহারী দাসের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবার ও ছাত্রলীগ নেতারা। জেলা ছাত্রলীগ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় ওই ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। কল্যাণ বিহারী দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। ওই সভায় টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান সভাপতিত্ব করেন।
নিহতের পরিবার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা জানান, রাস্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডক্টর কামাল হোসেনের পক্ষে ১৯৮১ সালের ৯ নভেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলার যুগনী হাটে একটি প্রচার মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন কল্যাণ বিহারী দাস। ওই সময় বিএনপির চিহ্নিত সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে কল্যাণ বিহারী দাসকে নির্মমভাবে খুন করে। ওই হত্যাকাণ্ডে বিএনপির সদ্য সাবেক ধর্মমন্ত্রী আব্দুর রহমানের ভাতিজা ও জামাতা লাল মাহমুদ নেতৃত্ব দেয়। ঘটনার দিনই অভিযুক্তদের নামোল্লেখ করে টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি সরকারের প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনরা মামলার আসামি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন নেওয়া হয়। এরপর ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম বাদি হয়ে আদালতে ওই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে একটি নালিশি মামলা দায়ের করেন। আদালত ঘটনার সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহনের পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করে। প্রভাবশালী আসামি পক্ষ ওই মামলা বাতিলের জন্য টাঙ্গাইলের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন করলে আদালত শুনানী শেষে আসামিদের আবেদন নাকচ করে দেন।
পরবর্তীতে আসামিরা জেলা ও দায়রা জজের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করলেও হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানীর পর তাদের রিভিশন খারিজ করে দেন। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য নি¤œ আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু এরশাদ সরকারের আমলে প্রভাবশালী আসামিরা মামলার বিচারকার্য বন্ধ করার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। তাদের প্রভাবে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক বিবেচনায় ওই হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে দেয়। ফলে এখনও কল্যাণ বিহারী দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। কল্যাণ বিহারী দাসের বড় ভাই প্রবীণ সাংবাদিক অধ্যাপক বিমান বিহারী দাস জানান, সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনা যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি দ্রুত এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
নিহত কল্যাণ বিহারীর বড় বোন টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শেফালী দাসও অনুরূপ দাবি করেন।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম জানান, দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তিনি কল্যাণ বিহারী দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছিলেন। সে সময় স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতায় থাকায় মামলাটি এগোতে পারেনি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলাটি ফৌজদারী কার্যবিধি নির্ধারিত ধারা অনুসারে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ফলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কল্যাণ বিহারী দাস হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।