মজুরি বোর্ড ঘোষিত নুন্যতম মুজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা প্রত্যাখান করে আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও ভাংচুরের ঘটনায় শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় শতাধিক পেশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
শনিবার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার নরসিংহপুর, ইউনিক, শিমুলতলা, জামগড়া, ছয়তলা, নিশ্চিন্তপুর, কাঠগড়া, আমতলা, বড় রাঙ্গামাটিয়া সহ বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পোশাক কারখানার মূল ফটকে বন্ধের নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়েছে।
টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের দি রোজ ড্রেসেস লিমিটেড, দ্যাটস্ ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, অনন্ত গার্মেন্টস লিমিটেড, হা-মীম, শারমীন, পাইওনিয়ার লিমিটেড, বানদো ডিজাইন লিমিটেড এবং জিরাবো-বিশমাইল সড়কের এআর জিন্স প্রডিউসার লিমিটেড, ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আগামী এ্যাপারেল লিমিটেড, ক্রোসওয়্যার লিমিটেড, সেইন এ্যাপারেলস লিমিটেড, টেক্সটাউন লিমিটেড, অরনেট নীট গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ প্রায় শতাধিক পোশাক কারখানার গেটে কারখানা বন্ধের নোটিশ দেখা গেছে।
শারমিন গ্রুপের ইশায়াত এ্যাপারেলস লি: কারখানার গেটে টাঙ্গানো নোটিশে বলা হয়, গত ৩০ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ৯ অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত এই কারখানার শ্রমিকগণ বে-আইনীভাবে কাজ বন্ধ রেখে সকাল বেলা হাজিরা দিয়ে বের হয়ে চলে যায়, এছাড়াও শ্রমিকগণ কারখানার অভ্যন্তরে এবং বাহিরে ব্যাপক ভাংচুর, মারামারি, ভয়ভীতি প্রদর্শন সহ অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যাতে কোম্পানির সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি ও আর্থিক ক্ষতিসাধনও হয়। যদিও জাতীয় উন্নয়ন ও ফ্যাক্টুরীর উৎপাদনের স্বার্থে অনূকূল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য দুই দিন স্ব-বেতনে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তথাপিও তারা ফ্যাক্টুরীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারামারি ও ভাংচুর অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে তাদের অত্যান্ত বিনয়ের সাথে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কলকারখানা অধিদপ্তর, বিজিএমইএ এবং কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদেরকে বার বার কারখানায় কাজে যোগদান করার অনুরোধ করা সত্বেও শ্রমিকগণ কাজে যোগদান করে নাই, বরং বে-আইনী ধর্মঘট চালিয়ে যায়। যা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ মোতাবেক অবৈধ ধর্মঘটের সামিল। এমতাবস্থায়, বে-আইনী ধর্মঘটের কারণে কোনক্রমেই প্রতিষ্ঠনা পরিচালনা করা সম্ভব নয় বিধায়, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩ (১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হল যা, ১১/১১/২০২৩ থেকে কার্যকর হবে এবং এটি সকলের জন্য প্রযোজ্য।
ডুকাটি অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার গেটে টাঙ্গানো নোটিশে বলা হয়, গত ৮ নভেম্বর কারখানায় বহিরাগত হামলা হওয়ার কারণে বিকেল তিনটার দিকে কারখানা সাধারন ছুটি ঘোষনা করা হয়। তবে পরদিন ৯ অক্টোবর শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশ করে কাজ বন্ধ রাখেন। কারখানার কতৃপক্ষ বাধ্য হয়ে সকাল ১১ টার দিকে কারখানা ছুটি ঘোষণা করেন। কিন্তু শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ না করে বিভিন্ন অবৈধভাবে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করতে থাকেন। এতে করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং কারখানার অভ্যন্তরে আইনশৃঙ্খলা চরম অবনতি ঘটে। কতৃপক্ষ বার বার অনুরোধ করা সত্বেও শ্রমিকরা শান্ত না হয়ে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শ্রমিকরা। শ্রমিকদের এমন আচরণ শ্রম আইন অনুযায়ী অবৈধ ধর্মঘটের আওতায় পড়ে। এমতাবস্থায় কারখানা কতৃপক্ষ বাধ্য হয়ে নিরাপত্তাহীনতা ও অবৈধ ধর্মঘট করার কারনে ৯ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ শ্রমআইন ২০০৬ সালের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিংবা কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে তা নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে।
আগামী এ্যাপারেল্স লিমিটেড কারখানার নোটিশে বলা গত ৩১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকরা কারখানায় এসে ফেইস পাঞ্চ করে। তারা কোন প্রকার আলোচনা ছাড়াই উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রেখে চিৎকার চেচামেচি করে। পরে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পর কারখানা ত্যাগ করে বাহিরে চলে যায়। এতে করে নিরুপায় হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষনা করেন। কিন্তু বেতনের আগ পর্যন্ত ৫ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজ চালিয়ে যায়। বেতন হয়ে গেলে ৮ নভেম্বর আবারও একই পরিস্থিতির সৃষ্টি করে শ্রমিকরা। সাধারন শ্রমিকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে মিছিল করতে করতে কারখানা গেইটে চলে যায়। এমতাবস্থায় আবারও কর্তৃপক্ষ কারখানা ছুটি দিতে বাধ্য হয়। তাই কারখানা কর্তৃপক্ষ কারখানার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে ৯ নভেম্বর কারখানা বন্ধ রাখে। এমন কার্যকলাপ বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ মোতাবেক প্রতিষ্ঠানে উচ্ছৃঙ্খলতা ও বে-আইনি ধর্মঘটের শামিল। তাই কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ১১ নভেম্বর হইতে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর ১৩(১) ধারা মোতাবেক অনির্দিষ্ট কালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষনা করিল।
কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ার বিষয়টি শ্রমিকদের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েও জানিয়ে দিচ্ছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, শ্রমিক আন্দোলনের মুখে প্রায় শতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। আমাদের কারখানা কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে কোন চিঠি দেয়নি। তবে বিভিন্নভাবে আমরা বন্ধের খবর পেয়েছি। এছাড়া যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় অন্যান্য দিনের মত আজও আমাদের পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।