শেরপুরের নকলায় বড়শি দিয়ে মাছ শিকার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (১০ নভেম্বর) দুপুর থেকে শুরু হয়ে শনিবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার টালকী ইউনিয়নের বড়বিলা বিলে এ প্রতিযোগিতা চলে।
এই প্রতিযোগিতায় রাজধানী ঢাকার সাভার এলাকার শিকারিসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে শৌখিন মৎস্য শিকারিরা অংশ নেয়। এতে নিদৃষ্ট সময়ের মধ্যে যে শিকারি সর্বোচ্চ ওজনের তথা সবচেয়ে বড় মাছ বড়শি দিয়ে শিকার করেন এমন তিন জনকে বড়বিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষ থেকে আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান করা হয়।
দিনশেষে সকল শিকারিদের শিকার করা বড় মাছটি ডিজিটাল নিক্তর মাধ্যমে ওজন করে সর্বোচ্চ ওজনের তথা সবচেয়ে বড় মাছ শিকারি তিনজনকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। পরে প্রথম বিজয়ীর হাতে পুরষ্কার হিসেবে ২৪ ইঞ্চি এলইডি নতুন টেলিভিশন, দ্বিতীয় বিজয়ীর হাতে পুরষ্কার হিসেবে একটি স্মার্ট মোবাইল ও তৃতীয় বিজয়ীর হাতে একটি সাধারণ বাটন মোবাইল পুরষ্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয়।
এউপলক্ষে বড়বিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের আয়োজনে বড়বিলা বিলের পাড়ে বড়বিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টালকী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
স্থানীয় হুরমুজ আলীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও বড়বিলা বিলের ইজারাদার মো. আনোয়ার হোসেন, নকলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু শিক্ষা-গবেষণা পরিষদ নকলা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোশারফ হোসাইন, বড়বিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক রফিক মিয়া।
সর্বোচ্চ ওজনের তথা সবচেয়ে বড় মাছ শিকারি হিসেবে নকলা উপজেলার টালকী ইউনিয়নের মজিদবাড়ী এলাকার আজিজুল হক ও পশ্চিম পোয়াভাগ এলাকার আপেলের হাতে ২৪ ইঞ্চি এলইডি নতুন টেলিভিশন, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওজনের মাছ শিকারি টালকী ইউনিয়নের ফুলপুর এলাকার আলী আকবরের হাতে নতুন একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন ও তৃতীয় সর্বোচ্চ ওজনের মাছ শিকারি রাজধানী ঢাকার সাভারের মো. নাজিম উদ্দিনের হাতে একটি সাধারণ বাটন মোবাইল পুরষ্কার হিসেবে তুলেদেন অতিথিবৃন্দ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বড়বিলা বিলের পানিতে ও পাড়ে অন্তত ২০টি মাচা করা হয়েছে। প্রতিটি মাচায় সর্বনিম্ন তিনজন থেকে সর্বোচ্চ সাতজন বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সুযোগ পেয়েছেন। প্রতি মাচার ফি নির্ধার ছিলো ১০ হাজার টাকা করে।
বিলের পাড় ঘুরে নানা বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের আমেজ শুরু হয়ে যাওয়ায় বড়শিতে তেমন বড় মাছ ধরা পড়েনি। শীতের কারনে মাছ ঘুরাঘুরি করে খাবার খেতে চায়না। তাই বড় বড় মাছ কম ধরা পড়েছে। বেশি ধরা পরেছে মাঝারি ও ছোট আকৃতির মাছ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মৎস্য শিকারি জানান, তারা যে আশা নিয়ে বড়বিলাাতে বড়শি দিয়ে মাছ শিকারে এসেছিলেন, তা পূরণ হয়নি। হালকা শীতের কারনে মাছ কম ধরা পড়েছে। এতে তাদের খরচ না উঠলেও বেশ আনন্দ হয়েছে বলে তারা জানান।
বড়বিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের ইজারা নেওয়া বড়বিলাতে ১২ কেজি থেকে ২০ কেজি ওজনের পুরাতন রুই, কাতলা, মৃগেল ও ব্রিগেড মাছ রয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞ কোন শিকারি প্রায় দেড় দিনেও কেন বড় মাছ ধরতে পারলেননা তা বুঝতেছিনা।উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি ও বড়বিলা বিলের ইজারাদার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, নৈসর্গিক ও মনোরম পরিবেশে বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের আনন্দ পেতে ও অন্যকে আনন্দ দিতেই প্রায় প্রতি বছর বড়বিলা বিলে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
সাভার থেকে আগত বড়শি দিয়ে মাছ শিকারে আসা শৌখিন মাছ শিকারি মো. নাজিম উদ্দিন জানান, দেশের যেকোন জায়গায় বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের প্রতিযোগিতার আয়োজন করলে তিনি সেখানে ছুটে যান। এর কারন হিসেবে তিনি বলেন- আমার ভালোলাগা প্রিয় শখ গুলোর মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা অন্যতম। এই ভালোলাগা থেকেই জানার পরে সুদূর সাভার থেকে নকলায় ছুটে এসেছি বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করতে। শখের ভালোলাগার কোন বিষয়ে লাভ-লোকসানের হিসাব চলনা বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্য এক মাছ শিকারি আলী আকবর বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে খুব আনন্দ পাই। মাছ ধরা আমার কোনো পেশা নয়, এটি শুধু শখ। বড়শিতে মাছ ধরা পড়লে তখন খুব আনন্দ লাগে। এ জন্যই এই বিলে মাছ ধরতে এসেছি। আগামীতে এইবিলে বড়শি দিয়ে মাছ শিকারের জন্য আরো বড় করে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে বলে আয়োজকরা জানান।
এসময় বড়বিলা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সদস্য ফরিদ মিয়া, হুরমুজ আলী, জয়দার আলী, রমজান আলী, সোহরাব আলী, এরশাদ আলী, আবুল বাশার, এনামুল হক ও আবু বক্করসহ সংগঠনটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগন, দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আগত শৌখিন মৎস্য শিকারিগন, নকলা প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকগন, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় মৎস্যজীবীসহ বিভিন্ন পেশা-শ্রেণীর জনগন উপস্থিত ছিলেন।