ঢাকা ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রমেক হাসপাতালে দুই বছরেও শুরু হয়নি পূর্ণাঙ্গ বার্ণ ইউনিট স্থাপন

রমেক হাসপাতালে দুই বছরেও শুরু হয়নি পূর্ণাঙ্গ বার্ণ ইউনিট স্থাপন

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল উত্তরাঞ্চলের অগ্নিদগ্ধ-পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় ‘১০০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ বার্ণ ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্পের কাজ দুই বছরেও শুরু হয়নি। ২০২৫ সালের জুনে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

রমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হিমালয়ের কাছাকাছি থাকা উত্তরাঞ্চলের শীতের প্রকোপ বেশি। তাই উত্তরের ৮ জেলার অস্বচ্ছল মানুষেরা শীত নিবারনে খরকুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহায়। এতে জামা-কাপড়ে আগুন লেগে বেশিরভাগ মানুষ অগ্নিদগ্ধ হন।এছাড়া উত্তরাঞ্চলে অগ্নিকান্ড, সড়ক দুর্ঘটনা, গরম পানি, গরম তেল, বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে অগ্নিদুর্ঘটনায় শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়া রোগী ভর্তি হন রমেক হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে। ১৪ শয্যার বার্ণ ইউনিটটি সারা বছরই রংপুর বিভাগের ৮ জেলার রোগীতে পরিপূর্ণ থাকে। শীত আসলে ৭০ থেকে একশ পেরিয়ে যায় রোগীর সংখ্যা। এ সময় সার্জারী বিভাগের বারান্দাসহ বিভিন্ন স্থানে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। অনেক সংকটাপন্ন রোগীদের শয্যা সংকটের কারণে আইসিইউ সুবিধা দিতে পারে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা ঢাকায় বার্ণ ইউনিটে স্থানান্তরে করার পরামর্শ দিলেও রোগীকে ঢাকায় নিতে পারে না অস্বচ্ছল রোগীর স্বজনরা। এতে করে রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। এছাড়া হাসপাতালের চতুর্থ তলায় সার্জারী বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া পোড়া রোগীদের ড্রেসিং (ক্ষত স্থান পরিস্কার) করার জন্য প্রতিদিন হাসপাতালের নিচ তলায় বার্ণ ইউনিটে আনা-নেওয়া করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগী, স্বজনসহ হাসপাতালের নার্স-ওয়ার্ড বয়দের। অপরদিকে সংকটাপন্ন সামর্থ্যবান রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠালে সেখানে রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়।

এছাড়া দুর্ঘটনার প্রথম ২৪ ঘন্টায় রোগীকে হাসপাতালে নিতে ব্যর্থ হলে তাদের ক্ষতির পরিমান বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর একনেক সভায় রংপুরসহ দেশের ৫টি জেলায় ‘১০০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ বার্ণ ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। রংপুরের এ বিশেষায়িত ইউনিটটি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধীনে পরিচালিত হবে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ছাড়াও এ প্রকল্পে ঋণ দিয়েছে সৌদি সরকার।

২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে। ৫ জেলায় এ ইউনিট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা। ‘১০০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্নাঙ্গ বার্ণ ইউনিট স্থাপন’ প্রকল্প শুরুর প্রায় দুই বছর হতে চললেও রংপুরে এর কার্যক্রম শুরু হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ দুই বছরেও শুরু না হওয়া চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে রংপুরে পোড়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়াসহ সরকারের এ মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সচেতনরা।

রমেক হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটের প্রধান ডাঃ এমএ হামিদ পলাশ বলেন, সারা বছরই ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী থাকে আমার ইউনিটে। বিশেষ করে শীতকালে রোগী কয়েকগুন বেড়ে যায়। ফলে আমার ইউনিটের বাহিরে সার্জারী বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হয়। এক ছাদের নিচে সকল রোগী না থাকায় হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে চিকিৎসা দিতে নার্স, চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ১০০ শয্যার যে আলাদা বার্ণ ইউনিটে হওয়ার কথা ছিল সেটির কোন অগ্রগতি নেই। যদি ১০০ শয্যার সেই ইউনিটটি নির্মাণ হতো, তাহলে উত্তরাঞ্চলের পোড়া রোগীদের আরও আধুনিক ও দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসা দেওয়া যেত।

রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী বলেন, সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা পাস হয়েছে এবং সেটি গণপূর্ণ অধিদপ্তরের টেন্ডার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। শীত আসলে যেহেতু এ হাসপাতালে রোগীদের অনেক চাপ থাকে, আমাদের অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকার ফলে আমরা তাদের কাঙ্খিত সেবা দিতে পারি না। সুতরাং ১০০ শয্যার বার্ণ ইউনিট হলে দ্রুত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার ফলে উত্তরাঞ্চলের পোড়া কিংবা অগ্নিদগ্ধ রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসবে।

গণপূর্ত অধিদপ্তর রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান খন্দকার বলেন, প্রকল্পের সাথে জড়িত বিদেশী প্রতিনিধি দল রংপুরে আসার কথা রয়েছে। তারা এসে সাইট পরিদর্শন করবেন। এরপর প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

স্থাপন,বার্ণ,হাসপাতাল
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত