অবশেষে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের অনুমতি পেল শিশু শিক্ষার্থী নাঈম

প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১৩:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ

অবশেষে শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরেছে নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈম-উর-রহমান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলম তাকে সঙ্গে নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করেন। প্রায় ১৪ মাস পর ক্লাস করার অনুমোদন পেলো নাঈম। 

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নার্সারির শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। এসময় সহপাঠীরা তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। 

এর আগে সোমবার (১৩ নভেম্বর) নাঈমকে স্কুলে পাঠাতে তার পরিবারকে চিঠি দেয় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি'র এক বিশেষ সভার সিদ্ধান্তক্রমে নাঈমের মা ডা. নাদিরা খানমকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনার ছেলে নাঈম উর রহমানকে ১৪ নভেম্বর থেকে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার অনুমোদন দেয়া হলো। শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য আপনার ছেলেকে ১৪ নভেম্বর স্কুলে পাঠনোর অনুরোধ করা হলো।’

উল্লেখ্য, ফিনলে টি কোম্পানির বালিশিরা মেডিকেল ডিপার্টমেন্টের ইনচার্জ ডা. নাদিরা খানম ও ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান দম্পতি তাদের যমজ শিশু সন্তান নাঈম উর রহমান ও নাজিফ উর রহমানকে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নার্সারি ওয়ানের বাংলা মিডিয়ামে ভর্তি করেন। স্কুলের অধ্যক্ষসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট ভর্তি কমিটি তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করার পর ওই বছরের জুন মাস পর্যন্ত তারা শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেন। জুলাই মাসে তাদের ওই স্কুলেরই ইংলিশ মিডিয়ামে পুনরায় ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভর্তি করা হয় এবং তারা একসঙ্গে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেয়। 

২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘স্কুলের উপযোগী নয়, কথা বলতে পারে না, পেন্সিল ধরতে পারে না, পড়াশোনায় মনোযোগী নয় এবং তার দুষ্টুমির কারণে অন্য শিশুদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে’–নানা অজুহাতে শিশু নাঈমকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর থেকে একাধিকবার শিশুটির অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাননি। বাধ্য হয়ে নাঈমের বাবা আব্দুর রহমান চলতি বছরের ৫ মে স্কুল কর্তৃপক্ষকে আইনী নোটিশ পাঠান। স্কুল কর্তৃপক্ষ ২২ মে নোটিশের জবাব দেয়।

পরে শিশুটির বাবা আব্দুর রহমান ২৬ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ১ অক্টোবর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ২ অক্টোবর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন। 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে ১১ অক্টোবর দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায় ‘স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় ছাত্রের শিক্ষাজীবন বিপন্ন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

গত ৮ নভেম্বর শিক্ষার্থী নাঈমকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে ও তার ওপর চলমান মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের ১১ জন সিনিয়র আইনজীবী শিক্ষা সচিব, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ পাঠান।

নোটিশ পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে শিশু নাঈমের ওপর চলমান অমানবিক ও মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করে তাকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় নোটিসদাতারা উচ্চ আদালতের দারস্থ হবেন বলে উল্লেখ করেন। গত ১২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি নিয়ে দি বাডস্ রেসিডেনসিয়্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে শোকজ করা হয়। শোকজে তিন কার্যদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না দিলে অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানানো হয়।