বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছ উল্টে ও বিদ্যুতের পিলার পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ সঞ্চালন লাইনের ওপরে পড়ে। যে কারণে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে।
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের বিভিন্ন স্থানে বড় আকারের গাছ পড়ে রেলপথের ক্ষতিসাধিত হয়। এতে করে এ পথের ট্রেন চলাচলে মারাত্বক বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে। রেলপথের হাজীগঞ্জ,উয়ারুক,বলাখাল,চাঁদপুর মিশনরোড ও শহরের বড় স্টেশন এলাকার আক্কাছ আলী স্কুল সংলগ্ন স্থানে রেলপথে কমপক্ষে ছোট ও বড় ১৫টি গাছ রেললাইনের উপর পড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের দায়িত্বরত কর্মকর্তা লিয়াকত আলী মজুমদার ও চাঁদপুর স্টেশন মাস্টার শোয়েবুল শিকদার জানিয়েছেন,শুক্রবার সন্ধ্যায় ও রাতের মধ্যে এ পথে বিভিন্ন স্থানে যারা দায়িত্বরত আছে তারা ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে পড়ে যাওয়া গাছগুলো দ্রæত গতিতে অপসারন করে ও রেলপথ মেরামত করে ট্রেন চলাচল স্বাবিক করে তুলে। চট্রগ্রাম-চাঁদপুরের মধ্যে চলাচলকারী মেঘনা এক্যপ্রেস রেলপথে গাছ পড়ে বিঘ্ন সৃস্টি হওয়ায় বিলম্বে রাত ১১টায় চাঁদপুর এসে পৌছে। তবে চাঁদপুর থেকে পরবর্তী ট্রেনগুলো যথাযথ সময়ে শনিবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে বলে জানান চাঁদপুর স্টেশন মাস্টার শোয়েবুল শিকদার।
এছাড়া শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক ও পুরানবাজার সেতু সংলগ্ন এলাকায় গাছ উল্টে সড়কে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২১৯ মিলিমিটার। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে স্বাভাবিক হওয়ার কারনে ২১ ঘণ্টা পর এ রুটের চাঁদপুর থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিকের পর্যন্ত চাঁদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে কমপক্ষে ২০টির মত লঞ্চ।
এর আগে মিধিলির কারণে শুক্রবার সকালে চাঁদপুর থেকে সবধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে বিআইডবিøউটিএ। চাঁদপুর বিআইডবিøউটিএর উপপরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়া অনুকূলে আসায় এবং নদী বন্দরের জন্য কোনো সতর্কতা সংকেত না থাকায় সকাল থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। প্রায় ২১ ঘণ্টা পর চাঁদপুর-ঢাকা এবং চাঁদপুর-নারায়ণগঞ্জসহ সব নৌপথে পুনরায় নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে।
শনিবার (১৮ নভেম্বর) চাঁদপুর আবহাওয়া কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম জানান, শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২১৯ মিলিমিটার। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্তই রেকর্ড হয় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। তবে শনিবার ভোরেই সূর্যের আলো দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে চালু হয়েছে চাঁদপুর থেকে লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান।
শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের বাসিন্দা কবির হোসেন মিজি জানান, শুক্রবার দুপুরে বাতাসের গতি বেড়ে যায়। যার ফলে এই সড়কে গাছ উল্টে পড়ে সড়কে এবং একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে। এদিন দুপুর থেকেই এই সড়কে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।
শহরের গুয়াখোলা এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক জানান, শুক্রবার বিকেলে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বাতাসের তীব্রতা বেড়ে যায়। যে কারণে এলাকার বিদ্যুতের মেইন লাইনের তার ছিড়ে ঝুলে পড়ে। বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগকে তাৎক্ষণিক জানানো হয়।
এদিকে বিকেলে শহরের পুরানবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় একটি বড় আকারের গাছ উল্টে সড়কে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ আল মামুন জানান, গাছ উল্টে সড়কে পড়লে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় গাছটি কেটে অপসারণ করা হয়। এরপর সড়ক চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলির কারণে শুক্রবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে চাঁদপুর থেকে সব রুটে লঞ্চ ও নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সব রুটে লঞ্চ ও নৌযান চলাচল শুরু হয়েছে। চাঁদপুর ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে নিয়মিত লঞ্চগুলো ছেড়ে যায়।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (চাঁদপুর) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল মোকতাদির জানান, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বেশ কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুক্রবার রাতেই কয়েক স্থানে মেরামত করে লাইন চালু করা হয়। বাকি লাইনগুলো মেরামত করার চেষ্টা চলছে।