বউ-শাশুড়ির দেয়া আগুনে অবশেষে প্রাণ গেলো এখলাছের
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:২৪ | অনলাইন সংস্করণ
নেত্রকোণা প্রতিনিধি
নেত্রকোণায় এখলাছ উদ্দিন (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এর আগে গত ১৩ নভেম্বর ভোরের দিকে জেলার মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের বাড়রি-সুতিয়াপার গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে আগুনে পুড়ে মারাত্মকভাবে আহত হন এখলাছ উদ্দিন। তিনি পার্শ্ববর্তী কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের পাঁচহার গ্রামের আমজদ আলীর ছেলে।
মৃতের ভাগ্নে সাকিব মিয়া শনিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, প্রায় ৬ বছর পূর্বে এখলাছ উদ্দিনের সঙ্গে মদন উপজেলার বাড়রি গ্রামের খায়রুল মিয়ার মেয়ে মুক্তা আক্তারের (৩০) বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা আনতে এখলাছ উদ্দিন প্রথমে মালয়েশিয়া ও পরে সেখান থেকে সৌদি আরব যান। এই স্বচ্ছলতা আনার চেষ্ঠাই পরবর্তীতে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। বিদেশ থেকে তিনি তার স্ত্রীর কাছে অনেক টাকা প্রেরণ করেন। এ ছাড়াও এখলাছ মিয়া তার শ্বশুর-শাশুড়িকে ৬ লাখ টাকা ধার দেন। সম্প্রতি তিনি দেশের বাড়ি ফিরে শ্বশুর-শাশুড়িকে দেওয়া ধারের টাকা ফেরত আনতে স্ত্রীকে চাপ দেন। এতেই বাঁধে বিপত্তি। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে মুক্তা তার পিত্রালয়ে চলে যান। গত ১২ নভেম্বর মোবাইলে ফোন করে এখলাছ উদ্দিনকে তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান মুক্তা। রাতের খাওয়া সেরে তারা পাশাপাশি ঘুমান। পরে ভোরের দিকে ঘুমন্ত এখলাছ উদ্দিনের হাত-পা বেঁধে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে এখলাছ উদ্দিনকে উদ্ধার ও চিকিৎসার জন্য কেন্দুয়া হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে থেকে তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এখলাছ মিয়ার ভাগ্নে সাকিব মিয়া বলেন, বিদেশ থাকাকালে মামা তার আয় রোজগারের টাকা স্ত্রীর কাছে পাঠাতেন। এ ছাড়া, মামীর কথায় মামা তার শ্বশুর-শাশুড়িকে ৬ লাখ টাকা ধার দিয়েছিলেন। এই টাকা ফেরত চাওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কলহ শুরু হয়। রোববার ফোন করে মামী আমার মামাকে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান। সেখানে মামার হাত-পা বেঁধে শরিরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে মামার সমস্ত শরির পুড়ে যায়।
এদিকে, মুক্তার পিতা খায়রুল মিয়া সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এখলাছ উদ্দিন নিজেই তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এব্যাপারে মদন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.তাওহীদুর রহমান বলেন, ঘটনাটি এখলাছ উদ্দিনের শ্বশুরের বসতঘরের ভেতরেই সংঘটিত হয়েছে। স্থানীয়দের বরাতে তিনি আরো জানান, তারা স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বনিবনা হচ্ছিল না। স্ত্রী মুক্তা তার পিত্রালয়ে থাকতে চান, স্বামী এখলাছ উদ্দিন চান স্ত্রীকে তার বাড়িতে রাখতে। এই নিয়ে সোমবার সকাল ৮টার দিকে পারিবারিক সালিশ বসে। এখানে এখলাছ উদ্দিনেরর পক্ষে অন্য কেউ ছিলেন না। উভয়পক্ষের মাঝে কথা কাটাকাটি ও উত্তেজনার একপর্যায়ে এখলাছ উদ্দিনের শরিরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মুক্তা ও তার পিত্রালয়ের লোকজনের বিরুদ্ধে এখলাছ উদ্দিনের নিকট থেকে টাকা ধার নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে তার চাচাতো ভাই কছিম উদ্দিনের (৪০) নিকট থেকে গত ১৩ নভেম্বর একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। এই অভিযোগকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করা হবে।