গ্রাহকের ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাত, তদন্ত শুরু
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
ইসলামি ব্যাংক কক্সবাজারের টেকনাফ শাখায় বিভিন্ন গ্রাহকের ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে 'অডিট কমিটি' তদন্ত শুরু হয়েছে। রোববার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আলাদা কোন তদন্ত কমিটি হয়নি। ব্যাংকের অভ্যান্তরীণ অডিট কমিটির সদস্যরা বিষয়টি তদন্ত করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই পর্যন্ত ১৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, বাকি টাকা উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে অন্য একটি সূত্র বলছে, ইসলামী ব্যাংক টেকনাফ শাখা ঘিরে একটি জালিয়াত চক্র দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। বাইরের লোকজন ছাড়াও ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা এ চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকে মনে করে একটি শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকে অনৈতিকভাবে দলীয় বিবেচনায় যখন শুধু মাত্র নামকাওয়াস্তে সিভি নিয়ে বিশেষ এলাকার জনবল নিয়োগ দেয়া শুরু করছে তখন থেকে একের পর অকারেন্স ঘটতে শুরু করছে। ওই সূত্র মতে, ইসলামি ব্যাংক টেকনাফ শাখা কর্তৃক হুন্ডি ব্যবসা করে আসছে চক্রটি। আত্মসাতকৃত ৬৫ লাখ টাকাও হুন্ডির টাকা লেনদেন কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখার প্রয়োজন মনে করেন অভিজ্ঞ মহল। টাকা আআত্মসাতের অভিযোগে গ্রাহকের নাম উল্লেখ না থাকায় সচেতন মহলের মাঝে বিষয়টি নিয়ে আরো রহস্য সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে বিষয়টির প্রসঙ্গে রোববার পৌনে ৩ টার দিকে ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান (দক্ষিণ) বারাকাত উল্লাহ'র মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার সাথে সাথে লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কয়েকদফা যোগাযোগ করলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
ব্যাংক ও পুলিশ থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৬ নভেম্বর ইসলামি ব্যাংক টেকনাফ শাখায় একজন গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতিতে গরমিল পাওয়ায় ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ অলতাফ হোসেন এর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। উক্ত মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তার হিসাবের স্থিতির গরমিলের ব্যাপারে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পায় ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ অলতাফ হোসেন। একইভাবে ১২ নভেম্বর অন্য এক গ্রাহক তার হিসাবের স্থিতির ব্যাপারেও একই অভিযোগ করেন ব্যবস্থাপকের কাছে। সেটিও ব্যবস্থাপক নিজ উদ্যোগে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পান।
উক্ত অভিযোগ দুটির সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে ব্যবস্থাপক দেখতে পান যে ওই ব্যাংকের কর্মকর্তা ঈমান হোসেন ও আজিজ আহমেদ জাবেদ তাদের ব্যাংক প্রদত্ত আইডি ব্যবহার করে পরস্পরে গ্রাহকের চেকবই জালিয়াতির মাধ্যমে ইস্যু করে এবং উক্ত চেকসমূহ ব্যবহার করে নগদ ও ট্রান্সফারের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রাহকদের হিসাব থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করেন। তাদের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাবে উক্ত টাকা স্থানান্তর করে। উক্ত জমাকৃত টাকা পরে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়টি ব্যবস্থাপক নিশ্চিত হওয়ার পর দ্রæত আঞ্চলিক প্রধানকে অবহিত করে নিরীক্ষার ব্যবস্থা করেন। উক্ত তদন্তে এ পর্যন্ত ব্যবস্থাপক সর্বমোট ৫৮ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব হতে অননুমোদিত উত্তোলনের প্রমাণ পান।
এরই ভিত্তিতে ব্যাংকের কর্মকর্তা অভিযুক্ত ঈমান হোসেনকে ব্যবস্থাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন। অভিযোগকারী দুইজন গ্রাহকের হিসাবের গরমিলের ১৩ লক্ষ টাকা ব্যবস্থা করে তাদের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করেন।
অভিযুক্ত ঈমান হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে সর্বমোট ৬৫ লক্ষ টাকা একই পদ্ধতিতে আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন। অভিযুক্ত ঈমান হোসেন তার লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী সে নিজে ৩০ লক্ষ টাকা, আজিজ আহমেদ জাবেদ ৩০ লক্ষ টাকা এবং মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম ৫ লক্ষ টাকা পারস্পারিক যোগসাজশে মাধ্যমে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। যদিও আজিজ আহমেদ জাবেদ ও মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেন।
অডিট টিম সমন্বয়ে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, অভিযুক্ত ঈমান হোসেন ৬৫ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করলেও ব্যবস্থাপক এপর্যন্ত ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা অননুমোদিত উত্তোলনের প্রমাণ পেয়েছেন। এই অবৈধ উত্তোলনের ক্ষেত্রে ঈমান হোসেন ও আজিজ আহমেদ জাবেদ যৌথভাবে তাদের ব্যাংক কর্তৃক প্রদেয় আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে উক্ত লেনদেনগুলো সংঘটিত করেছেন। আরও কোন অবৈধ লেনদেন আছে কিনা অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় তাদের সাথে এবং তাদের পরিবারের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে ব্যবস্থাপকের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ঈমান হোসেনের স্বীকারোক্তি মতে আরও ৫২ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ইতিমধ্যেই ব্যাংকের হেড অফিস থেকে সিদ্ধান্তমতে ব্যবস্থাপক অভিযুক্ত ৩ কর্মকর্তাকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
এদিকে এই ঘটনায় গত বুধবার টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরন করেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ইসলামি ব্যাংক টেকনাফ শাখার অফিসার ঈমান হোসেন, জুনিয়র অফিসার আজিজ আহমেদ জাবেদ ও মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম। এর মধ্যে ঈমান হোসেন টেকনাফের হৃীলার দমদমিয়া এলাকার ঠান্ডা মিয়ার পুত্র, আজিজ আহমেদ জাবেদ চট্টগ্রামের পটিয়া জঙ্গলখাইন ইউপির উজিরপুর এলাকার মীর আহমদের পুত্র ও মোহাম্মদ শাহেদুল ইসলাম চট্টগ্রামের পটিয়া জাবিলাছদ্বীপ ইউপির চরকানাই এলাকার শেখ মো. আমিনুল হকের পুত্র।
প্রসঙ্গতঃ গত রোববার দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের শেষ পৃষ্টায় এ বিষয়ের উপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।