ডলার সংকটে এলসি কম হওয়ায় আমদানি কমেছে বেনাপোল বন্দরে 

প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ

  বেনাপোল প্রতিনিধি

দেশে ডলার সংকটে এলসি খুলতে বিভিন্ন বাঁধায় বেনাপোল দিয়ে আমদানি নেমে এসেছে অর্ধেকে।

বেনাপোলের সি অ্যান্ড এফ ব্যবসায়ী ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে বেনাপোলে সুপারেনটেনডেন্ট ও ইন্সপেক্টর সকলে নতুন হওয়ায় সমস্যা বেশি হচ্ছে।  এ সব কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পণ্যের এইচ এস কোড ও ভ্যালু নিয়ে জটিলতার কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

দেশে ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বানিজ্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমদানি কম হওয়ার কারণে বেনাপোল কাষ্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে কম হচ্ছে  তাছাড়া  বন্দরের ব্যবস্থাপনা  নানাবিধ হয়রানির কারণে রাজস্ব আদায়ে ধস নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

বেনাপোল কাষ্টমসে নানা জটিলতার কারণে বেশ কিছু আমদানিকারক এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। অধিক শুল্ককর আদায় যোগ্য পন্যগুলি এ বন্দর দিয়ে কমে গেছে। মোটরপার্টস, ফেব্রিকস, আয়রন, স্টিল, আপেল ও মোটর গাড়িও বিভিন্ন যন্ত্রাংশ  আমদানিকারকরা বেনাপোল দিয়ে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব পণ্য থেকে প্রায় ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে বলে জানা যায়।

কাস্টমস সূত্রে, চলতি অর্থ বছরে রাজস্ব আদায়ের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা। গত ৪ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। তার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২৪০ কোটি টাকার রাজস্ব কম আদায় হয়েছে।

সব মিলিয়ে ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে বলে কাস্টমস সুত্রে জানা গেছে। বেনাপোল সি এন্ড এস এফ এজেন্টের  বিষয়ক সম্পাদক স্বত্বাধিকারী রাতুল এন্টারপ্রাইজের আব্দুল লতি তিনি বলেন, মূল কারণ হচ্ছে ব্যাংক এলসি না দেওয়ায় ডলার সংকট হওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য কম হওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আমদানি কারক আমিনুল ইসলাম আনু বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের মুল্য ১১০ দশমিক ৪২ টাকা। এলসির সমুদয় টাকা ব্যাংকে পরিশোধ করলেও ব্যাংক এলসি দিচ্ছেন না। এলসি করতে গেলে পিআই অনুমোদনের জন্য ব্যাংকের ম্যানেজারকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ঘুস দিতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে এলসি করতে ডলারের বিপরীতে টাকার মুল্য ছিল ১১২ টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে ১৩০ টাকা হয়েছে। এসব অনিয়ম না মানলে এলসি হচ্ছেনা। এজন্য আমরা বেশী প্রয়োজন ছাড়া এলসি করছিনা। বানিজ্যিক আইটেমের এলসি না হওয়ার কারণে আমদানি বানিজ্য কম হচ্ছে। তাছাড়া রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে।

 

‘আর আমদানি কম হওয়ার কারণে বেনাপোল কাষ্টমস হাউসে রাজস্ব কম আদায় হচ্ছে। তাছাড়া বেনাপোল কারণে আমরা যারা আমদানি করি, তারা এ বন্দর এড়িয়ে চলার চেস্টা করছি। সময় বাচাতে এ বন্দর দিয়ে আমদানি করলে আর্থিক লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আশা করছি বাণিজ্যে আবারও  গতি ফিরবে বেনাপোল বন্দরে।’

বন্দর সুত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ওয়্যারহাউজিং কর্পোরেশনের অধীনে বেনাপোল দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০২ সালে এই এলাকাটি মর্যাদা পায় স্থলবন্দরের। বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্য থেকে সরকারের বড় অংকের রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে চলেছে।

সি অ্যান্ড এফের ব্যবসায়ী জুয়েল রানা জানান, ভারতের নাসিক থেকে আসা আপেলসহ অন্যান্য উচ্চ পচনশীল পণ্যের চালান আসতে প্রায় তিনদিন সময় লাগে। এর ফলে অধিকাংশ কার্টনের ফলই পচে যায়। এ ধরনের পচনশীল পণ্যের রাজস্ব নেয়াতে অধিকাংশ আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশসেন সাধারন সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ডলার সংকট চলছে। ডলার সংকট দেখিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এলসি দিতে চাচ্ছে না। আর এলসি দিলেও ডলারের রেট অনেক বেশি। ডলার বাইরে থেকে কেনার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে তারা। এলসি না হওয়ার কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি অনেক কমে গছে ইতোমধ্যে।’

বেনাপোলের সি অ্যান্ড এফ ব্যবসায়ী ও ফেডারেশন অব বাংলাদেশ সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, ‘বেনাপোল কাষ্টমস হাউসে রাজস্ব আদায়ে ধ্বস নামার কারণ আমদানি বানিজ্য কমে যাওয়া। এলসি করতে ব্যাংক ম্যানেজার ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার কারণে এলসি কমে গেছে। এলসি করতে ব্যাংকে অতিরিক্ত খরচ হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আমদানি করতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।

তিনি জানান, বর্তমানে বেনাপোলে সুপারেনটেনডেন্ট ও ইন্সপেক্টর সকলে নতুন হওয়ায় সমস্যা বেশি হচ্ছে। এসব সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পণ্যের এইচ এস কোড ও ভ্যালু নিয়ে জটিলতার কারণে রাজস্ব আদায় কমে গেছে। 

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার শাফায়েত হোসেন বলেন, ‘জেনেছি এলসি না হওয়ার কারণে ডলার সংকট কারণে আমদানি কম হচ্ছে। আগের তুলনায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বানিজ্য অনেক কমে গেছে। তাছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে মূলত ঘাটতি হয়েছে উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায়। বিশেষ করে মোটরগাড়ি ও মোটরপার্টস থেকে ২০১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। আপেল আমদানিতে ২৪ কোটি ও ফেব্রিকস আমদানিতে ২১ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। সর্বমোট ৩১৩ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে। আশা করছি আমদানি বানিজ্য বাড়লে ঘাটতি রাজস্ব পূরণ হয়ে লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে।