ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাতে ভুতুড়ে গলি

আন্ডারপাসটি যেন মাদকসেবীদের আড্ডার কারখানা

আন্ডারপাসটি যেন মাদকসেবীদের আড্ডার কারখানা

সড়কে দূর্ঘটনা কমাতে এবং জনসাধারণের সহজ যাতায়াতের জন্য নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বাইপাইলে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় আন্ডারপাস। কিন্তু নির্মাণের চার বছরেই এ আন্ডারপাসটি পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে গলিতে। ছাউনি খুলে পড়া, ময়লা আবর্জনা, রাতে অন্ধকার, স্যাতস্যাতে ভাব আর মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীর দখলে থাকে আন্ডারপাসটি। যার ফলে যাতায়াত করা একপ্রকার বন্ধ করে দিয়েছে পোশাক শ্রমিক সহ হাজারো মানুষ। তবে সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে এ ব্যাপারে খুব দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তথ্যসূত্র মতে, নবীনগর-চন্দ্র মহাসড়কের আশুলিয়ার বাইপাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ৪ বছর আগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ব্রীজের নীচে তৈরি করা হয় আন্ডারপাসটি। প্রায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০.২৫ মিটার প্রস্থ আন্ডারপাসটিতে মানুষ এবং রিক্সা-ভ্যান-মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য আলাদা দুটি লেন করা হয়। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগ কর্তৃপক্ষ আন্ডারপাস নির্মাণ করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নিয়মিত তদারকি না করার ফলে আন্ডারপাসটি এখন ময়লা আবর্জনায় ভরপুর। এরই মধ্যে উপরের ছাউনিরও বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে পড়েছে। বৃষ্টি না হলেও জমে থাকে কাদা-পানি ও স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। যার ফলে এখান দিয়ে মানুষজন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। তবে রিকশা-ভ্যান ও দুই একটি মোটরসাইকেল পারাপার হতে দেখা যায় এখান দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হড়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক বাতিগুলোও। দিনের বেলায় সূর্য্যরে আলো থাকলেও রাত হলেই এখানে ঘোর অন্ধকার। আর এই সুযোগে বসে মাদকসেবীদের আসর। ঘটে ছিনাতাইয়ের মত ঘটনাও।

রফিকুল ইসলাম, চাকুরী করেন জামগড়ার একটি কারখানায়। থাকেন পলাশবাড়িতে। কারখানায় যেতে প্রতিদিন তাকে সড়ক পার হতে হয়। কিন্তু দূর্ঘটনা এড়াতে তিনি বাইপাইলের আন্ডারপাস ব্যবহার করেন। কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, প্রতিদিন তাকে এই আন্ডারপাসটি ব্যবহার করতে হয়। দূর্ঘটনার এড়াতে সড়কে পার না হয়ে এটাই ব্যবহার করেন। কিন্তু পাশে ময়লা ও প্রসাব-পায়খানার দূর্ঘন্ধের কারণে অনেক সময় ঝুঁকি নিয়েই সড়ক পার হন। আর সন্ধ্যার পরতো একান দিয়ে চলাচলই মুশকিল। ছিনতাইয়ের ভয়ে আন্ডারপাস এড়িয়ে চলেন তিনি। এসব এপার-ওপার যাতায়াতে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করে তার মনে।

ঢাকা ইপিজেড এলাকার একটি তৈরী পোশাক কারখানার নারী শ্রমিক সুলতানা নাসিরন গত ১০ বছর ধরে এই সড়ক পারাপার হচ্ছেন। তবে কয়েক বছর আগে আন্ডারপাস হওয়ায় কিছ্টুা খুশিঁ হলেও বেশি দিন যায়নি। ক্ষোভ নিয়ে তিনি বলেন, অনেকটাই ঝুঁকি নিয়ে সকাল আর সন্ধ্যায় সড়ক পারাপার হতে হয়। আন্ডারপাস হওয়ায় স্বস্তি হলেও অস্বস্তির অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার। দিনের বেলা পার হতে পারলেও সন্ধ্যার আধাঁরে ঝুঁকি নিয়ে পার হন সড়ক।

অস্বস্তির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীর উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সেই ভয়ে ঝুঁকি নিয়ে উপর দিয়ে মহাসড়ক পারাপার হন। ব্যাটারী চালিত রিকসার চালক বোরহান উদ্দিন বলেন, সন্ধ্যার পর মাঝে মধ্যে এখানে ছিনতাই হয়। সড়কে পারাপারের জন্য নিচের এই পাস ব্যবহার করলেও ছিনতাই হওয়ার ভয়ে রাতে যেতে চায় না। এছাড়া পাশের আড়ৎ থেকে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা এখানে ফেলে যায়। ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ ও বৃষ্টি ছাড়াই সাড়াবছর স্যাতস্যাতে থাকার কারণে পাঁয়ে হেটে যাওয়া না। যাত্রীরা এখান দিয়ে যেতে চায় না। আর সন্ধ্যার পর বাতি না থাকার কারণে এখান দিয়ে চলাচল করেন না তিনি।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ মানিকগণঞ্জ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: শাহরিয়ার আলম মুঠোফোনে ‘‘আলোকিত বাংলাদেশকে” জানান, ‘আমি এখানে নতুন জয়েন করেছি। তবে যতটুকু জেনেছি ময়লা ফেলার কারণে এমনটার সৃষ্টি হয়েছে। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম বিষয়টি খুব দ্রুতই দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

আন্ডারপাস,মাদকসেবী,আড্ডা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত