রংপুরে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:১১ | অনলাইন সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা রংপুরে শুরু হয়েছে বীজ রোপণের মৌসুম। আলু বীজের দাম বাড়ায় সৃষ্টি হয়েছে নানা সঙ্কট। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা। চলতি মৌসুমে জেলায় ৫৩ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।’গত মৌসুমের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলুর বীজ। সেই সঙ্গে বেড়েছে সার ও কীটনাশকসহ শ্রমিকের খরচও। ফলে, এ বছর প্রতি হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনে কৃষকদের ব্যয় বাড়বে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। আলুর আবাদের খরচ বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন আলুচাষিরা। এতে আলুর দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি লোকসানের আশঙ্কায় আছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

জানা যায়, গত বছর সরকারি বীজ বিক্রি করা হয়েছিল কেজি প্রতি ২৮-৩০ টাকা। এ বছর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৬০ টাকা। বেসরকারি কোম্পানিগুলো গত বছর বীজ বিক্রি করেছিল কেজি প্রতি ৪০ টাকা, এ বছর বিক্রি শুরু করেছে ৭৫-৮০ টাকা দরে। সে হিসেবে হেক্টর প্রতি গত বছর আলু বীজে খরচ ছিল ৭০-৮০ হাজার টাকা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায়।ইতোমধ্যে জেলায় প্রায় ১৭ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পীরগাছা উপজেলাধীন পারুল ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় কৃষকদের আলু রোপণ করতে দেখা গেছে। আমন ধান কাটা ও মাড়াই এখন পুরোদমে চলছে এসব এলাকায় ফলে অনেকে দ্রুত জমি প্রস্তুত করে রোপণ করতে শুরু করেছেন আলু। এলাকাগুলো ঘুরে কথা হয় নাগদাহ এলাকার কৃষক মন্তাজ উদ্দিনের সাথে।

আলু রোপণকালে মন্তাজ বলেন, ‘প্রতি বছর ৩-৪ একর জমিতে আলু চাষ করি। তবে এ বছর মনে হয় হবে না। কারণ গত বছরের চেয়ে এ বছর আলুর বীজের দাম অনেক বেড়েছে। সেই সঙ্গে অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও নাগালের বাইরে। যে কারণে এবার এক একর জমি প্রস্তুত করে আলু রোপণ করছি। বাকি আরও আড়াই একর কয়েকদিন পর রোপণ করবো। গত বছরের নিজের রেখে দেয়া বীজ দিয়ে এই এক একর জমিতে আলু রোপণ করছি। বাকি জমিগুলোতে আলু রোপণ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ গতবারের চেয়ে এবার ভিত্তি বীজ আলুর দাম দ্বিগুনেরও বেশি। তার উপর ভালো মানের বীজ পাওয়া নিয়েও থাকে অনিশ্চয়তা।

মন্তাজের মতো একই এলাকার আলু চাষি বাবুরাম, রামনাথ, জাফরুল, আতোয়ারের সাথে কথা বলে জানা যায়; সরকারি, বেসরকারি ও কৃষক পর্যায়ে তিন স্তরেই বেড়েছে আলুর বীজের দাম। গত বছর যে বীজ আলু সরকারের কাছ থেকে ২৮-৩০ টাকায় কৃষকরা পেয়েছে; সেই বীজ আলুর দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। বেসরকারি বীজের দাম আরও বেশি। সার ও কীটনাশকসহ শ্রমিকের খরচও গতবারের থেকে বেড়ে যাওয়ায় অনেকে আলুর উৎপাদন কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই এ বছর আলুর আবাদ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

বিএডিসি রংপুর অঞ্চলের বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এবার বীজের দাম বাড়ায় আলু চাষে আগ্রহ কমেছে কৃষকদের। গতবছর এসময় যে পরিমাণ বীজ আলু বিক্রি হয়েছিল এ বছর তা হয়নি। বীজের দাম বাড়ায় কৃষকরা চিন্তায় পরেছেন। আমরাও চিন্তিত, কারণ কৃষকরা আলু বীজ না কিনলে আমরা বিক্রি করতে পারছি না। আবার কম দামে বীজ আলু বিক্রির সুযোগও নেই, কারণ বিএডিসি এবার সরকারি বীজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।’

বিএডিসির রংপুরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘খাবার আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে বীজ আলুর দাম। কারণ বাজারে খাবার আলু যে দামে বিক্রি হচ্ছে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই দাম নির্ধারণ করা হয়। তা না হলে মানুষ বীজ আলু নিয়ে গিয়ে খাবার হিসেবে বিক্রি করবে।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আফতাব হোসেন বলেন, ‘এবছর বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের আলু উৎপাদনের খরচ বেড়ে যাবে। তাই আমরা কৃষকদের অধিক ফলনশীল জাতের আলু চাষের পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা বাজারে এখন আলুর যে জাতগুলো প্রচলিত আছে তার ফলন অনেক কম। তাই কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা সানসাইন, সেভেন, সেভেন ফোর সেভেন, সান্তানাসহ বেশকিছু উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। একইসঙ্গে মাঠে থেকে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। তবে ঢালাওভাবে আলু চাষ না করে পরিকল্পিত চাষে মনোযোগ দিতে হবে কৃষকদের।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর রংপুর কৃষি অঞ্চলে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৭ হাজার ৩২৭ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এসব জমিতে ভিত্তি বীজ আলুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭৮ মেট্রিক টন।

রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল  বলেন, ‘এবার জেলায় মোট ৫৩ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা থেকে ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩৫৪ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।’তিনি আরও বলেন বুধবার পর্যন্ত জেলায়  ৯ হাজার ৯ শ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করা হয়েছে ।