ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন

টাঙ্গাইলে অসময়ে নিউ ধলেশ্বরী নদীর তীররক্ষা বাঁধে ধ্বস

টাঙ্গাইলে অসময়ে নিউ ধলেশ্বরী নদীর তীররক্ষা বাঁধে ধ্বস

টাঙ্গাইলের নিউ ধলেশ্বরী নদীর কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা উত্তরপাড়া ও বাজারের উত্তর পাশের তীররক্ষা বাধে অসময়ে ধ্বস দেখা দিয়েছে। শুকনো মৌসুমে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে ধ্বসে নদীর বামতীরের ৩০০ মিটারের বেশি এলাকায় পাউবোর তীররক্ষা বাধের সিমেণ্টের বøক সহ এলেঙ্গা বাজারের কসাইখানা ধ্বসে নদীতে ঠাই নিযেছে। এ ধ্বস অব্যাহত থাকলে আগামি বর্ষায় নদীর উপর এলজিইডি নির্মিত ব্রিজ, স্থানীয় ঘরবাড়ি ও বাজারের পশ্চিমাংশ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা

গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) নিউ ধলেশ্বরী নদীর বামতীরে ভাঙনরোধে ২০১৫-২০১৬ সালে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা বাজার ও এলেঙ্গা উত্তরপাড়ার কিছু অংশে সিমেণ্টের ব্লক দিয়ে তীররক্ষা বাধ নির্মাণ করে। ফলে ওই এলাকার মানুষ নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পায়। গত তিন বছর ধরে শুকনো মৌসুমে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় বালু ব্যবসায়ীরা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করছে। গত বছর শুকনো মৌসুমে এলেঙ্গা বাজারের পশ্চিমে এলজিইডি নির্মিত ব্রিজের উত্তর-দক্ষিণে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে দিনরাত কোটি কোটি সিএফটি বালু উত্তোলন করে। ওই বালু উত্তোলন নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বালু ব্যবসায়ীদের একাধিকবার ঝগড়াও হয়। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতা থাকায় বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকে। ওই বালু উত্তোলনের কারণে এখন নদীতীর রক্ষা বাধে ধ্বস দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে স্থানীয়রা জানায়, অসময়ে নদীতীর রক্ষা বাধে ধ্বসের ফলে ইতোমধ্যে এলেঙ্গা বাজারের কসাইখানা পুরোটা এবং স্থানীয় আশরাফ বেপারীর দোকানের পশ্চিমের অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ওই এলাকার সায়েম উদ্দিন, ছবুর তালুকদার, অতুল চন্দ্র দাস, সমেশ তালুকদার, মৃত কাশেম তালুকদারের বাড়ির পশ্চিমাংশে ধ্বস দেখা দিয়েছে।

এলেঙ্গা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানায়, গত বছর ব্যাপকহারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীতে পানি না থাকলেও তীররক্ষা বাধে ধ্বস দেখা দিয়েছে। ফলে এলেঙ্গা বাজারের ব্রিজ, বাজারের পশ্চিমাংশের দোকানপাট, এলেঙ্গা উত্তর পাড়ার বাড়িঘর ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে।

স্থানীয় রাকিব হাসান, ফয়সাল মিয়া, আব্দুল হামিদ, রাশিদুল হাসান, আব্দুল জলিল সহ অনেকেই জানান, শুকনো মৌসুম এলেই নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে ব্যাপকহারে বালু উত্তোলন করা হয়। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এলাকার প্রভাবশালীরা নানাভাবে জড়িত থাকে। এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলেই মামলা-হামলার শিকার হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আশরাফ বেপারী জানান, অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে তার দোকানের পশ্চিমাংশ ভেঙে নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙনরোধে তিনি নিজ উদ্যোগে প্রায় এক লাখ টাকার বালুর বস্তা ফেলেও কোন সুফল পাননি। এবার শুকনো মৌসুমে কেউ যেন বালু উত্তোলন না করতে পারে সেজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তিনি।

এলেঙ্গা বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন জানান, নদীতীর রক্ষা বাধ নির্মাণের পর এ এলাকায় ভাঙন বন্ধ হয়েছিল। গত বছর দেদারছে ব্যাপকহারে বালু উত্তেলনের কারণে অসময়ে তীররক্ষা বাধে ধ্বস দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা বড় বড় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশে গভীরতা সৃষ্টি হওয়ায় গত ১৭-১৮ দিনে নদীতীর ধ্বসে পড়ছে। আগামি বর্ষায় এলেঙ্গা বাজারের কাঁচা বাজার, মাছ ও মাংসের বাজার এবং বাজারের পশ্চিমাংশে এলজিইডি নির্মিত ব্রিজ সহ এলাকার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে মৌখিকভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, ওই এলাকায় নদী ভাঙনরোধে একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টাঙ্গাইল,তীররক্ষা,ধ্বস
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত