ঢাকা ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হাজীগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ইটভাটায় ব্যাপক ক্ষতি

হাজীগঞ্জে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ইটভাটায় ব্যাপক ক্ষতি

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বয়ে যাওয়া ভারী বৃষ্টিতে ইটভাটাগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত শুক্রবার ১৭ নভেম্বর ঘুর্নিঝড় মিধিলির প্রভাবে চাঁদপুরে ১৭৭ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়। এতে অধিকাংশ কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে গলে নষ্ট হয়ে গেছে।

সরেজমিনে,উপজেলার ১২টি ইটভাটাগুলো ঘুরে দেখা গেছে,বেশিরভাগ ইটভাটায় পানি জমেছিল। শ্রমিকেরা বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হওয়া ইটগুলো সরিয়ে নিচ্ছেন। শ্রমিকদের একটি অংশ ভাটায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য কোদাল হাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিছু ইটভাটায় চুলায় আগুন দিয়ে ইট পোড়ানো কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টিতে কাচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়।

শনিবার ১৮ নভেম্বর সকাল থেকে আকাশে রোঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অনেক ইটভাটায় আবারও ইট তৈরির কাজ শুরু করতে দেখা গেছে। ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টিতে ১২ ইটভাটায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার ৬ নং বড়কুল পূর্ব ইউনিয়নের মার্ক ব্রিকসের মালিক আলহাজ্ব মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন,ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে বৃষ্টিতে ইটভাটায় প্রায় ৪ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে তাঁকে ৫ লাখ টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়েছে।

তিনি বলেন, এমনিতেই রড, সিমেন্টের দাম বৃদ্ধিতে ইট ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে। বেচা-বিক্রিও কম। তার ওপর অসময়ের বৃষ্টিতে আরও লোকসান গুনতে হচ্ছে।

একই ইউনিয়নের সেলিম ব্রিক (এম বি এম) এর ম্যানাজার দিলিপ সরকার জানান, ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে বৃষ্টিতে ৮ থেকে ১০ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা।

উপজেলার ৯ নং গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের আতিক শাহ্ ব্রিকসের ম্যানাজার মোঃ সোলায়মান জানান, বৃষ্টিতে ৯০ ভাগ কাঁচা ইট সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এটা তাঁদের জন্য অনেক বড় ক্ষতি।

একই ইউনিয়নের কণা জিগজ্যাক এর মালিক মোঃ শাহ আলম বাবুল বলেন,যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তাতে ইটভাটা প্রস্তুত করতে আরও সাত থেকে দশদিন লাগবে। এতে একদিকে বাড়তি অর্থের দরকার, হবে অন্যদিকে সময়ও নষ্ট হবে।

তিনি বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আগে প্রতি টন কয়লা ৮ হাজার টাকা দরে কেনা যেত। কিন্তু চলতি বছর থেকে প্রতি টন কয়লা ২২ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। তার ওপরে অসময়ের বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় ১২টি ইটভাটায় কয়েক কোটি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

রান্ধুনীমুড়া এলাকার রনি ব্রিক-২ এর ম্যানাজার জন সাহা জানান,আমাদের ব্রিক ফিল্ডে শতাধিক শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে বৃষ্টিতে ইটভাটায় প্রায় ৪ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে তাঁকে ১০ লাখ টাকার মতো লোকসান গুনতে হয়েছে।

অনি ব্রিকসের ম্যানাজার উত্তম দেবনাথ জানান, উপজেলার বেশির ভাগ মালিককে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ভাটার ব্যবসা করতে হচ্ছে। প্রতিটি কাঁচা ইট তৈরিতে শ্রমিককে এক টাকা বিশ পয়শা করে দিতে হয়। ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে বৃষ্টিতে ৫ থেকে ৬ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা।

এজিবি ও এসএসবি ব্রিকসের স্বত্বাধিকারী মোঃ শরিফ গাজী বলেন,অক্টোবর থেকে ইটভাটায় কাজ শুরু করি। মাত্র ভাটা গুছিয়ে ইট তৈরি ও পোড়ানোর কাজ শুরু করি। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘূর্ণিঝড় মিধিলার প্রভাবে বৃষ্টিতে কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে আবার ইটভাটা ঠিক করতে আরও অনেক টাকা খরচ হবে।

তিনি বলেন, যে সব মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে ইটভাটার ব্যবসা করছেন তাঁদের আগামী ৩ মাসের সুদ যেন মওকুফ করা হয় সরকারের কাছে সেই দাবি জানাচ্ছি।

হাজীগঞ্জ,ইটভাটা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত