হাজীগঞ্জে ঘূর্ণিঝড়ে ৪০ হেক্টর জমির রবি ফসল ক্ষতিগ্রস্ত
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ১৫:৫২ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় মিধিলি’র পরে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ৪০ হেক্টর জমির রবি মৌসুমের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে ঋণ করে ফসল আবাদ করে দিশে হারা হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক। ক্ষতিগ্রস্ত জমিগুলো আগামী বোরো মৌসুমের আগ পর্যন্ত পতিত পড়ে থাকবে। কৃষি বিভাগ বলছে-জলাবদ্ধতার কারণ নির্ধাণ করে ওইসব এলাকায় গণসচেতনতা তৈরী করা হবে।
গত কয়েকদিন উপজেলার কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের মাড়কি উত্তর পাড়া, পশ্চিম পাড়া, পৌর এলাকার বলাখাল গ্রাম ও সদর ইউনিয়নের অলিপুর গ্রামে গিয়ে দেখাগেছে শীতকালীন আগাম সব্জি, আলু ও অন্যান্য ফসলগুলো জলাবদ্ধতার মধ্যে রয়েছে। অনেক কৃষক তাদের জমির সর্বশেষ ফসল রক্ষায় জমি থেকে সেচের মাধ্যমে পানি অপসারণ করছেন। বাকী আবাদি জমিগুলোর ফলগাছ ধীরে ধীরে মরে নুয়ে পড়ছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যে জানাগেছে, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার আগাম শীতকালীন সব্জির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া ও লাউ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ২৫ হেক্টর জমি। এছাড়াও ১৫ হেক্টর জমির ষরিষা, আলু, মরচি, খিরা, শসা, টমেটু, ফুল কপি, রসুন ও পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট উপজেলা থেকে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি টাকা।
মাড়কী উত্তর পাড়ার কৃষক আবুল বাশার জানান, তিনি এ বছর তিন একর জমিতে আগাম শীতকালীন শাক সব্জির আবাদ করেছেন। জলাবদ্ধতায় তার পুরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যে কারণে তিনি এখন পথে বসার অবস্থা। এই কৃষক বিভিন্ন সমিতি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ করেছেন। ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর চিন্তায় অসুস্থ হয়ে তার পিতা আব্দুল হালিম মারা গেছেন।
ওই এলাকার কৃষক মোস্তফার সরিষা, কবির মিয়াজী, মো. জসিম গাজী ও রফিক দত্ত জানান, তাদের নিজেদের জমির ফসল যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তেমনি মাড়কী উত্তর ও পশ্চিম পাড়ার প্রায় দুই শতাধিক কৃষকের রবি মৌসুম ক্ষতিগ্রস্ত।
মাড়কী পশ্চিম পাড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. শফিউল্লাহ মিয়াজী জানান, তাদের এলাকায় কৃষক খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। যারা পানি নিস্কাশনের খাল বন্ধ করে রেখেছে তাদের বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের সরেজমিন এসে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এলাকার তিন ফসলি জমিগুলো আর আবাদ হবে না। পতিত পড়ে থাকবে বছরের অধিকাংশ সময়।
বলাখলাল গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, ৫ একর জমিতে লাউ, চালকুমড়া, মিস্টি কুমড়া, খিরা ও শসা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো ফসলে পচন ধরেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার আর কীভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম জানান, সরকারি খাল ভরাট বা মাছ চাষ করে জলাবদ্ধতা তৈরি করে বাড়ী ঘর নির্মাণ করার কোন বিধান নাই। ইতোমধ্যে কিছু বাঁধ ভেঙে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ আসলে কৃষি বিভাগ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ব্যবস্থা নিব। তবে এক্ষেত্রে জন সচেতনতা তৈরি করা সবচেয়ে বেশি জরুরি বলে আমি মনে করি। আর বাধঁ দেয়া বা বাড়ি তৈরি করার আগে অভিযোগ দিতে হবে। বাড়ি তৈরি হয়ে গেলে অভিযোগ দেয়াটা কতটা যৌক্তিক। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে আমরা প্রনোদনার আওতায় আনব।