আগামী ১৫-২০ দিন কিছু নির্মম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের চেষ্টা হবে : শামীম ওসমান

প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৩ | অনলাইন সংস্করণ

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মধুর হবে। শেখ হাসিনাকে টলানো এত সহজ না। জাতির পিতার সঙ্গে তার কন্যার একটা ডিফারেন্স আছে। জাতির পিতা সবাইকে বিশ্বাস করতেন সেই সুযোগ নিত বিশ্বাসঘাতকরা, জাতির পিতার কন্যা বিশ্বাসঘাতকদের চিনে রেখেছেন। তার ওপর আল্লাহর রহমত আছে। গত দুই বছর ধরে শুনতেসি সরকার পড়ে যাবে ক্ষমতায় আসতাসি এসব, কিচ্ছু হবেনা। নির্বাচন হবে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসবে।

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে সিনামন রেষ্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শামীম ওসমান।
তিনি আরো বলেন, বিদেশিদের দরজায় জোরে লাথি দিতে হবে। বলতে হবে, এই এটা বাংলাদেশ। নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ অন্য কারও নয়। ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে এই দেশের জন্য, দু লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম গেছে। সেই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শুধু ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল আর রাশিয়া।
এখনো নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেননি উল্লেখ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ১০০ পার্সেন্ট ফেয়ার নির্বাচন হবে। কেউ ঘাড়ও ঘুরাতে পারবে না। যারা নকল করে পাস করে তাদের জন্য নয়, তবে আমাদের জন্য এটা সুখবর। আমরা যারা সারা বছর রাজপথে থাকি, পড়ালেখা করি। আমরা চাই রাজনীতিটা রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকুক।

তিনি আরও বলেন, সামনে আর কয়টা দিন। আগামী ১৫/২০ দিন দেশব্যাপী সহিংসতার চেষ্টা করা হবে। যারা করাবে তারা কিন্তু আড়ালেই থাকবে। যারা করবে তারা ফেঁসে যাবে। আমাদের এলাকার পাগলদেরও আমরা চিনি।

তিনি বলেন, আমি যদি বলি পাঁচ মিনিটে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীর বাড়িতে হামলা হবে। তখন দোষ কার হবে, আমার হবে। যারা বাইরে থেকে নির্দেশ পেয়ে অরাজকতা করছে তারা কিন্তু ছাড় পাবে না। এবার ক্ষমতায় আসলে দুটি জিনিস ছাড় দেয়া হবে না। একটা মানি লন্ডারিং আর আরেকটা দুর্নীতি।
তিনি বলেন, আমি একটা মেসেজ দিতে চাই। এত উন্নয়ন হয়েছে, এ রাস্তা দিয়ে কী শুধু আওয়ামী লীগ চলবে। বিএনপির ছেলেরাও চলাফেরা করবে, জামাতের ছেলেরা চলবে। এই রাস্তার পাশে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হবে, মেডিকেল কলেজ হবে। তার পাশে শেখ কামাল আইটি ইনিস্টিউট হবে। কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমি শুধু ফতুল্লা এলাকায় ছয়শ কোটি টাকার রাস্তা করেছি। আমরা ৫৮টি বড় বড় বিল্ডিং করে দিয়েছে স্কুলের৷

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দ্যেশ্য করে তিনি বলেন, ও মায়ের খবরই রাখে। সে কর্মীদের খবর কী রাখবে। আমার প্রশ্ন, কে সে। প্রায় ত্রিশটি পরিবার থেকে আমার কাছে ফোন করে কান্নাকাটি করেছে। আমি কী করবো। এখন তো সবাই আইনের অধীনে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার একজন ডাক্তার। আমি তাকে আরও একমাস আগে বলেছিলাম আমি চাই কোন নিরপরাধ লোক যেন মামলায় না জড়ায়। সে যে দলেরই হোক না কেন। এটা আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করতে চাই। যারা এগুলো ঘটিয়েছে ২০১৪-১৫ সালে আগুন সন্ত্রাস করেছিল। এটা আমাদের ভুল হয়েছে। ওদের তখনই বিচার করা দরকার ছিল।
তিনি বলেন, আমাদের বিএনপির তৎকালীন সভাপতি ছিলেন মামুন মাহমুদ। প্রফেসর মানুষ। এই যে কয়দিন আগে যিনি সভাপতি হলেন তিনি সভাপতি হবার আগে পল্টনে একটি যায়গায় তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা করা হলো। নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন ও তার ছেলে রিফাত নাকি হামলাকারীদের ঢাকায় গিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন এটি মামুন মাহমুদ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জের ওই সাবেক সাংসদের ছেলে তাকে দেখিয়ে দিয়েছে মারা জন্য। এটা প্রকাশ না হলে আরেকটা ত্বকী হত্যাকান্ড ঘটিয়ে আমাদের ফাঁসানের চেষ্টা করা হত।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের একজন এমপি ছিলেন। এক সময় জাতীয় পার্টি করতেন, তারপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি আবারও আওয়ামী লীগ হয়ে বিএনপিতে। এখন নাকি নতুন দলে ভীড়তে চাচ্ছে। তৃণমূলে, বিএনএফে নক করছেন এখন। এত বড় পল্টিবাজ তো তাই তাকে আর কেউ নিতে চাচ্ছেনা। তার আমলে আমাদের সুন্দর আলী ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আমাদের বিএনপির তৈমূর সাহেবের ছেট ভাই, কোন দল করত না। মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের বারো জন লোককে মারা হয়েছে। যারা মানবাধিকারের কথা বলে, আমাদের নজরুল ইসলাম সুইটকে জেলখানা থেকে রিমান্ডের নাম করে নিয়ে ডান্ডাবেড়ী পড়া অবস্থায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এরচেয়ে বড় আইনকে ধর্ষণ হতে পারে না।

গিয়াসউদ্দিনের মনোনয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, উনি নতুন নাটক করছেন। মনোনয়নপত্র জবা দিয়েছেন কি দেন নাই ঐটা আমার ব্যাপার না। মনোনয়নপত্র জমা না হওয়া পর্যন্ত ঐটা বাতিল করার কোন প্রশ্নই উঠেনা। এটা স্ট্যান্ডবাজি হচ্ছে। 

২০০৮ সালে আমরা ক্ষমতায়। আমি ২০১৪ সালে এমপি হয়েছি। জাতির পিতার কন্যা বলেছে কোন প্রতিহিংসা নয়। শয়তানের কাজ শয়তানি করা। আমরা ওদের মত হব না। কষ্ট হয়েছে, বুকে পাথর চাপা দেয়া আছে। কয়দিন আগে যারা মারা গেছে তাদের দু-চার জনের বাসায় গিয়েছি। তারা বলে ভাই, বিচার করবেন না। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ ছিল না। যখন তৈমূর ভাই, সিরাজ ভাই ও কালাম ভাইরা দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আমি পাশ করার পর বিএনপির সদ্য সাবেক সাংসদ সিরাজ ভাইকে সালাম করেছি। এটা ছিল নারায়ণগঞ্জের কালচার। সেসময় কোন সহিংসতা হয়নি। আমরা চেয়েছি সহবস্থানে থাকতে। কিন্তু হঠাৎ নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে চেঞ্জ আসে। ডিজিটাল যুগে দেশে আঠারো কোটি ক্যামেরা আছে। রাজনীতির নামে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নারায়ণগঞ্জে কোথায় ছিল আমরা জানতাম। দেখতে চেয়েছিলাম শুধু কী করে। এই ভদ্রলোক (গিয়াসউদ্দিন) সভাপতি হওয়ার পর কাঁচপুরে ঘটনা ঘটিয়ে ওরা আড়াইহাজার যায়। সেখানে এক পুলিশ সদস্যকে নির্মম ভাবে মারতে দেখা গেল। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হতেই পারে। কিন্তু আমরা কী পশু হয়ে গেলাম। ঢাকায় একজন পুলিশকে কী নির্মমভাবে কোপানো হল। এগুলো দেখেছি আমরা।

আপনারা জানেন, নারায়ণগঞ্জে ২০০১ থেকে ২০০৬ আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না। সে নির্বাচনে আমাকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হল পরে সেটা বদলে দেয়া হয়। আপা আমাকে ফোন করে বলল তুমি জিতেছ, আমি বললাম আমাকে হারিয়ে দেয়া হচ্ছে। সে রাতে আমাদের বহু লোককে এ্যারেস্ট করা হয় বন্দরে একজনকে পিটিয়ে মেরেই ফেলা হয়। আমি ডিসি অফিসে যাই, তখন সেখানে আর্মির একজন লোক এসে আমাকে বলল শামীম ভাই চলে যান, আপনাকে মেরে ফেলা হবে। আমিই সে নির্বাচনের পর প্রথম বলেছিলাম নির্বাচনে আর্মি হস্তক্ষেপ করেছে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল কী অত্যাচার হয়েছে। সে অত্যাচারের মাত্রা কল্পনা করা যায় না। আমার দাদার বাড়ি বায়তুল আমান, যেখানে আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে। সে বাড়িটা বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হল। আমাদের বাড়ি হীরা মহল ভাঙা হল, আগুন দেয়া হল। আমার বাবা যে চেয়ারে বসতেন সেটাতে পেশাব করা হল। আমার বড় ভাই সেলিম ওসমান, তিনি সকলের সাথে মিলেমিশে কাজ করেন। তার বাড়ি ও ফ্যাক্টরিতে হামলা করে তিনশ গরুর দুধের বান কেটে দেয়া হল। তাকে অস্ত্র দিয়ে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয়েছিল। সব মেনে নিয়েছি। যেটা মানতে পারি না সেটা হল আমার বিশজন লোক মারা গেছে বোমা হামলায়। বিএনপির অনেক বড় বড় নেতাকে আসামি করা হয়েছিল। তবে জ্ঞান ফেরার পর আমি বলেছিলাম তারা জড়িত না। কারণ আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম মিথ্যা বলব না।

তিনি বলেন, এই সংবাদ সম্মেলন আমি করতাম না, যারা মারা গেছে তাদের বাসায় আমি গেছি দু চারজনের। ওরা আমাকে বলেছে, ভাই আপনি কি বিচার করবেন না? নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে কোন অসভ্যতা জঙ্গি ছিলনা। যখন তৈমূর আলম খন্দকার, কালাম ভাই ছিলেন এমনকি যখন কমান্ডার সিরাজ ভাই এমপি ছিলেন তখনো এমন ছিলনা। নারায়ণগঞ্জে গত ১৪ বছরে কোন সহিংসতা নেই। নারায়ণগঞ্জ ৪, ৫ আসনে অন্তত কিছু হয়নি। কারণ আমরা উন্নয়ন করে মানুষকে খুশি করতে চেষ্টা করেছি। 
আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাই, আমি মানুষ। ফেরেশতার কোন ভুল নাই। যদি কোন ভুল করে থাকি ক্ষমা করে দেবেন আপনারা। আমি চাই কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন মামলার আসামি না হয়। কোন নিরপরাদ ব্যক্তি যদি এক ঘন্টার জন্যও শাস্তি পায় সেটা খারাপ। আমি পুলিশ প্রশাসনসহ সকলকে এ ব্যাপারে খেয়াল রাখতে অনুরোধ করি।
আগামী ১৫ দিন কিছু নির্মম ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড করার চেষ্টা করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চেষ্টা করা হবে। প্লিজ নারায়ণগঞ্জের ভাইয়েরা এগুলো করবেন না। যা করেছেন করে ফেলেছেন। আর না। নিরপরাদ কাউকে কিছু করবেন না কিন্তু যারা অপরাধী তাদের ছাড় দেয়া হবেনা। 
যারা আমাকে মারতে চান মারেন সমস্যা নাই, আমাকে একা মারেন। কাপুরুষের মত বোমা হামলা কইরেন না। মানুষ মাইরেন না এত।

তিনি বলেন, মানিলন্ডারিং দুর্নীতিবাজ এসব ক্ষেত্রে কোন ছাড় নেই। এই দুঃসময়ে যারা চালাকি করে বড় বড় জাহাজ গভীর সমুদ্রে রেখে দিয়েছেন ছাড় পাবেন না। দ্রব্যমূল্য কমান নাহলে কিছু ছাড় পাবেন না কারণ প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দাদা বলেছিলেন বাঘে ধরলেও ছাড়ে কিন্তু শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়বেন না। জনগণকে কষ্ট দেবেন এটা উনি মানবেন না। কভিডের সময় ৪০ লাখ মানুষের মাথায় ছাদ দিয়েছেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেনা। তবে কেউ যদি প্রার্থী হয় তাহলে তাকে বিদ্রোহী প্রার্থী নয় তাকে আমি স্পোর্টসম্যান মনে করবো। বিএনপি নির্বাচনে আসবে কিনা এ প্রশ্নে শামীম ওসমান বলেন, বিএনপি যদি স্টুপিড না হয় তাহলে নির্বাচনে আসবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি চন্দন শীল, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা প্রমুখ।