কক্সবাজারের রামুতে পাহাড়-বালু খেকো আবু তাহেরের অস্ত্রের মহড়া থেমে নেই। তার ডেরায় র্যাব-১৫, উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ অভিযানের পর তাহের সিন্ডিকেট দিনের বেলায় আত্নগোপনে থাকলেও রাতে পাহাড়ী এলাকায় অস্ত্রের মহড়া দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তার ডেরায় অভিযান, মামলা দায়ের করায় পানেরছড়া বিট কর্মকর্তা মো. জলিলুর রহমানকে হত্যার হুকির অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার বিট কর্মকর্তা বাদী হয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অস্ত্রসহ বহু মামলার আসামী পাহাড় খেকো আবু তাহেরের বিরুদ্ধে রামু থানায় সাধারণ ডাইরি (জিডি)'র আবেদন করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রামু থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. আবু তাহের দেওয়ান বলেন, একজন সরকারী কর্মকর্তাকে হত্যা হুমকি দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। নিশ্চয়ই তাঁর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব পুলিশের।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবু তাহের একজন চিহ্নিত অপরাধী। তার বিরুদ্ধে পূর্বেরও মামলা রযেছে। সহসাই তাকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
বনবিভাগ ও স্থানীয়দের সুত্র মতে, কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের পানেছড়া রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি এলাকার নুর হোসেনের ছেলে আবু তাহেরের নেতুত্বে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু-পাহাড় কেটে মাটি পাচার করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত রোববার কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জের পানেরছড়া বিটের মরিচ্যা ঘোনা এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা। ওই সময় পাহাড় কাটার কাজে ব্যবহৃত ১০০ ফুট লম্বা কালো হুস পাইপ, ২০ ফুট লম্বা থ্রেড পাইপ ও সাবমার্সিবল পাইপ মেশিনের মুখে অবস্থিত লোহার খন্ড জব্দ করা হয় এবং পাহাড় ধ্বংস এলাকা কর্ডন করে লাল ফ্লাগ দেয়া হয়। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে একটি অবৈধ মিটার হতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের পানেরছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা রতন লাল মহত জানিয়েছেন, গত রোববারের অভিযানের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিট কর্মকর্তা বাদি হয়ে আবু তাহেরসহ দুইজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবু তাদের গংদের গ্রেফতার করতে র্যাব-১৫, রামু থানা পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন এই কর্মকর্তা।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলম ও রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা বলেন, আবু তাহের একজন চিহ্নিত পাহাড়, বালু ও জবরদখলকারী। তার বিরুদ্ধে বন আইনের মামলা ছাড়াও রামু থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তারা আরো জানান, ইতিমধ্যে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে মামলা করায় গত ২২ নভেম্বর পানেরছড়া বিট কর্মকর্তা জলিলুর রহমানকে মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেন। বিষয়টি লিখিত ভাবে বন আদালত রামু ও গতকাল মঙ্গলবার রামু থানায় একটি সাধারণ ডাইরি (জিডি)'র আবেদন করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বিকেলে জিডি তদন্তকারী কর্মকর্তা, রামু থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সন্তোষ কা মল্লিকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিট কর্মকর্তার আবেদনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
নানা ভাবে যোগাযোগ করেও অভিযুক্ত আবু তাহেরের মুঠোফোনে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।