চাঁদপুর পাক হানাদারমুক্ত হয় ৮ ডিসেম্বর। তাই এই দিনটিকে চাঁদপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ থেকে ৩০দিন ব্যাপি আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার উদ্বোধন করা হবে। বিগত ৩১ বছরের ন্যায় এ বছরও চাঁদপুরে ৩২তম মুক্তি যুদ্ধের বিজয় মেলা ৮ ডিসেম্বর শুরু হবে।
চাঁদপুর মুক্ত দিবসে শহরের আউটার স্টেডিয়ামে শুরু হবে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা-২০২৩। ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা আগামী একমাসব্যাপী ৮ জানুয়ারী পর্যন্ত এ মেলা চলবে। মেলার স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান লে. (অব.) এমএ ওয়াদুদ এ তথ্য দিয়ে নিশ্চিত করেন।
৮ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে মেলার উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি। মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। বিশেষ অতিথি থাকবেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আরহাজ্ব ওচমান গণি পাটওয়ারী ও চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র এডভোকেট মো: জিল্লুর রহমান জুয়েল প্রমুখ।
তিনি বলেন, মহান এই মুক্তিযুদ্ধকে স্মৃতিময় ও নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে ও জানাতে ১৯৯২ সাল থেকে আমাদের এ আয়োজন চলমান আছে। আশা করি সকলের সহযোগিতায় এবছরও আমাদের আয়োজন সফলতা পাবে এবং সুন্দরভাবে কার্যক্রম চলবে।
বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের মহাসচিব হারুন আল রশীদ জানান, ইতিমধ্যে মেলার প্রায় সকল কাজ শেষ হয়েছে। সর্বশেষ প্রস্তুতিমূলক সভা বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা যায়, মেলাতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ’৭১ এ’স্টলসহ দেড় শতাধিক স্টল স্থান পাবে। প্রতিদিন মেলায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীদের অংশগ্রহণে নৃত্য, সংগীত ও নাটক মঞ্চস্থ হবে। মেলায় পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সাদা পোশাকে ও মেলার আইন শৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা সর্বদা নজরদারিতে থেকে দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তা দিবেন।
১৯৭১ সালের এই দিনে চাঁদপুর পাক হানাদার বাহিনীর বলয় থেকে মুক্ত হয়েছিল। ভারতের মাউন্টেন ব্রিগেড ও ইস্টার্ন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের যৌথ আক্রমণে ৩৬ ঘণ্টা তীব্র লড়াইয়ের পর ৮ ডিসেম্বর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলা এবং বিনা প্রতিরোধেই চাঁদপুর মুক্ত হয়। চাঁদপুর থানার সম্মুখে বিএলএফ বাহিনীর প্রধান মরহুম রবিউল আউয়াল কিরণ প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।
অপর দিকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৭ এপ্রিল চাঁদপুরে দখলদার বাহিনী দুটি বিমান থেকে সেলিংয়ের মাধ্যমে প্রথম আক্রমণ শুরু করে। প্রথম দিনের হামলায় চাঁদপুর শহরের পুরান বাজারের একজন নারী পথচারী নিহত হন। পরদিন ৮ এপ্রিল বিকেলে প্রায় ৫শ’ পাকসেনা বোঝাই একটি বহর চাঁদপুর আসে এবং শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে চাঁদপুর কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে।
এই স্কুলের মাঠে এক বৃদ্ধাকে গুলি করে হত্যা করে তারা। ওই দিন রাতেই মুক্তিযোদ্ধা ও হানাদার বাহিনীর সাথে গোলাগুলি হয়। এসময় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মারাত্মক আহত হন। ৯ এপ্রিল ভোরে পাকবাহিনী শহরের প্রবেশ করে চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ইসমাইল হোসেন ভলন্টিয়ার (৫৫) নামে অপর এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া, হাজীগঞ্জের অলীপুর গুদারাঘাট, বালাখাল খেয়া ঘাট, ফরিদগঞ্জের বাসারা ও গাজীপুরসহ মোট ২৬টি সম্মুখযুদ্ধ হয়েছিল। এর মাঝে চলে খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। তারপর দীর্ঘ সময় যুদ্ধের পর মেলে মুক্তি।
তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমা জেলায় সর্বশেষ যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল ৭ ডিসেম্বর লাকসাম ও মুদাফফরগঞ্জ তখন মুক্ত হয়। যৌথ বাহিনী হাজীগঞ্জ দিয়ে ৬ ডিসেম্বর চাঁদপুর আসতে থাকলে মুক্তিসেনা কর্তৃক হানাদার বাহিনী প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ৩৬ ঘণ্টা সম্মুখ যুদ্ধের পর পালিয়ে যায় পাকবাহিনী, মুক্ত হয় চাঁদপুর।