প্রয়াত সৈয়দ আশরাফের তিন ভাই-বোন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী

প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ

  কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রয়াত সৈয়দ আশরাফের আসনে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর তিন ভাই-বোন। এক পরিবারে একই আসনে বোন নৌকা এবং দুই ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি এখন জেলার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের আলোচনার খোরাক। বিষয়টি বিব্রতকর, বলছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তবে ভোটারেরা বলছেন, এদের মধ্যে থেকে যোগ্য প্রার্থীকেই বেঁছে নিবেন তারা।

কিশোরগঞ্জ-১ আসনে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য ছিলেন জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারী উপ-নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হন তার ছোট বোন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন লিপি। এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তার বড় ভাই সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম এবং চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু। প্রতীক বরাদ্দের আগেই এক পরিবারের তিনজন প্রার্থীর বিষয়টি নিয়ে এ আসনের দুই উপজেলা সদর-হোসেনপুরসহ জেলা জুড়ে হচ্ছে আলোচনা-সমালোচনা।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ভোটার আলম বলেন, কিশোরগঞ্জ সদরে সৈয়দ আশরাফ ভাইয়ের পরববারের তিনজন ভাই-বোন প্রার্থী। এখন আমরা সদরের ভোটার হিসাবে অত্যন্ত দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছি যে, আমরা কাকে ভোট দিবো, কাকে ভোট দিবোনা। আমরা দেখবো যাচাই করবো, যাকে আমাদের কাছে যোগ্য মনে হয় তাকেই আমরা ভোট দিবো। সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা কিশোরগঞ্জে যারা আওয়ামী লীগ করি, আমাদের অনুভূতির নেতা সৈয়দ আশরাফ। আশরাফ ভাইয়ের অনুসারী হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌকা যার হাতে উঠিয়ে দিয়েছেন, আমরা সকলেই তাকে ভোট দিয়ে ৭ই জানুয়ারি নির্বাচিত করবো।

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সাংসদের চাচাতো ভাই জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশে এবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। জনগণ যাকে যোগ্য মনে করে তাকেই ভোট দিবে, সেখানে পরিবারের বিষয় নেই। আমি মনে করি আমার সাথে জনগণের সম্পৃক্ততা আছে। আমার সাথে নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা আছে। নেতা-কর্মীদের সুখ-দুঃখে আমি পাশে ছিলাম। সেক্ষেত্রে, যেহেতু এটা আদর্শিক লড়াই, এবং জনগণের ভোটের লড়াই, সেক্ষেত্রে আমি আশাবাদী যে, যদি তাঁরা যোগ্য হয়ে থাকে জনগণ তাদের দিকে তাকাবে, আর যদি আমি যোগ্য হয়ে থাকি নেতা-কর্মীসহ জনগণ আমার দিকে তাকাবে। সেখানে পরিবারের কোন বিষয় নেই।

স্বতন্ত্র প্রার্থী সাফায়েতুল ইসলাম বলেন, আমি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান। আমার কাছে আওয়ামী লীগ একটি অনুভুতি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কথা বলেই আমি ভোট চাইবো। আমাকে যদি ভোটাররা যোগ্য মনে করেন তাহলে আশাকরি আমাকে ভোট দিবেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট জিল্লুর রহমান বলেন, রাজনীতির শুদ্ধ পুরুষ খ্যাত সৈয়দ আশরাফ এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। সে হিসেবে এ আসনটি আমাদের জন্য একটি আবেগের আসন। আমরা কিছুটা বিব্রত আছি এই কারনে, একই পরিবার থেকে তিনজন প্রার্থী। সেটা আমাদের জন্য অনভিপ্রেত। আমরা আশা করিনি এমন হবে। তবে, আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমার যে দায়িত্ব-কর্তব্য আমি দলের বাইরেতো যেতে পারিনা। নৌকা আমাদের দলীয় প্রতীক। সেটা বঙ্গবন্ধুর প্রতীক। শেখ হাসিনার প্রতীক। যেভাবেই হোক যাকে নৌকা দিয়েছে, আমরা দল হিসেবে অন্ততপক্ষে তার পিছনে থাকাটাই আমি মনে করি। দলীয় প্রতীকের বাইরে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হবে না। সাধারণ কর্মীরা যেতে পারে, কিন্তু পদধারী যারা তাদের নৌকার পক্ষে থাকা উচিত এবং আমাদের মেসেজটা তাদের কাছে বলা হয়েছে যে, যারা পদধারী দলীয় পদ-পদবী ধারন করে তারা যেন অন্ততপক্ষে নৌকার বিরুদ্ধে না যায়।

সৈয়দ পরিবারের তিনজন ছাড়াও এ আসনে ভোটে লড়বার কথা রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ আট জন। কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৩ হাজার ৮ শত ৫০ জন।