কক্সবাজারের বনভূমি ঝুঁকিতে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৮ হাজার বনভূমি। প্রকৃতি ও প্রতিবেশ রক্ষায় বাকি বনভূমিগুলো সমুন্নত রাখতে না পারলে, রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে আগামী প্রজন্মের বেঁচে থাকা কঠিন হবে। বুধবার কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভের হিমছড়ি ইকোপার্কে আয়োজিত 'সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্প'র উপকার ভোগীদের বিকল্প জীবিকায়নে ইকো-রিক্সা ও সেলাই মেশিন বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) ও কক্সবাজারে সবুজ বেষ্টনী সৃজন, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার এবং ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক বিপুল কৃষ্ণ দাস এসব কথা বলেন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলমের সভাপতিত্ব ও রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সিএফ আরও বলেন, বন দেশের সম্পদ, আর দেশ জনতার। সে হিসেবে বন রক্ষা জনতারই দায়িত্ব। স্বল্প সংখ্যক বনকর্মী দিয়ে লক্ষ একর বনভূমি রক্ষা অসাধ্য। ব্যক্তি দায়িত্ববোধ থেকে নিজেদের সম্পদ রক্ষায় নিজেরা এগিয়ে না এলে প্রকৃতি কেবল ধ্বংসই হবে। বনের কিনারে বাস করলেও বনের উপর জীবিকায়ন নির্ভরতা একেবারে কমাতে হবে। বিকল্প জীবিকায়নে যুক্ত হয়ে বন ও প্রকৃতি রক্ষা করা গেলে সুরক্ষিত থাকবে হাতিসহ বন্যপ্রাণী।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন সংরক্ষক বিপুল কৃষ্ণ দাস বলেন, হিমছড়ি পার্ক হতে বছরে কোটি টাকা আয় হয়। এখানকার টাকা এখানে ব্যয় করে বন ও প্রকৃতি রক্ষায় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনটি উপলক্ষ নিয়ে বন বিভাগ সামনে এগুচ্ছে- বন রক্ষা, বনভূমি রক্ষা, পাশাপাশি বনের আশপাশে বসবাসকারী লোকজনের দারিদ্র্যতা নিরসন করা।
ন্যাচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) কক্সবাজারের উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. শফিকুর রহমান বলেন, কালের বিবর্তনে লোকালয় হাতির আবাসস্থলে ঢুকে গেছে। এতে চলাচলে বাঁধার মুখে পড়ছে, হাতি। ফলে হাতিসহ বন্যপ্রাণীর সাথে মানুষের দ্বন্দ্ব বেড়েই চলছে প্রতিনিয়ত। শুধু এটা নয়, বনের কিনারে লোকালয় গড়ার পাশাপাশি জীবিকায়নে বনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে অধিবাসীরা। ফলে বন ও বন্যপ্রাণী দিন দিন ক্ষতির মুখে পড়ছে। এ থেকে উত্তরণে বনের কাছে বসবাসকারী লোকজনকে বন নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয় বন অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় বিকল্প জীবিকায়নের উৎস হিসেবে অটোরিকশা, সেলাই মেশিন, গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার মূলধন বিতরণ করা হচ্ছে।
স্বাগত বক্তব্য সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জীবনমান উন্নয়নে কালভার্ট, নলকূপ স্থাপন, সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা হচ্ছে। বন বিভাগের এসব উদ্যোগের বিনিময় হিসেবে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করা দায়িত্ব স্থানীয়দের। বন্যপ্রাণী না থাকলে পরাগায়ন হবে না, প্রকৃতি বাড়বে না। তাই নিজেদের প্রয়োজনে বন ও প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসা কর্তব্য।
ডিএফও মো. সারওয়ার আলম বলেন, বনের সাথে বাস করতে হলে বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষা করেই থাকতে হবে। প্রকৃতি অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব হলে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বাড়বে। তাই বনের প্রকৃতি ধ্বংস না করে বিকল্প জীবিকায়নে হাটা নিশ্চিত করা গেলে কক্সবাজার পূর্বের সবুজ বেষ্টনী ফিরে পাওয়া সম্ভব। সে লক্ষ্য নিয়ে শত কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার।
এসময় আরো বক্তব্য রাখেন,কক্সবাজার সদরের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) শ্যামল কুমার ঘোষ, রাজারকুল- উখিয়ার সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) আনিসুর রহমান, সিএমসি সহ-সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মাবুদ, উপকারভোগীদের মাঝে চার নারী, দুই পুরুষ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫টি অটোরিকশা, ২০টি সেলাই মেশিন, ৭৫ পরিবারে গ্যাস সিলিন্ডার ও চুলা, ৫টি হিট কুকার ও নগদ ১৯ লাখ ৫০ হাজার বিতরণ করা হয়েছে।