ঢাকা ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বার বার বেয়নেটের খোঁচা খেয়েও তিনি বললেন, “জয় বাংলা”

বার বার বেয়নেটের খোঁচা খেয়েও তিনি বললেন, “জয় বাংলা”

বিষাক্ত বেয়নেটের ২৯ খোঁচাও তাঁকে দমাতে পারলো না। যতবারই তারা আদেশ করলো, বল্, “পাকিস্তান জিন্দাবাদ,” ততবারই তিনি বললেন, “জয় বাংলা”। যতবার জয় বাংলা, ততবারই বেয়নেটের খোঁচা। শেষমেষ বিরক্ত হয়ে গুলি করা হলো তাঁকে। এভাবেই ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট শহীদ হলেন নেত্রকোণা জেলার একজন অন্যতম দেশপ্রেমীক বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আরজ আলী।

জানা যায়, অধ্যাপক আরজ আলী ১৯৪৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন নেত্রকোণা কলেজের দর্শন বিষয়ের অধ্যাপক। অবস্থান করতেন কলেজের শিক্ষক হোস্টেলে।

১৯৭১ সাল। টালমাটাল দেশের অবস্থা। দেশ প্রেমীকরা, কেউ এপারে, কেউ-বা ওপারে (ভারতে) অবস্থান করে দেশের মুক্তির জন্য চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। অধ্যাপক আরজ আলী ছিলেন তাদেরই একজন। জানতে পেরে পাকিস্তানী সেনারা ১২ আগস্ট নেত্রকোণা কলেজ হোস্টেলে হানা দেয়। তাঁকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয়-সীমান্ত উপজেলা দূর্গাপুরের “বিরিশিরি” সেনা ক্যাম্পে। সেখানে তাঁকে ঝুলিয়ে টানা তিনদিন ধরে নির্যাতন চালায়। তাঁর মুখ থেকে “পাকিস্তান জিন্দাবাদ” শোনার জন্য বর্বর পাকিস্তানী সেনারা তাঁর শরিরে ব্যয়নেট দিয়ে খোঁচায়। কিন্তু অধ্যাপক আরজ আলী প্রতিবারেই বলেন, “জয় বাংলা”। খোঁচায় খোঁচায় এক সময় তাঁর শরির অবশ হয়। ওরা মনে করে, বেঁচে নেই অধ্যাপক আরজ আলী। ওরা তাঁকে ফেলে দিয়ে আসে সুমেশ্বরী নদী তীরে। কিন্তু তখনো যে তাঁর দেহে প্রাণ আছে। খবর পেয়ে ছুটে আসে বর্বর সেনারা। এখানে তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃত্যূকালেও তাঁকে ক্ষিণস্বরে বলতে শোনা যায়, “জয় বাংলা”।

শহিদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আরজ আলী’র ভ্রাতুষ্পুত্র সুসং সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার চাচার মুখ থেকে পাকিস্তান জিন্দাবাদ শোনার জন্য পাকিস্তানী সেনারা তাঁকে ২৯ বার বেয়নেট দিয়ে খোঁচা দেয়। প্রতিবারেই তিনি বলেন, জয় বাংলা। তিনি আরো বলেন, অধ্যাপক আরজ আলী ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলনে জনমত গঠণে কাজ করেন। উন-সত্তরের গনঅভ্যূত্থানে অংশ গ্রহণ ও স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক হিসেবেও কাজ করেন তিনি। সর্বশেষে ১৯৭১ সনে তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেন। এই খবর জানতে পেরে পাকিস্তানী সেনারা ১৯৭১ সালের ১২ আগস্ট তাঁকে নেত্রকোণা কলেজ হোস্টেল থেকে ধরে আনে, অমানুষিক নির্যাতন চালায়। ১৬ আগস্ট দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর তীরে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

জানা যায়, ‘অধ্যাপক আরজ আলী’ সরকারের গেজেটভূক্ত একজন শহীদ বুদ্ধিজীবী। সরকার তাঁর স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছে। স্থানীয়ভাবে তাঁর স্মৃতি রক্ষায় ১৯৭৩ সালে দুর্গাপুরবাসি দুর্গাপুর পৌর শহরের কালীমন্দির মোড় থেকে সুসং মহাবিদ্যালয়ের সন্মুখ হয়ে বেলতলী মোড় পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আরজ আলীর নামে নামকরণ ও নামফলক বসানো হয়। পরবর্তীতে প্রশাসনিকভাবে সড়কটির নামকরণ ও নামফলক স্থাপনের জন্য ২০১৬ সালে নেত্রকোনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সুপারিশসহ এলজিইডি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। দীর্ঘদিনেও প্রস্তাবটির সুরাহা হয় নাই। প্রস্তাবটির আশু সোরাহা হোক, এই দাবি দুর্গাপুরবাসির।’

খোঁচা
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত