ঈশ্বরদীতে পিটিয়ে ভেঙে দেওয়া হলো ছাত্রলীগ নেতার দুই পা
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:৪৮ | অনলাইন সংস্করণ
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
পাবনার ঈশ্বরদীতে পিটিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ছাত্রলীগ সভাপতির পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের সিএনজি পাম্পের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
ছেলের দুই পা ভেঙে দেওয়ার খবর পেয়ে সেই শোক সহ্য করতে না পেরে মারা গেছেন ছাত্রলীগ নেতা আলমগীর হোসেনের বাবা আকমল হোসেন (৬৫)।
মুলাডুলি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর হোসেনসহ ৬/৭ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে দাশুরিয়া ডিগ্রী অনার্স কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার বিকেলে মুলাডুলি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর হোসেন ৭/৮ জন কর্মী সমর্থক নিয়ে মুলাডুলি মুক্তমঞ্চে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় যোগ দেওয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন।
পথিমধ্যে দাশুড়িয়া এলাকায় পৌঁছালে দাশুড়িয়া অনার্স কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা আলমগীর হোসেন ও তার কর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং এলোপাথাড়ি পেটাতে থাকে। এতে আলমগীরের দুই পা ভেঙে যায় এবং তার কয়েকজন সমর্থক গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। তবে আলমগীরসহ দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা।
ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মল্লিক মিলন মাহমুদ তন্ময় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মুলাডুলি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ আয়োজিত আজকের বর্ধিত সভায় আমিসহ উপজেলা ছাত্রলীগের নেতারা অতিথি ছিলেন। সেখানে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন এর সভাপতিত্ব করার কথা ছিল। বর্ধিত সভায় যোগ দেওয়ার প্রাক্কালে দাশুড়িয়া কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও তার অনুসারীরা আলমগীরের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং তার দু’পা ভেঙে দেয়। আলমগীরের দুই পা ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে তার বাবা হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন। আমরা উপজেলা ছাত্রলীগ এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উপজেলা ছাত্রলীগ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে তাদের স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ জানাবে।
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিল্টন হোসেন জানান, আহত আলমগীরকে নিয়ে এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান করছি। তার দুই পা-ই ভেঙে গেছে।
মূলাডুলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন মিঠু বলেন, আলমগীর ও ফাহিম দুজনই আমার নিকট আত্মীয়। কলেজ সংক্রান্ত কোনো বিষয় নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল বলে শুনেছি। সেই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই আজকের এই ঘটনা।
মুলাডলি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম মালিথা জানান, ঘটনাটি ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে। ছাত্রলীগ নেতাদের কাছে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোনোভাবে কাম্য নয়।
এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের মুঠোফোনে বার বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরদী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, এ ঘটনা ঐ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, এই ঘটনায় অভিযুক্ত ফাহিমকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সন্ধ্যায় ঈশ্বরদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল আহমেদ ফাহিমকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।