আজ ১৪ ডিসেম্বর, সাভার ও আশুলিয়া হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সারাদেশের ন্যায় মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের অধিকার আদায় এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন সাভারের প্রায় আড়াইশ নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা। এদিনেই কিশোর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর টিটোর আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে হানাদার মুক্ত হয় সাভার।
শহীদ গোলাম দস্তগীর টিটো মানিকগঞ্জ জেলার সেওতা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে। মহান মুক্তিযুদ্ধে টিটোর ভাই তোজোও শাহাদৎ বরণ করেন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের সময় ভারতের অন্তিম নগর হতে ২নং সেক্টরের অধীনে ৫২ জন গেরিলা আশুলিয়ার গাজীবাড়ী এলাকার নেঁদু খার বাড়িতে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করেন। এ সময় দেড় মাস প্রশিক্ষণ দেয়া হয় কয়েক শতাধিক নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা আশুলিয়ার তৈয়বপুর ক্যাম্পে বিশিষ্ট চলচিত্রকার নাছির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বে আরও একটি ক্যাম্প তৈরি করে।
মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে উত্তরবঙ্গ ও টাঙ্গাইল হতে পাকবাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে সাভারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করে। ১৪ ডিসেম্বর সকালে আশুলিয়ার ঘোষবাগ এলাকায় পাকবাহিনীর একটি সশস্ত্রদল অবস্থান নেয়। এমন খবর পেয়ে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নেতৃত্বে দুইশ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ঘোষবাগ এলাকার শ্রীগঙ্গা কাঁঠালবাগানে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকবাহিনীর মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চলার পর পাকিস্তানী সেনারা বাঙালী যোদ্ধারের দাপটে পিঁছু হটতে শুরু করে। এ সময় বিজয়ের উল্লাসে মেতে ওঠেন মুক্তিযোদ্ধারা।
এসময় শত্রু হত্যার সাফল্যে উচ্ছাসিত হয়ে বাংলা মায়ের দামাল ছেলে গোলাম দস্তগীর টিটো সহযোদ্ধাদের নিষেধ উপেক্ষা করে গুলি করতে করতে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ পাকিস্তানী বাহিনীর একঝাঁক বুলেটের আঘাত থামিয়ে দেয় কিশোর টিটোর প্রাণ। মুহূর্তেই মাটির কোলে লুটিয়ে পড়ে সাহসী টিটোর দেহ। টিটোর জীবনের বিনিময়ে শত্রুমুক্ত হয় সাভার ও আশুলিয়া।
পরবর্তীতে শহীদ টিটোকে সমাহিত করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীত পাশে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ডেইরি গেট এলাকায়। তার মহান এই আত্মত্যাগের কথা আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বরণ করে সাভারবাসী।
তাই তো দিবসটিকে স্মরন করে প্রতিবছরই বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি শহীদ টিটোর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করেন।