২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর পৈতৃক ভিটা ছাড়া অস্থাবর সম্পদের পরিমান ৪৪ লাখ ৪২ হাজার ২৯০ টাকা থাকলেও বর্তমানে স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে সম্পদ রয়েছে ৭ কোটি ৪১ লাখ ২৭ হাজার ৩৬৭ টাকার। ১৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৮৫ হাজার ৭৭ টাকার।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে উঠে এসেছে এমন তথ্য। বিশ্লেষকেরা বলছেন রাজনীতিবিদদের সম্পদ কিভাবে এত বেড়ে যায় তা যেমন জনগণ ওয়াকিবহাল নয়, তেমনি সরকারের পক্ষ থেকেও এর তথ্য বের করার চেষ্টা করা হয় না কখনো। এটা শুধুমাত্র কাগজেই বিদ্যমান।
২০০৮ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে তাড়াইল-করিমগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছেন তিনি।
সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী ২০০৮ সালে মুজিবুল হক চুন্নুর পৈতৃক ভিটা ছাড়া নগদ, ব্যাংক ও বিভিন্ন অস্থাবর সম্পদ মিলিয়ে মোট অর্থ ছিলো ৪৪ লাখ ৪২ হাজার ২৯০ টাকা। এর বাইরে স্ত্রীর নামে নগদ, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক মিলিয়ে ১৯ লাখ ৯ হাজার ৯৩৩ টাকা এবং টঙ্গীতে ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা মূল্যের ৫ কাঠা জমি।
২০২৩ সালে দাখিল করা হলফনামায় নগদ, ব্যাংক ও আসবাব মিলিয়ে চুন্নুর অস্থাবর সম্পদের পরিমান দাঁড়ায় ৪ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার ৯১৭ টাকা ও ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দামের গাড়ি। স্থাবর সম্পদ রয়েছে, ঢাকার পুর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট ও কিশোরগঞ্জে মিলিয়ে মোট ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫০ টাকা মূল্যের জমি। এছাড়াও রয়েছে ৫৮ তোলা স্বর্ণ।
বর্তমানে তাঁর স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র, নগদ টাকা ও ব্যাংকে মিলিয়ে রয়েছে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৮৪ হাজার ৭৬০ টাকা ও ২৯ ভরি স্বর্ণালংকার। রয়েছে ঢাকার লালমাটিয়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ১৫ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং ঢাকাতেই ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা মূল্যের একটি প্লট। পরিসংখ্যান বলছে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর, ১৫ বছরে চুন্নু ও তার স্ত্রীর অর্থ-সম্পদ বেড়েছে। দুজনেই লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের করিমগঞ্জ উপজেলার একজন ভোটার জানান, আমাদের এমপি টানা তিনবার পাশ করেছেন। এবার নতুন করে আবার দাঁড়াচ্ছেন। কিন্তু তার অর্থ-সম্পদের হিসাব হলফনামায় যে কি দিয়েছে তা আমাদেরতো জানা সম্ভব হয়না। বা আমরা এটা জানিওনা। আমাদেরতো আর বলেনা। আর আমাদের এটা জানার সুযোগও নাই।
সমাজের সুশীল ব্যাক্তিদের মতে এমনভাবে সম্পদ বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক। তাছাড়া, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায়ও এমনা ঘটছে বলে মনে করেন তাঁরা।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও ছড়াকার জাহাঙ্গীর আলম জাহান জাহাঙ্গীর আলম জাহান বলেন, "জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা যেসকল দৃশ্য দেখতে পাই, যারা প্রার্থী হন তারা যে সম্পদের বিবরণ দেন বাস্তবিক অর্থে তা প্রকৃত সম্পদের সাথেও এর কোন সামঞ্জস্য থাকেনা। তার হয়তো আরও অনেক বেশি সম্পদ আছে। যা তিনি চেপে যান, চেপে গিয়ে সামান্য সম্পদ সেখানে প্রদর্শন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যদি নির্বাচিত হয়ে যেতে পারেন, নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা যে জিনিসটি লক্ষ্য করি, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তার পাঁচ বছরের মেয়াদ কালে তার সম্পদ অনেক পরিমান, একশো গুন পঞ্চাশ গুন বেড়ে যায়। এর কোন স্বচ্ছতা নেই এবং জবাবদিহিতার আওতায়ও এগুলোকে আনা হয়না। যদিও প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় এসব বিষয় আসে টকশোতে কথাবার্তা হয় বাস্তবে এর কোন প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনা।"
কথা সাহিত্যিক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক ডাঃ দীন মোহাম্মদ বলেন, "আমরা একটা জিনিস দেখি, একজন সংসদ সদস্য পরবর্তী বছর যখন আবার নির্বাচনী হলফনামা দাখিল করেন, তখন তার সম্পদ বেড়ে যায়। পরের পাঁচ বছরে আরও বেড়ে যায়। একজন পার্লামেন্টের সদস্য উনিতো শুধু আইন প্রনয়ণ করবেন সংসদে, উনারতো অন্যকোন পেশা থাকার কথ না। কি করে সম্পদ বেড়ে যায়, এ বিষয়ে জনগণও ওয়াকিবহাল থাকেনা এবং সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়টা কোন তথ্য বের করার চেষ্টা করা হয়না। এটা খুবই দুঃখজনক। সরকারিরযে সমস্ত সংস্থাগুলো আছে, দুদক এটা খুঁজতে পারে, এনবিআর আছে তারা এটা খুঁজতে পারে। আমাদের ব্যাংক সেক্টর খুঁজতে পারে। সুতরাং, প্রত্যেকটা সেক্টর যদি হলফনামা নিয়ে কাজ করে তাহলে এগুলো গোপন করতে পারবেনা।"
২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবার জোটের সমঝোতায় কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নাসিরুল ইসলাম খানকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছে।