ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বীর নিবাস নির্মাণে অনিয়ম 

কাউখালীতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

কাউখালীতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন

কাউখালীতে বীর নিবাস নির্মাণে ঠিকাদারের অনিয়মের ফলে বীর পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন। সরকারের বিশেষ পরিকল্পনায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য দেশব্যাপী বীর নিবাস নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে সরকার । এই ধারাবাহিকতায় পিরোজপুর জেলার কাউখালীতে দুই দফায় ৩৫ টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য বীর নিবাস নির্মাণ করার জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয় । এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই সমস্ত গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু করেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।কিছু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয়ে

এই সমস্ত নির্মাণের কাজ শেষ করে বীর নিবাস বুঝিয়ে দেন কর্তৃপক্ষের কাছে । অপরদিকে ইলমান বিল্ডার্স এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গৃহ নির্মাণের কার্যাদেশ পাওয়ার পরে ওই সমস্ত সুবিধাভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পুরাতন বাসস্থান অপসারণ করে বরাদ্দকৃত নতুন বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শুরু করে। কিছুদিন পর নামে মাত্র কিছু কাজ করে ওই সমস্ত ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ করে ফেলে রেখে চলে যায়। এরপর বছর পার হয়ে গেলেও নতুনভাবে শুরু করে নাই নির্মাণ কাজ।

যার ফলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো নতুন ভবনের আশায় পুরাতন ঘর হারিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এমন অভিযোগ তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গুলো। এমন একজন ভুক্তভোগী উপজেলার সাহাপুরা গ্রামের মৃত্যু বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার আলী পরিবারের সন্তান প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, তার বাবা মারা যাওয়ার পরে তিন ভাই ও এক বোন নিয়ে তার মা পথ চলা শুরু করেন।একে একে দুই ভাই আলাদা ভাবে ঘর সংসার করেন এবং বোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন।

আর তিনি নিজে প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বাবার পুরানো ঘরে বসবাস করতেন। সরকারিভাবে তার মা হেলেনা বেগম এর নামে সরকারিভাবে বীর নিবাস বরাদ্দ হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইলমান বিল্ডার্স এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মামুন হোসেন তার পুরনো ঘর অপসারণ করে দিতে বলেন। সেই মতে পুরান ঘর ভেঙ্গে ফেলে তার পাশেই পলিথিন কাগজ ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে খুপরি ঘর তৈরি করে মা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন তিনি।

এরপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে সামান্য কিছু কাজ করার পরে ওইভাবে ফেলে রেখে চলে যায়। বছর পার হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আর কাজ শুরু করে নাই।

যার ফলে পরিবার নিয়ে বছর ধরে ওই খুপরি ঘরের ঠান্ডা মাটি ও বাতাসের মধ্যেই বসবাস করতে হয় তার পরিবার ।

যে কারনে তার বৃদ্ধ মা হেলেনা বেগম শীতের ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন আছে। এছাড়াও সাহাপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশু ওয়ানে পড়ুয়া ছোট ছেলে রায়হান ঠান্ডা জনিত গলার ব্যথা হওয়ায় ডাক্তার বলেছে অপারেশন করার জন্য। একমাত্র মেয়ে কেউন্দিয়া স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী রাইদা ঠান্ডা জনিত কারণে নানা রোগে আক্রান্ত।

পুরো পরিবারটি এখন যেন অসুস্থ। অথচ দুয়ারে দুয়ারে ধরনা দিয়েও জানতে পারে নাই কবে শেষ হবে ঘর নির্মাণের কাজ।

এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা পিরোজপুর জজ আদালতের এপিপি এড: জহুরুল ইসলাম বলেন, একদিন পরেই ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আনন্দে উল্লাসিত হবে দেশ অথচ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এইভাবে মানবতার জীবনযাপন করবে এটি দুঃখজনক।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বলে তিনি মনে করেন।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী

মামুন হোসেনের মুঠোফোনে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করে নাই।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়েতে সূত্রে জানা যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার উদ্দিন এর পরিবারের নামে বীর নিবাস নির্মাণের জন্য ২১ -২২ অর্থবছরে ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজ শেষ করার সময় কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ সমাপ্ত করতে পারে নাই। এ ব্যাপারে অফিসিয়াল চিঠি প্রদান করা হয়েছ।

এ বিষয় কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্বজল মোল্লা বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে, এক সপ্তাহের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন । অন্যথায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

জীবনযাপন
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত