এ জেলায় ৬টি সংসদীয় আসন এখন ৫টিতে রুপ নেওয়ায় প্রার্থীদের বেশী প্রত্যাশা
চাঁদপুরে নির্বাচনী মাঠে প্রচারে এগিয়ে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:৫৬ | অনলাইন সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
চাঁদপুর জেলায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে বর্তমানে রয়েছে ৫টি সংসদীয় আসন। এক সময় তথা জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সরকারের দেশ শাসনের সময় এ জেলায় ছিল ৬টি সংসদীয় আসন। এ চাঁদপুর জেলায় ১টি সংসদীয় আসন কমে যাওয়ায় নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের এলাকা বেড়ে যাওয়ায় তারা বেশী বিপাকে পড়েছে। এখন তাদের পক্ষে বেশী গনসংযোগ করা, বিচরন করা ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বেশী। তার পরও তাদের ভোটার বেশী হওয়ায় প্রত্যাশা অনেক বেশী। এ নির্বাচনী মাঠ বিগত সংসদ নির্বাচনী মাঠের তুলনায় ও বিগত বছরের চাইতে তেমন উত্তাপ লক্ষ করা যাচ্ছেনা। তবুও বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে,নির্বাচনী মাঠে প্রচারে এগিয়ে ও ভোটারদের গণজোয়ার সৃষ্টি করার লক্ষে মাঠে তৎপর হয়ে উঠেছে, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এ চাঁদপুর জেলার ৫টি আসনের মধ্যে চারটি আসনেই আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে ভোটারদের গণজোয়ার সৃষ্টি করার লক্ষে ক্রমোশ নির্বাচনী মাঠ গরম করতে সু² পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে উঠছেন ঈগল প্রতীকের হেভী ওয়েটের প্রার্থীরা। ওপেন সিক্রেট হলেও তাদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন আওয়ামীলীগের গ্রæুপিং রাজনীতির স্বীকার একাংশ নেতাকর্মী। এ তালিকায় প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নব্য ও হাইব্রিডদের ভীড়ে দলের অবমূল্যায়িত, অবহেলিত ও কোনঠাসা হয়ে পড়ছে, প্রকৃত নেতাকর্মীরা।
সরোজমিনে বুধবার(২০ ডিসেম্বর ) দিনভর চাঁদপুরের কয়েকটি নির্বাচনী এলাকা পর্যবেক্ষণ ও বিচরনকালে ভোটারদের সাথে কথা বললে তারা এসব পরিস্থিতির তথ্য প্রকাশ করেন ।
চাঁদপুর-২ মতলব উত্তর ও দক্ষিণ আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম ইসফাক আহসান। তিনি আওয়ামীলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য। ইতিমধ্যেই তিনি সংবাদ সম্মেলন, সভা, গণসংযোগের মধ্য দিয়ে নিজেকে আসনটিতে ভোটারদের কাছে আস্তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটাররা উন্নয়নের স্বার্থে দল-মত-নির্বিশেষে সবাই তাকেই ঈগল প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে এ আসনকে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন।
এই আসনটিতে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি আসনটি থেকে নির্বাচিত হয়ে একসময় মন্ত্রীও হয়েছেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভোটের মাঠে এই প্রবীণ বিচক্ষন নেতাকে হারানোর স্বপ্ন অনেকটা ক্ষীন বলে মন্তব্য অনেকে সচেতন ভোটরের।
অপরদিকে চাঁদপুর-৩ সদর-হাইমচর এবং চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে ঈগল প্রতীকে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. শামসুল হক ভূঁইয়া। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি এবং ফরিদগঞ্জ আসন হতে বিগত সময় নির্বাচিত সংসদ সদস্যও ছিলেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত সময়ে চাঁদপুর শহরের হাসানআলী মাঠে আওয়ামীলীগের এক জনসভায় দলের খোঁজ খবর নিতে ভিডিও কনফারেন্সে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিজে সরাসরি ড. শামসুল হক ভূঁইয়ার নাম উচ্চারণ করে সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন এবং বলেওছিলেন। এতে স্পষ্ট দলের হাইকমান্ডে তাঁর অগাধ সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়াও রাজনীতির মাঠে তিনি প্রবীণ লোক এবং নির্বাচন সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যাক্তিত্বও। ইতিমধ্যেই সংবাদ সম্মেলন ও সভাসহ নানাভাবেই এবার দু’টি আসনেই তিনি ঈগল প্রতীকের জয়ের মালা পড়তে কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছেন।
ড. শামসুল হক ভূঁইয়া মনে করেন, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উদাহরণ হিসেবে এবারের নির্বাচন সবার মনে জায়গা করে নিবে। কাজেই সবাই ভোট কেন্দ্রে এসে দু’টি ঈগল প্রতীকে ভোট দিয়ে নিজেদের বিজয় উল্লাস প্রকাশ করবে বলে তার বিশ্বাস।
তবে তার শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে চাঁদপুর-৩ আসনে গোছালো নির্বাচনী মাঠে ডা: দীপু মনি আছেন। তিনি আসনটি হতে টানা ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন। এরমধ্যে মন্ত্রীত্বের দায়িত্বই পালন করেছেন দুবার। বড় বড় রাঘব বোয়ালদের একাংশ চেষ্টা করেও টানা চতুর্থ বারে দলীয় প্রতীক নৌকার মনোনয়ন পাওয়া থেকে তাকে বঞ্চিত করতে পারেননি। কাজেই তাঁর আসনে ঈগল প্রতীক আদৌ প্রভাব ফেলতে পারবে কিনা এ নিয়ে সজাগ রয়েছেন, নৌকার কর্মীসমর্থকগণ। তবে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ফাটল সৃস্টি করতে পারলে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী ড. শামসুল হক ভূঁইয়া এখানে নতুন চমক দেখানো সম্বব হয়ে উঠতে পারে।
অপরদিকে চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনটিতে ক্লিন ইমেজে রয়েছেন সাংবাদিক শফিকুর রহমান। যার কারনে অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকা সত্তে¡ও শেখ হাসিনা তাকেই আসনটিতে পুনরায় নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দিয়েছেন। যারা মনে প্রাণে নৌকা প্রতীকের ভক্ত তারা দলে মান-অভিমান ও সামান্য মনমানিল্য কোনভাবে হয়ে থাকলেও তা চাপা রেখেই তার সাথে এক সুরে এক হয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে এমনটাই তিনি মনে করছেন। কাজেই ভোটের মাঠে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ঈগল প্রতীক এ আসনে চমক দেখাতেই স্পষ্ট ভাবে কাজ করছেন। সে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও তাকে সহায়তা করছেন আওয়ামীলীগের নৌকা মাকার দলীয় নেতা-কর্মীরা।
এদিকে চাঁদপুর-৫ হাজীগঞ্জ শাহরাস্তি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে বেশ জোরেসোরেই মাঠে নেমেছেন গাজী মাঈনুদ্দিন। তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি নৌকা প্রতীকে এর আগেও নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। তবে সেটি হচ্ছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন। সেই চেয়ার থেকে তিনি এমপি হওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে যেতে ইতিপূর্বেই পদত্যাগ করেছেন। তাছাড়া পার্শবর্তী উপজেলা বর্তমানে তার নির্বাচনী এলাকা শাহরাস্তিতেও তিনি নেতাকর্মীদের সাথে বেশ ভালো যোগাযোগ রেখেছেন। কাজেই দল মত নির্বিশেষে সকলে এক ও অভিন্ন হয়ে আসনটিতে পরিবর্তন আনতে ঈগল প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করবে বলে তার কর্মী সমর্থকরা মনে করছেন।
গাজী মাঈনুদ্দিন বলেন, তৃনমূলের চাহিদার প্রক্ষিতে এমপি পদে প্রার্থীতা গ্রহন করেছি। ভোটের মাঠে বিজয় নিশ্চিত করার কৌশল ও অভিজ্ঞতা দু’টোই আমার রয়েছে। তাই উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে সবাইকে ভোট কেন্দ্রে এসে ঈগল প্রতীকে ভোট দিতে অনুরোধ জানান তিনি।
এই আসনে এবারও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর প্রতীক। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আওয়ামীলীগসহ সবার কাছেই রয়েছে। অনেকেই তাই মনে করেছেন, যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন আসনটিতে তার বিকল্প তিনি নিজেই। এ আসনটি হতে নির্বাচিত হয়ে তিনি স্বরাষ্ট মন্ত্রীর মত গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রীত্বের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। কাজেই নির্বাচনী মাঠে তিনি প্রবীণ বিচক্ষন এবং দক্ষ্যতা পূর্ন একজন। সেক্ষেত্রে এ আসনটিতে ঈগল প্রতীকের প্রার্থী শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারবে কিনা সেই বিষয় নিয়ে এলাকায় পক্ষে বিপক্ষে সমীক্ষা ভিন্নরুপের কথা রয়েছে।
বিশেষ ভাবে জানাগেল, চাঁদপুর জেলায় ৫টি সংসদীয় আসনে চাঁদপুর-১ কচুয়া আসন বাদে বাকি চারটি আসনেই একজন করে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। এছাড়াও প্রতিটি আসনে নৌকার প্রার্থীর প্রতিপক্ষ নিয়ে ঈগল ছাড়াও অন্য মার্কা নিয়েএকাধিক প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়। তারা প্রত্যেকেই ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের ভোট চেয়ে প্রচারণা শুরু করে ব্যাপক ভাবে গনসংযোগে করে এগিয়ে যাচ্ছেন।